• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাতে কখনও খাবার দেয়া হত না!


কক্সবাজার প্রতিনিধি জানুয়ারি ২৫, ২০১৭, ০৮:৫৮ পিএম
রাতে কখনও খাবার দেয়া হত না!

মিয়ানমার কারাগার থেকে মুক্ত তারেক (সামনে বসা)

কক্সবাজার: দিনে দুবেলা দুই প্লেট ভাত। সঙ্গে এক বাটি ডাল আর সবজি। মাছ-মাংস দিত না বললেই চলে। রাতে কখনও খাবার দেয়া হত না। কিন্তু সারাদিন কাজের মধ্যে থাকতে হত, কোনো রকম হের ফের হলেই তার-প্যাঁচানো চাবুক পড়ত পিঠে।

এভাবে এক দিন, দুদিন নয়, কারাগারে বন্দি অবস্থায় কেটে গেছে জীবনের সাড়ে চার বছর।  কথাগুলো বলছিলেন,মিয়ানমার কারাগারে আটক থাকা মহেশখালীর কুতুবজোমের ধলিয়াপাড়া এলাকার মোহাম্মদ শরীফের ছেলে তারেক (২২)।

বুধবার (২৫ জানুয়ারি) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও মিয়ানমারের জাতীয় অভিবাসন সংস্থার মধ্যে পতাকা বৈঠকের পর মায়ানমারের কারাগারে দু:সহ জীবন থেকে মুক্তি পান কক্সবাজারের মহেশখালীর মোহাম্মদ তারেক ওরফে তারা।

তারেক বলেন, ২০১২ সালের জুন মাসের শেষের দিকে টেকনাফের কায়ুকখালিয়া ঘাট থেকে এফবি কামরুল নাহার নামে একটি ট্রলারে করে মাঝি (চালক) মো. সাবেরসহ পাঁচজন জেলে নিয়ে সেন্ট মার্টিনে অদূরে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারের অবস্থায় ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলারটি ডুবে যায়। তখন তিনি একটি হারিকেন নিয়ে ভাসতে ভাসতে মিয়ানমার জলসীমানার কাছাকাছি গেলে মিয়ানমারের নৌবাহিনী সদস্যরা উদ্ধার করেন। বাকি জেলেদের ভাগ্যে কী হয়েছে, সেটা জানেন না।

তিনি আরও বলেন, নৌবাহিনীর সদস্যরা আমাকে উদ্ধার করে আদালতে হাজির করলে আদালত সাজা দিয়ে আমাকে কারাগারে পাঠায়। সাজার মেয়াদে শেষ হলে বিজিবির সহযোগিতায় বুধবার (২৫ জানুয়ারি) স্বদেশে ফিরে আসতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। তবে যতদিন বেঁচে থাকব, মিয়ানমারের কারগারে কাটানোসাড়ে চার বছরে সেই দু:সহ স্মৃতি ভুলতে পারব না।

তারেক বলেন, ওরা এত অমানবিক কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লেও কোনো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়নি একবারও। শুধু ব্যথার ওষুধ দিত।

আকিয়াব ও বুচিদং—দুই কারাগারেই ছিলেন তিনি। কারাগারের ভিন্নতায় নির্যাতনের কোনো পরিবর্তন ছিল না। তারেক বলেন, ‘যে নির্যাতন হতো, তা কোনো মানুষ মানুষের সঙ্গে করে না।’

তারেক আরও বলেন, মিয়ানমারের বুচিদং ও আকিয়াব কারাগারে থাকাকলে আরও শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিক বন্দী দেখেন। তাঁরা বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করছেন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই মালয়েশিয়াগামী যাত্রী হলেও কিছুসংখ্যক জেলে রয়েছেন। তারেকের কথা, ‘কারাগারের বাংলাদেশিদের বিভিন্নভাবে নিযার্তন ও মারধর করা হচ্ছে। এর মধ্যে আকিয়াব কারাগারে অসুস্থ হয়ে দুজন বন্দী মারা গেছেন। তাঁদের বাড়ি ঢাকায় বলে শুনেছি।’

টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল সিদ্দিকী বলেন, সম্প্রতি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশি একজন বন্দীর একটি তালিকা বিজিবির কাছে পাঠায়। এরপর তালিকাটি যাচাই-বাছাই করে তাঁকে দেশে ফেরত আনার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমতি পাওয়া যায়।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মজিদ বলেন, মিয়ানমারের কারাগারে সাজা ভোগের পর ফেরত নাগরিককে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!