• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে সহায়ক সরকার চাইবে বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ৩০, ২০১৭, ০৬:১৫ পিএম
রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে সহায়ক সরকার চাইবে বিএনপি

ঢাকা : নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। তাই রাষ্ট্রপতির অধীনে তিন মাস মেয়াদে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের চায় দলটি। এই তিন মাস প্রধানমন্ত্রীকে ছুটিতে থাকার প্রস্তাব দিয়ে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের একটি রূপরেখার খসড়া প্রস্তুত করেছে বিএনপি।

জানা গেছে, মাস খানেকের মধ্যেই সহায়ক সরকারের রূপরেখা তুলে ধরবেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের এই রূপরেখা নতুন করে আলোচনার পরিবেশ তৈরী করবে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, প্রয়োজনে সংবিধান পরিবর্তন করে হলেও নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার প্রবর্তন করার প্রস্তাব থাকছে আলোচিত এই রূপরেখায়।

সংশ্লিষ্ট নেতারা আশা করছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে রূপরেখা দেয়ার পর চলমান রাজনীতিতে একটি আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি হবে। সরকার আলোচনা না চাইলে গণতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, সহায়ক সরকারের রূপরেখার খসড়া হয়ে গেছে। বেগম জিয়ার লন্ডন সফরের পর দলের স্থায়ী কমিটিতে তা তুলে ধরা হবে। এরপর রাজধানীতে যে কোন দিন সংবাদ সম্মেলন করবেন তিনি।

এদিকে, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরবিরোধী অবস্থানে। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবিতে গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। আওয়ামী লীগ চায় সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত নভেম্বরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের কথা তুলে ধরেছিলেন। দলের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলেও তিনি বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন। তবে এই সহায়ক সরকারের রূপরেখা কী হবে, সে বিষয়ে দেশের মানুষ কিছু জানে না। দলটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিএনপি এখন নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছে। একাধিক রূপরেখা তৈরি করার কথা ভাবছে দলটি। এর বেশকয়েকটি খসড়া ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। এখন তা বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনার অপেক্ষায় রয়েছে। পরে পাঠানো হবে সরকারের কাছে।

এ প্রসঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা মনে করি অবাধ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারই হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। অন্য নামেও নিরপেক্ষ সরকার হতে পারে। আমরা চাই নিরপেক্ষ নির্বাচন। সেজন্য নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেয়া হবে। নিঃসন্দেহে এটি সবার কাছে গ্রহনযোগ্য হবে।

একই প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন দেশের জনগণ মেনে নেবে না। এজন্য প্রয়োজনে সংবিধান পরিবর্তন করে হলেও নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার প্রবর্তন করতে হবে। তিনি বলেন, সংবিধানের দোহাই দিয়ে কোনো লাভ হবে না। সংবিধান হিমালয় পর্বত নয় যে তাকে নড়ানো যাবে না। দেশে ও জনগণের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করা যায়। সংবিধান সংশোধনও সংবিধানের বিধান।

দলের স্থায়ী কমিটির একজন সিনিয়র সদস্য জানান, এই সহায়ক সরকার হবে তিন মাস মেয়াদের। রাষ্ট্রপতির অধীনে নির্বাচনকালীন এই সরকারের মন্ত্রিসভায় টেকনোক্রেট কোটায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সংস্থাপনসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেয়ার প্রস্তাব থাকছে। রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের কাঠামো চূড়ান্ত করার প্রস্তাব থাকতে পারে এই রূপরেখায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি আরো জানান, তখন জাতীয় সংসদ বহাল থাকবে। প্রধানমন্ত্রীও দায়িত্বে থাকবেন। এই রূপরেখায় নির্বাচনকালীন তিন মাস প্রধানমন্ত্রীর ছুটিতে থাকার প্রস্তাব থাকছে। যাতে বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী স্বপদে বহাল থেকে ছুটিতে থাকার মাধ্যমে নির্বাচন প্রভাবিত না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হবে।

দলীয় একটি সূত্র জানায়, বিএনপির নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের এই রূপরেখায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচনকালীন সরকারে না রেখে নির্বাচনকালে দলনিরপেক্ষ সহায়ক সরকার গঠনের প্রস্তাব করা হবে। তবে প্রধানের আসনে অন্য কাকে স্থলাভিষিক্ত করা হবে সে কথা সরাসরি উল্লেখ করা হবে না। তবে নির্বাচনকালীন সরকারের অন্য সদস্যদের ক্ষেত্রে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার, বিচারক ও আমলাসহ সর্বজনগ্রহণযোগ্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে পাঁচটি পদে নিয়োগের প্রস্তাব করা হবে। এ পাঁচজনের সঙ্গে ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রিপরিষদ থেকে পাঁচজন সদস্যের সমন্বয়ে প্রস্তাবিত সরকারের ক্যাবিনেট গঠনের প্রস্তাব করা হতে পারে। যারা নির্বাচনী যাবতীয় কার্যক্রমে ‘ওয়াচ-ডগ’-এর ভূমিকা পালন করবেন এবং একাদশ জাতীয় নির্বাচনে এই সদস্যদের ভূমিকাই হবে মুখ্য। তাদের পরামর্শেই কাজ করতে বাধ্য হবে নির্বাচন কমিশন। এই কাঠামোয় নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধানের বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমেও সমঝোতার ভিত্তিতে প্রস্তাব করা হতে পারে।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীকে রেখে এবং তার নির্বাহী ক্ষমতা হ্রাস করে সরকার গঠনের প্রস্তাব আলোচনার টেবিলে দিতে পারে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে নিবন্ধিত বা সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোকে নিয়ে সর্বদলীয় সরকারের আদলে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব রাখা হতে পারে। দলনিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের প্রস্তাবের পাশাপাশি বিএনপি যেসব বিকল্প প্রস্তাবের কথা চিন্তা করছে সেগুলো একসঙ্গে একই দিনে ঘোষণা করা হবে। নাকি পরবর্তীতে সরকারি দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার জন্য রেখে দেয়া হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

এ প্রসঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের অর্থই হলো নির্দলীয় লোকদের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব দিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখা। এই প্রক্রিয়ায় ১০ ভাগ টেকনোক্রেট কোটায় স্বরাষ্ট্র, সংস্থাপনসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। রাষ্ট্রপতি নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের এসব মন্ত্রনালয়ে নিয়োগ দিতে পারেন।

ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী তিন মাসের জন্য ছুটি নিতে পারেন। সংসদ তো বহাল থাকছেই। সমস্যা নেই। তখন রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীদের দিয়ে কাজ করাতে পারবেন। বিএনপির যে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা হচ্ছে তাতে এসব বিষয় থাকবে।

এছাড়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের কাঠামোতে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত নির্বাচনকালীন সরকারের কথাও বিবেচনায় রাখা হতে পারে। যে সরকারে জাতীয় সংসদের তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপি থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দু’দফা সরকার বিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এবার নির্বাচনকালীন এই নতুন সরকারের রূপরেখা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!