• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭, ১২:০৮ পিএম
রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ

ঢাকা : পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই এ দেশের মানুষ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা হওয়া সত্ত্বেও বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে অস্বীকার করে পশ্চিম পকিস্তানি, বিশেষ করে ভারত থেকে আগত মোহাজিররা। এই দলের নেতা ছিলেন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মহম্মদ আলি জিন্নাহ। জন্ম তার করাচিতে হলেও পিতৃপুরুষের ভিটা ভারতের গুজরাট  রাজ্যে। তিনি নিজেও তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ভারতের মুম্বাই নগরীতে। পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করার পর তিনি হুংকার ছাড়েন ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’। এই হুংকারের শেষ পরিণতি তিনি দেখে যেতে পারেননি। হুংকার  ছাড়ার মাত্র তিন মাসের মাথায় তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে তিনি যে বিষবৃক্ষ রোপণ করে যান তার ফল ভোগ করতে হয় বাঙালিদের। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদাদানের জন্য বাঙালির রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে অনেকে শহীদ হন, আহত হন বহু জন। তাদের কয়েকজনকে এখানে স্মরণ করা হলো-

শহীদ বরকত : ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদ আবুল বরকত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন। ১৯৫১ সালে অনার্স পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় শ্রেণিতে চতুর্থ স্থান লাভ করেন। মৃত্যুর সময় তিনি ছিলেন এমএ ক্লাসের ছাত্র। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এখান থেকে তিনি ছাত্র-জনতাকে উদ্বুদ্ধ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ করে পুলিশের রাইফেলের গুলি তার দিকে ছুটে আসে। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কয়েকজন ছাত্র তাকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার দেহে অস্ত্রোপচার করা হয়। রাত ৮টা ১৫ মিনিটে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ভাষা শহীদ আবুল বরকতের জš§ ১৯২৭ সালের ১৬ জুন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুর থানার বাবলা গ্রামে। 

শহীদ রফিক : ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের বিস্ফোরণোম্মুখ অবস্থায় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম শহীদ হন মুহাম্মদ রফিক বা রফিকুদ্দিন আহমেদ। এ সময় তিনি মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজে আইকম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। একুশে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনে অংশ নেয়ার জন্য তিনি ঢাকায় আসেন এবং পুলিশের বেপরোয়া লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপের মুখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে আশ্রয় নেন। এখানে তিনি অন্যদের সঙ্গে পুলিশের নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি গুলির আঘাতে তার মস্তক উড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। রফিকের গ্রামের বাড়ি ছিল মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার পারিল গ্রামে। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ২০ বছরের কম। 

শহীদ সফিউর : শহীদ সফিউর রহমান ছিলেন ঢাকা হাইকোর্টের একজন কর্মচারী। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কোন্নগর গ্রামে ১৯১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি তার জন্ম। ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শফিউর রহমান গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। ওই দিন সকাল ১০টায় তিনি সাইকেলে চড়ে নবাবপুর রোড হয়ে হাইকোর্টে যাওয়ার পথে হঠাৎ পিছন দিক থেকে রাইফেলের একটি গুলি তার পিঠ ভেদ করে বেরিয়ে যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার দেহে অস্ত্রোপচার করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তিনি মারা যান। তিনি বাবা-মা, ভাই, স্ত্রী ও এক মেয়ে রেখে যান। তার মৃত্যুর তিন মাস পর পুত্র সফিকুর রহমান জন্ম নেন। 

শহীদ অহিউল্লাহ : ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের তালিকায় আট বছরের এক শিশুও রয়েছে। তার নাম অহিউল্লাহ। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র অহিউল্লাহ ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি নবাবপুর রোডের একপাশে দাঁড়িয়ে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিল দেখছিল। এ সময় একটি গুলি এসে তার মাথার খুলি উড়িয়ে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর পুলিশ অহিউল্লাহর লাশ গুম করে। 

শহীদ আব্দুস সালাম : শহীদ আব্দুস সালাম ছিলেন সরকারি অফিসের পিয়ন। একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনার সময় তিনি মেডিকেল কলেজের কাছে গুলিবিদ্ধ হন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ দেড় মাস অবর্ণনীয়  দুঃখ-কষ্ট ভোগের পর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর ফেনী জেলার দাগনভুঁইয়া উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামে শহীদ সালামের জন্ম। 

শহীদ আব্দুল জব্বার : একুশের অমর শহীদ আব্দুল জব্বার ছিলেন ব্যবসায়ী। প্রথম জীবনে তিনি পকিস্তান ন্যাশনাল গার্ডে চাকরি নিয়ে রাওয়ালপিন্ডি চলে যান। কিন্তু স্বাধীনচেতা বাঙালি হওয়ায় তার সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানিদের মতের অমিল ঘটতে থাকে। একপর্যায়ে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে দেশে চলে আসেন এবং নিজ এলাকায় একটি মুদির দোকান দেন। অসুস্থ শাশুড়ির চিকিৎসা করাতে তিনি তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিলে তিনি অংশ নেন এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে স্লোগান দেন।  এর একপর্যায়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে ভর্তি করার পর রাত ৮টায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। মৃত্যুর সময় শহীদ জব্বারের আনুমানিক বয়স ছিল ৩২ বছর।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!