• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
বেশির ভাগই লক্কড়-ঝক্কড়

রিকুইজিশন, ফিটনেসবিহীন গাড়িতেই চলছে পুলিশ!


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ১৪, ২০১৭, ০২:৪৭ পিএম
রিকুইজিশন, ফিটনেসবিহীন গাড়িতেই চলছে পুলিশ!

ঢাকা: পর্যাপ্ত গাড়ি নেই পুলিশের—এমন অভিযোগ পুরনো, আবার যা আছে তার অধিকাংশই লক্কড়-ঝক্কড়-এক কথায় ফিটনেসবিহীন। রাজধানীসহ সারা দেশের সব থানা পুলিশই রিকুইজিশন করা গাড়ির ওপর নির্ভরশীল। আর তাই থানা ও ট্রাফিক পুলিশকে প্রতিদিনই কোনো না কোনো গাড়ি রিকুইজিশন করতে হচ্ছে।

এমন অনেক থানাও আছে, যারা ভাড়া গাড়ি ব্যবহার করছে। আবার অনেক পুলিশ কর্মকর্তা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েই বিভিন্ন অভিযানে অংশ নিচ্ছেন। তবে রিকুইজিশন নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগও আছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

পুলিশের ট্রাফিক সূত্র জানায়, পুলিশের গাড়ি সংকট দিনকে দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। পিকআপ, প্রিজন ভ্যান, জিপ, পাজেরো থেকে শুরু করে সব ধরনের গাড়িই চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। মূলত বাজেটে ঘাটতি থাকায় প্রয়োজন থাকলেও গাড়ি কিনতে পারছে না পুলিশ প্রশাসন। বিভিন্ন সেবা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া গাড়িতেও চাহিদা মিটছে না তাদের।

আবার পুলিশ যে গাড়িগুলো ব্যবহার করছে তার বড় একটি অংশ ভিআইপি প্রটোকলে নিয়োজিত। কয়েক বছর আগে কর্মকর্তাদের জন্য বেশ কয়েকটি গাড়ি কেনা হয়েছে। কিন্তু তাও পর্যাপ্ত নয়। থানার ওসি এবং এসি-এএসপি (সার্কেল) যে গাড়িতে চড়েন সে গাড়িও অনেক সময় নিয়মিত অভিযানে দেখা যায়। এ অবস্থায় নিয়মিত টহলে পুলিশের একমাত্র ভরসা রিকুইজিশন করা গাড়ি। ব্যারাক থেকে যাতায়াতের জন্যও পুলিশকে রিকুইজিশন করা বাস ব্যবহার করতে হচ্ছে।

পুলিশ সদর দফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, পুলিশি অভিযানে ব্যবহারের যানবাহন আছে নয় হাজার ৪১৬টি। এর মধ্যে দুই হাজার ৮১৪টি নতুন। এর মধ্যে ২০ বছরের পুরনো গাড়িই বেশি। আর দুই হাজারের বেশি গাড়ি ত্রুটিপূর্ণ। নম্বরপ্লেটবিহীন মোটরসাইকেল আছে দুই হাজার ৬৪৭টি। পিকআপ ভ্যান আছে দুই হাজার। ৭৫০টিই অকেজো। পুলিশ সদস্যদের আনা-নেওয়ার জন্য ৩৩টি বাস ও ১৯টি মিনিবাস আছে। এসব গাড়ির বেশির ভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসহীন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক হাজার ৪১২টি গাড়ির মধ্যে মোটরসাইকেল ৯৫২, পিকআপ ভ্যান ২৬০, জিপ ৯২, প্যাট্রল জিপ ২১, মাইক্রোবাস ২৬, বাস ১৬, রায়ট কার আট, অ্যাম্বুলেন্স পাঁচ ও প্রিজন ভ্যান ২২টি। বেশির ভাগ পিকআপ ভ্যান, জিপ, প্যাট্রল জিপ, মাইক্রোবাসের কোনোটির হেডলাইট জ্বলে না, কোনোটির সামনের অংশ চ্যাপ্টা হয়ে গেছে, কোনোটি রংচটা, কোনোটির ব্রেক নেই। দেশের চার শতাধিক থানার গাড়ির অর্ধেক অচল হয়ে থাকায় পুলিশ অভিযানে বের হতে গিয়ে ভাড়া করছে বেসরকারি বাস, পিকআপ ভ্যানসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। তবে এর বেশির ভাগ চলাচলের অনুপযোগী।

পরিদর্শক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পুলিশের বেশির ভাগ গাড়িই ফিটনেসবিহীন। অনেক গাড়ি রানিং অবস্থায় স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। পরে রাস্তা থেকে রেকার দিয়ে টেনে নিয়ে যেতে হয়। গ্রামগঞ্জে গাড়ির অভাবে তো আসামিই ধরতে যায় না পুলিশ।

রাজধানীর খিলগাঁও থানার এক পুলিশ সদস্য বলেন, রাতে টহল দিতে গেলে হঠাৎ গাড়ির ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। তখন টর্চলাইট জ্বালিয়ে পথ চলতে হয়। বর্ষার দিনে সামান্য বৃষ্টি হলেই গাড়ি স্টার্ট নেয় না। পুরান ঢাকার একটি থানার ওসি বলেন, আমার থানায় চারটি গাড়ি আছে। একটির অবস্থা মোটামুটি ভালো। বাকিগুলো লক্কড়-ঝক্কড়। এসব নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।

পরিবহন সংকটের চাহিদা মেটাতে প্রায় প্রতিদিনই গাড়ি রিকুইজিশন করছে পুলিশ। এ রিকুইজিশনকে কেন্দ্র করে ‘বাণিজ্য’ চলছে দেদার। রাজধানীতে প্রায় এক দশক ধরে অটোরিকশা চালান লালমনিরহাটের হামিদ শেখ জানান, গেল মাসে দুবার তার গাড়ি রিকুইজিশন করেছে পুলিশ। দুবারে পাঁচ দিন স্বেচ্ছাশ্রম দেন তিনি। একবার গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে আসামি নিয়ে পুরান ঢাকার আদালতে আসি। আবার কাশিমপুরে নিয়ে যাই। পুলিশ এখন রাতে গাড়ি থামালে ভয় পান তিনি। আতঙ্কে থাকেন, এই বুঝি তার অটোরিকশাটি আবার রিকুইজিশনে নেয় পুলিশ! তিনি জানান, পুলিশ গাড়ি চাইলে তো আর না করতে পারি না। মামলা খাওয়ার ভয়েই গাড়ি দিতে হয়। আর এ কারণে সতর্ক হয়ে গাড়ি চালাই।

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) বিনয় কৃষ্ণ বালা জানান, অনেক আগে থেকেই হচ্ছে রিকুইজিশন করা গাড়ি ব্যবহার করছে পুলিশ। গাড়ি সংকটের কারণেই এমনটি হয়। তিনি আরো বলেন, সরকার পুলিশের জন্য বেশ কিছু আধুনিক মানের গাড়ি কিনেছে। পুলিশের ব্যবহার করা লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ির সংখ্যাও অনেক কমে আসছে। আরো কিছু গাড়ি কেনারও পরিকল্পনা রয়েছে পুলিশের। আশা করছি, শিগগিরই পুলিশের পরিবহন সংকট কিছুটা দূর হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!