• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা প্রশ্নে চীন-ভারতের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়


নিউজ ডেস্ক সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭, ০৯:১৬ এএম
রোহিঙ্গা প্রশ্নে চীন-ভারতের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়

ঢাকা: মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহযোগিতার প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের অবস্থানের সঙ্গে একমত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘চীন বা ভারত তাদের কী কথা, কী মত সেটা আমার এত বিবেচ্য বিষয় না। কারণ এটা তাদের যার যার দেশের মতামত। আমাদের দেশে তারা যখন রোহিঙ্গাদের দেখেছেন, তখন তারা প্রত্যেকেই সহানুভূতিশীল, সেটা আমরা দেখেছি। চীন ও ভারতসহ সকলেই এগিয়ে এসেছে। তারা রিলিফ পাঠাচ্ছে। সব রকম সহযোগিতা করে যাচ্ছে।’

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ শেষে স্থানীয় সময় শুক্রবার(২২ সেপ্টেম্বর) নিউ ই্য়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ অধিবেশনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট রোহিঙ্গা সমস্যা তুলে ধরা ও এর সমাধানে বিশ্ববাসীর সহযোগিতা নিশ্চিত করা ছিল আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’।

অধিবেশনে ভাষণ, ওআইসির কন্ট্রাক্ট গ্রুপসহ বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের সেশনে রোহিঙ্গাদের বিষয় তুলে ধরার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক রোহিঙ্গা বিষয়ে চীন ও ভারতের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করেন।

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “সমস্ত রাষ্ট্রদূতরা তারা কিন্তু রোহিঙ্গাদের ওখানে যায়। তারা তাদের অবস্থা দেখে, কথা বলে। এরপর প্রত্যেকেই সহানুভূতিশীল মন নিয়েই বিষয়টা দেখেছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে গত প্রায় এক মাসের চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। দেশটিতে জাতিগত নিপীড়নের শিকার এই মুসলিম জনগোষ্ঠীর আরও প্রায় চার লাখ সদস্যকে কয়েক দশক ধরে আশ্রয় দিয়ে আসছে বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার(২১ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘে ভাষণে মিয়ানমারে উৎপীড়নের হাত থেকে রোহিঙ্গাদের রক্ষায় প্রস্তাব তুলে ধরে মানবিক এই সঙ্কট অবসানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের ত্বরিত পদক্ষেপ চান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলাকালেই রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে সংকট সমাধানে মিয়ানমারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ ও সংস্থা।

সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, দুঃসময়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোয় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

“তিনি বলেছেন, সমস্যা সমাধানে যা যা করণীয় তার পক্ষ থেকে সব করা হবে।”

মিয়ানমারে সংকটের অবসান না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের সহায়তার ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করে বাংলাদেশের সরকার প্রধান বলেন, “দরকার হলে আমরা একবেলা খাব, আরেকবেলার খাবার আমরা ভাগ করে নেব।”

বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করা হবে কি না- এক সাংবাদিক এ প্রশ্ন তুললে প্রধানমন্ত্রী তা নাকচ করে দেন।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগের পাশাপাশি আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর সমবেদনা জানাতে গেলে খালেদা জিয়ার তাকে ফটকের ভিতরে ঢুকতে না দেওয়ার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “এরপর আর কেউ কখনও এ বিষয়টা আমার কাছে তুলবেন না। বিএনপির মতো একটি সন্ত্রাসী দল, জঙ্গিবাদী দল-তাদের সাথে বসতে হবে। তাদের সাথে বসে সমাধান করতে হবে-এই কথাটা আর কেউ বলবেন না, যেটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য না।”

বিএনপির বিরুদ্ধে হত্যা, দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, “বিএনপিকে কেন টেনে আনেন বলেনতো? কেন তাদের সঙ্গে বসতে হবে, কেন তাদের রক্ষা করতে হবে?”  

রোহিঙ্গা ইস্যুতে অন্যান্য বিরোধী দলসহ বিএনপি সরকারের সঙ্গে আসবে কি না এক সাংবাদিক জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, “বিরোধীরা কী বললো না বললো সেটা নিয়ে তো রাজনীতি করি না।”

বিমানের ঢাকা-নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট পুনরায় চালুর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফ্লাইট পুনরায় চালুর কাজ এগিয়ে চলছে। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের খারাপ অবস্থার জন্য বিএনপি সরকারকে দোষারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।

“বিমানের সর্বনাশ বিএনপি ক্ষমতায় থাকতেই করে গেছে। আমরা ক্ষমতায় আসার পর আন্তর্জাতিক সিভিল অ্যাসোসিয়েশন অথরিটির নীতিমালা মেনে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি,” বলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জাতিসংঘ সভায় যোদ দিতে গত রোববার নিউ ইয়র্কে যান শেখ হাসিনা। পাঁচ দিন নিউ ইয়র্কে অবস্থানের পর শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে ওয়াশিংটনে যান তিনি। সেখান থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর রওনা হয়ে ২ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা রয়েছে তার।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আতা

Wordbridge School
Link copied!