• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে বিএনপি ‘খুশি’


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৭, ২০১৬, ০১:০১ পিএম
রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে বিএনপি ‘খুশি’

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দেয়া প্রস্তাব গতকাল (০৬ ডিসেম্বর) বঙ্গভবনে পৌঁছে দিয়েছে বিএনপি। এরপর বঙ্গভবন থেকে এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপে বসার খবর জানানোয় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।    

গতকাল (০৬ ডিসেম্বর) সকালে বঙ্গভবনে খালেদা জিয়ার প্রস্তাব পৌঁছে দেয়ার পর দলের নয়াপল্টন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, রাষ্ট্রপতির অফিস থেকে জানানো হয়েছে যে, তিনি আলোচনা শুরু করবেন। ‘ইউ মাস্ট ফোর্স অব দ্য বেস্ট’। আমরা সবচেয়ে ভালো জিনিসটা আশা করব। রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগ থেকে আমরা ইতিবাচক রেজাল্ট আশা করছি।

এরপর বিকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে সাধুবাদ জানান মির্জা ফখরুল। এ সময় তিনি বলেন, আজকে একটা ভালো খবর আমরা পেয়েছি, সেজন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানাই। তার প্রেস সেক্রেটারি দুপুরে বলেছেন যে, তিনি (রাষ্ট্রপতি) বিদেশ থেকে ফিরে আসার পরেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনা শুরু করবেন। ধন্যবাদ রাষ্ট্রপতিকে। তিনি (রাষ্ট্রপতি) জনগণের যে দাবি, সেই দাবিকে সম্মান করেছেন এবং তিনি (রাষ্ট্রপতি) রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছেন। আমরা খুব খুশি হয়েছি।

প্রসঙ্গত, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গতকাল (০৬ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সহকারী সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইনুর রহমানের কাছে ইসি নিয়ে খালেদা জিয়ার দেয়া প্রস্তাবের অনুলিপি ও দলের মহাসচিবের একটি চিঠি পৌঁছে দেন। এ সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন। 

এরপর দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের এক  প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সব সময়ই আলোচনার মাধ্যমে, সমঝোতার মাধ্যমে রাজনৈতিক মীমাংসায় পৌঁছাতে বিশ্বাস করি। সেই কারণেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই প্রস্তাবনা দিয়েছেন। আমরা আশা করি, রাষ্ট্রপতি যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, তাতে সফল হবেন এবং সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করতে তিনি (রাষ্ট্রপতি) সক্ষম হবেন।

তবে আগেরবারের মতো আওয়ামী লীগের ‘প্রেসক্রিপশন’ অনুযায়ী ‘সার্চ কমিটি’ করে নির্বাচন কমিশন গঠন যেন না হয় সে প্রত্যাশা জানান বিএনপি মহাসচিব। এরপর বিকালে রাজধানীর ডিআরইউ মিলনায়তনে ‘স্বৈরাচারের পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় দেয়া বক্তব্যে সবাইকে ৯০’র চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে’ আনার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারের পতনের জন্য দেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ঘটানো হয়েছিল। এই ছাত্র-জনতাকে আবারো জাগ্রত করে তাদের গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যেতে হবে। তাদের গণতন্ত্রের বিজয়ের পথে, সংগ্রামের পথে নিয়ে যেতে হবে। এটাই হোক- আজকের দিনের শপথ।

‘স্বৈরাচার পতন দিবসের’ আলোচনায় বর্তমান সরকারকে ‘নব্য ফ্যাসিস্ট সরকার’ আখ্যায়িত করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ধিক্কার জানাচ্ছি এই সরকারকে, যারা আজকে স্বৈরাচারকে আশ্রয় দিয়ে তাদের আবার পুনঃস্থাপিত করে নতুন জীবন দিয়ে তাদের সরকারের অঙ্গ বানিয়েছে। রাজনীতিতে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। এটাই হচ্ছে ‘আইরনি’। যাদের বিরুদ্ধে দেশের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব করে তাদের পরাজিত করে ফেলে দিয়েছিল। তাদেরই নিয়ে তারা (আওয়ামী লীগ) একটা অনৈতিক সরকার গঠন করে দেশের মানুষের ওপরে আরেকটা স্টিমরোলার চালিয়ে যাচ্ছে।

অতীতচারিতা, বিএনপিকে ‘বকাবকি’ ও বিরোধীদের ‘দমনের’ পথ থেকে সরে আসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের প্রধানের কাছে আহ্বান জানাতে চাই, আপনারা এক সময়ে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছেন। আপনারা দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন। সেই গণতন্ত্রকে ধ্বংস করবেন না। অতীতে একবার করেছেন, আর করবেন না। সেই খাতায় নাম লেখাবেন না, যে খাতায় ধিকৃত ব্যক্তিদের নাম লেখা আছে। এটা আমরা চাই না। আমরা চাই, এই দেশের মানুষ একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতে বাস করুন।

এছাড়া সব দলের অংশগ্রহণে ‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বলি না যে, বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে হবে। আমরা বলি, জনগণের প্রতিনিধিকে ক্ষমতায় বসাতে হবে। যারা আজ দেশ শাসন করছেন, তারা জনগণের প্রতিনিধি নন কারণ তারা নির্বাচিত হননি। এ সময় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আত্মত্যাগকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান মির্জা ফখরুল।   

নব্বইয়ে ডাকসু’র ভিপি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং তৎকালীন ডাকসুর এজিএস নাজিমউদ্দিন আলমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- সাবেক ছাত্রনেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, মুস্তাফিজুর রহমান বাবুল, খোন্দকার লুৎফর রহমান, সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, আসাদুর রহমান খান আসাদ প্রমুখ।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!