• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রূপগঞ্জের ত্রাস মলিনা-জয়নাল!


রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি মার্চ ৪, ২০১৮, ০৬:৫৩ পিএম
রূপগঞ্জের ত্রাস মলিনা-জয়নাল!

রূপগঞ্জ : আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের জাঙ্গীর এলাকা। অস্ত্রের ঝনঝনানি আর সন্ত্রাসীদের দাপাদাপিতে শঙ্কায় দিন পার করছে এখানকার লোকজন। মলিনা-জয়নাল এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

তাদের রাজত্বে এলাকার সবাই অসহায়। গত কয়েক বছরে এ বাহিনীর নির্যাতন ও মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন অনেকেই। মাদক ব্যবসা, জমি জবরদখল, দেহব্যবসা, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে হেন অপকর্ম নেই যেটা এ বাহিনী  করেন না। নানা অপকর্মের বদৌলতে একসময়কার হোটেল ড্যান্সার মলিনা বেগম এখন কোটিপতি বনে গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বামী আব্দুল আলীম বিদেশে চলে যাওয়ার পর থেকেই রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের জাঙ্গীর এলাকার মলিনা বেগম বেপোরোয়া জীবনযাপন শুরু করেন। রাজধানীর উত্তরার বিভিন্ন হোটেলে ড্যান্স করার মাধ্যমেই শুরু হয় তার অপরাধের জগৎ। পরে এলাকায় ফিরে এক সময়কার টোটকা কবিরাজ লোচ্চা জয়নাল আবেদীনকে নিয়ে এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে। এ বাহিনীতে প্রায় ১৭ জনের সদস্য রয়েছে।

এরা দিনে-দুপুরে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে দাবড়িয়ে বেড়ায়। আর রাত নামলেই চলে মাদক ব্যবসা, দেহ ব্যবসা, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম। পিছিয়ে নেই জমি জবর-দখলেও। মলিনা বেগম এসব অপকর্মের বদৌলতে গত কয়েক বছরে কোটিপতি বনে গেছে। আর একসময়কার টোটকা কবিরাজ জয়নাল ওরফে জোলা কোটিপতি বনে যাওয়ায় এখন এলাকাবাসীর কাছে জয়নাল আবেদীন ভূইয়া নামে পরিচিত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন নারী-পুরুষ জানান, মলিনা-জয়নাল এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তাদের রাজত্বে সবাই অসহায়। মলিনার বাড়িতে রাত নামলেই জমে উঠে জলসা ঘর। এ ঘরের নিয়ন্ত্রণ করে তারই সহযোগী নাজমা বেগম। এখানে প্রতি রাতেই রাজধানী ঢাকা থেকে কয়েকজন সুন্দরী নারী আসে। মলিনার মাদকের আখড়ার নিয়ন্ত্রণ করেন তার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড জয়নাল ও রিপন মিয়া। আর মাদকের সেলসম্যান হিসেবে রয়েছে বিরাব এলাকার ওমর আলীর স্ত্রী রাজিয়া। গত প্রায় ৪ বছর পূর্বে জয়নালের ছোট ভাই আমজাদের স্ত্রীকে জোরপূর্বক নির্যাতন করে। পরে স্থানীয় সালিশে তাকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে এলাকায় ঘুরানো হয়।

মলিনা-জয়নাল বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় জাঙ্গীর এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ গাজী, লাভলু, শাহীন, আয়েব আলী, হাটাবো এলাকার রব মিয়া, মগবাজার এলাকার সালমা খান, সুলতান মিয়া, আসাদুল্লাহ গাজীসহ অনেকে মামলার শিকার হয়েছেন। জাঙ্গীর এলাকার আমির হোসেন, শাহীন, লাভলু, বাদল গাজীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক লোক কারণে-অকারণে এ বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কথা হয় অশতীপর বৃদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা মজিদ গাজীর সঙ্গে।

তিনি বলেন, আমার জমি মলিনা-জয়নাল বাহিনী আমার পৈতৃক জমি জবরদখল করার চেষ্টা চালায়। এতে বাঁধা দিলে মলিনা বাহিনী বাড়িঘরে অতর্কিত হামলা চালায়। উল্টো আমার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। হাটাবো এলাকার রব মিয়া বলেন, মলিনা-জয়নাল বাহিনীর অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তার বিরুদ্ধে উল্টো মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। তিনি বলেন, এ বাহিনীর অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।

অভিযুক্ত মলিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। স্থানীয় ইউপি সদস্য মজিবুর রহমান লিটন বলেন, জয়নালের বহু কুকর্ম রয়েছে।

রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত) রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, মলিনা-জয়নালের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ পেয়েছি। খুব দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!