• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রাস্তা বন্ধ, বাস নেই বিকল্প পথে যানজট


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মার্চ ২২, ২০১৮, ০৮:২৪ পিএম
রাস্তা বন্ধ, বাস নেই বিকল্প পথে যানজট

ঢাকা: সপ্তাহের শেষ সরকারি কর্ম দিবসে কাজের পাট চুকিয়ে সব সরকারি কর্মচারি নেমে পড়লেন আনন্দ উৎসবে। শোভাযাত্রায় অংশ নিতে সকল মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছিল। তাই বৃহস্পতিবারের জন্য বিশেষ সড়ক ব্যবস্থাপনায় নামে ডিএমপি।

চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয় বেশ কয়েকটি সড়কে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন উপলক্ষে সরকারি এ আয়োজন। অন-লাইন নিউজ পোর্টালগুলোর মাধ্যমে তা জেনে যায় ঢাকাবাসী। তাই গণপরিবহন অর্থ্যাৎ বাস নামেনি রাস্তায়। কিছু নামালেও চলেছে বিকল্প সড়ক ধরে। আর এতেই সঙ্কটে পড়েছে ঢাকাবাসী।

উত্তরণের স্বীকৃতি উদযাপনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে যোগ দিচ্ছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরপর রাজধানীর নয়টি স্থান থেকে ৫৭টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধীনস্থ দপ্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে শোভাযাত্রা করে রওনা হন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের পথে।

দুপুরে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও ব্যানার নিয়ে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে উন্নয়নের স্লোগান দিতে দেখা যায়। বিকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোক উৎসব।

এই আয়োজন বেশ কিছু এলাকায় যান চলাচল সীমিত করায় বৃহস্পতিবার বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত স্টেডিয়াম ও চারপাশের সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচলে সমস্যা হবে বলে আগেই সতর্ক করেছিল ঢাকার পুলিশ। 

ব্যাপক যানজট ও হয়রানির আশঙ্কায় প্রাইভেট কার বের করেননি অনেকে। তবে যারা বের করেছেন চরম বিপাকে পড়েছেন। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অনেককেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার (২২ মার্চ) দুপুর থেকে নগরীতে গণপরিবহনের উপস্থিতি কম থাকায় রাস্তা ছিল ফাঁকা, ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী। পরিবহন সঙ্কটের কারণে অনেকেই গন্তব্যে রওনা হয়েছেন পায়ে হেঁটে। মিরপুর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত হাঁটতে হয়েছে অনেকের। আবার কেউ কেউ ৫ থেকে ৮ কিলোমিটার পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে অফিস করেছেন।

সাবধানতার জন্য অনেকেই মোটরসাইকেল বের করেননি রাস্তায়।

যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, রামপুরা, মৌচাক, মালিবাগ, কাকরাইল এলাকায় গণপরিবহন ছিল একেবারেই কম। সড়কে সিটিং সার্ভিসের বাসগুলোও দেখা যায়নি। কাকরাইল থেকে মৎস্য ভবন, নাবিস্কো, সাত রাস্তা ও মগবাজারের পথ ছিল প্রায় ফাঁকা।

বেলা আডাইটার দিকে সা‌য়দাবাদ ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় যানবাহন চলাচল ছিল খুবই কম। মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের চিত্রও ছিল একই রকম। হানিফ ফ্লাইওভার হয়ে গুলিস্তানগামী মোটর সাইকেল এবং প্রাইভেটকারগুলোকে চাঁনখারপুলের দিকে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

পল্টন এবং প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার কারণে নগর ভবনের সামনের সড়ক, গোলাপ শাহ মাজার এবং গুলিস্তান এলাকায় তৈরি হয় যানজট। বিকাল ৩টার দিকে মহাখালী রেলক্রসিং এলাকায় টঙ্গী ও উত্তরাগামী এবং ফার্মগেইট, শাহবাগ ও গুলিস্তানগামী যাত্রীদের গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

সেখানে শারমিন আক্তার নামের এক নারী বলেন, প্রায় আধাঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও ফার্মগেইটের কোনো বাস আসতে দেখেননি তিনি।

দুপুরে কারওয়ান বাজার থেকে শাহবাগের দিকে গণপরিবহন এগিয়েছে খুব ধীর গতিতে। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কম হওয়ায় অনেকেই পায়ে হেঁটে শাহবাগের দিকে গেছেন। তবে মিরপুর ১২ থেকে ফার্মগেইটের পথে অন্য দিনের মত যানজট ছিল না। বরং রাস্তা ছিল তুলনামূলকভাবে ফাঁকা।

ওই সময় মোহাম্মদপুর থেকে ধানমন্ডি হয়ে সায়েন্সলাবের দিকে যেসব গাড়ি যাচ্ছিল, সেগুলোকে যানজটের মধ্যে পড়তে হয়। অন্যদিকে নীতক্ষেত থেকে সায়েন্সল্যাব হয়ে মিরপুর রোডে গাড়ির চাপ ছিল কম।

নীলক্ষেত মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্য জহিরুল ইসলাম বলেন, আমি দুপুর ২টা থেকে ডিউটি করছি। রাস্তায় গাড়ি বেশি নাই। ফলে যানজটও নাই। দোয়েল চত্বর থেকে সচিবালয়-জিপিও হয়ে শোভাযাত্রা যাওয়ার পর ডাইভারশন খুলে দিলে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়।

শোভাযাত্রার কারণে দৈনিক বাংলা মোড় থেকে প্রেসক্লাবের রাস্তা পুলিশ আটকে দেয়। মতিঝিল এলাকায় গণপরিহন দেখা যায় খুব কম। দীর্ঘ সময় পর পর একটি বাস এলে হুমড়ি খেয়ে পড়ছিলেন যাত্রীরা। বেলা ১টার দিকে রামপুরা টিভি ভবনের সামনে তুরাগ পরিবহনের একটি বাস আসার পর ৫০-৬০ জন যাত্রীকে একসঙ্গ তাতে ওঠার চেষ্টা করতে দেখা যায়।

রফিকুল ইসলাম নামের একজন সেখানে জানান, গুলিস্তানে যাওয়ার জন্য এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও তিনি কোনো বাসে উঠতে পারেননি। বিজয়নগর পানির ট্যাংক এলাকা থেকে কাকরাইলে রাস্তায় যানজট থাকলেও  মৎস্য ভবন এলাকা বেলা আড়াইটার দিকে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। 

গণপরিবহন কম থাকায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে হেঁটে যেতে দেখা যায় অনেককে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফুয়াদ তানভীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ধানমন্ডি থেকে মহাখালী আসতে তার দীর্ঘ সময় বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। রাস্তায় গণপরিবহন কম কেন জানতে চাইলে শংকর থেকে ছেড়ে আসা ‘মালঞ্চ’ পরিবহনের চালক সোহেল বলেন, গাড়ি কমায় নাই। তবে গাড়ি আটকায়ে আছে।

মোহাম্মদপুর থেকে ধূপখোলা রুটের বাস চালক শাহীন জানান, শাহবাগ না গিয়ে নিউ মার্কেট হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে দিয়ে এসেছেন তিনি। নগর ভবনের সামনে কিছুটা যানজটে পড়তে হয়েছে। গুলিস্তান থেকে নর্থ সাউথ রোড হয়ে সদরঘাটগামী সড়কেও যান চলাচল ছিল কম। দীর্ঘ সময় গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে যাত্রীদের। অনেকে হেঁটে রওনা হয়েছেন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

অন্যদিকে সদরঘাটের দিক থেকে গুলিস্তানগামী যানবাহনগুলো গুলিস্তান এসে দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে থাকে। প্রাইভেটকারের চালক বাবুল শেখ জানান, লালবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চানখারপুল হয়ে তার গুলিস্তান যেতে সময় লেগেছে আধা ঘণ্টা। কিন্তু তারপর আর এগোতে পারছেন না। গোলাপ শাহ মাজারের সামনেই এক ঘণ্টা জটে আটকে থাকতে হয়েছে। মতিঝিলে পৌঁছাতে কতক্ষণ লাগবে বুঝতে পারছেন না।

আর বেলায়েত হোসেন খান নামে একজন জানান, তিনি মতিঝিল থেকে গাড়ি না পেয়ে হেঁটে শহীদ মিনার পর্যন্ত যান। সেখান থেকে নীলক্ষেতে গেছেন রিকশায় করে।

সোনালীনিউজ/আতা

Wordbridge School
Link copied!