• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গা ফেরাতে দিল্লিতে চার শর্ত দিল মিয়ানমার


আন্তর্জাতিক ডেস্ক নভেম্বর ১১, ২০১৭, ০৯:৩৭ পিএম
রোহিঙ্গা ফেরাতে দিল্লিতে চার শর্ত দিল মিয়ানমার

ঢাকা: নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে এবার চারটি শর্ত দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। ইয়াঙ্গুনে শুক্রবার(১০ নভেম্বর) ভারত-মিয়ানমার সম্পর্ক নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে শরণার্থী বিষয়ে দেশটির এই অবস্থান প্রকাশ পায় বলে কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার জানিয়েছে।

সম্মেলনে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ইউ কিইয়াও জেয়া’র দেয়া শর্তগুলোকে ‘কড়া’ বলেই উল্লেখ করা হয়েছে ভারতীয় সংবাদপপত্রটির প্রতিবেদনে। শর্ত চারটি হচ্ছে- যে সব রোহিঙ্গা এ দেশে দীর্ঘদিন বসবাসের প্রমাণপত্র দাখিল করতে পারবেন, স্বেচ্ছায় রাখাইনে ফিরতে চাইবেন, পরিবারের কেউ এ দিকে রয়েছেন তেমন প্রমাণ দেখাতে পারবেন এবং বাংলাদেশে জন্মানো শিশুগুলোর বাবা-মা উভয়েই মিয়ানমারের স্থায়ী বাসিন্দা প্রমাণিত হলে তবেই তাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে।

প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যকার শরণার্থী সঙ্কটের বিষয়ে ভারত ইতোমধ্যে বলেছেন, মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে ফেরত নিতে হবে। একই অবস্থান বিশ্ব সম্প্রদায়েরও। কিন্তু বাংলাদেশে শরণার্থী জীবন কাটানো ১০ লাখ রোহিঙ্গা ফেরতে মিয়ানমারের কূটনীতিক যে শর্তগুলোর কথা বলছেন, তা পূরণ যে দুঃসাধ্য, তা কক্সবাজারে শরণার্থী শিবির ঘুরে আসা বিদেশি অনেক কূটনীতিকই স্বীকার করেছেন।

তারা বলছেন, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার পর প্রাণ বাঁচাতে যারা ভিটেমাটি ছেড়ে এসেছেন, তাদের কাছে নিজেদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে প্রমাণের কোনো নথি না থাকাটাই স্বাভাবিক। কলকাতার ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ, ইয়াঙ্গুনের ভারতীয় দূতাবাস এবং মিয়ানমারের বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সম্মেলনেও বিষয়টি উঠে আসে।

এর উত্তরে ইউ কিইয়াও জেয়া বলেন, স্কুলে পড়া, হাসপাতালে চিকিৎসা, চাকরির নথি- এ সবের মতো কিছু প্রমাণ তো দেখাতেই হবে। না হলে ফেরত নেওয়াটা মুশকিল। শরণার্থী সঙ্কটের বিষয়ে কেন এত কড়া শর্ত- তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, রাখাইন প্রদেশের এই সমস্যা কেবল মানবিক বিষয় নয়। নিরাপত্তাও একটা বড় কারণ।

রাখাইনে সমস্যা সমাধানে কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়নে এগিয়ে যাওয়াকে নিজেদের আন্তরিকতার প্রমাণ হিসেবে দেখিয়েছেন ইউ কিইয়াও জেয়া। এদিকে নিউ লাইট অব মিয়ানমার খবর দিয়েছে, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত মংডুতে নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) বিলি শুরু করেছে মিয়ানমার সরকার।

বাংলাদেশে শরণার্থী জীবনে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে শরণার্থী জীবনে রোহিঙ্গারা
১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুসরণ করে যাচাইয়ের মাধ্যমে কারা মিয়ানমারের নাগরিক, তা নিশ্চিত হয়ে এই এনভিসি দেয়া হচ্ছে। ওই আইনে মুসলিম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করেনি মিয়ানমার, যা নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে বহু কাল ধরে রাখাইনে বসবাসরত এই মুসলিম জনগোষ্ঠীর।

রোহিঙ্গারা যে রাখাইনের বাসিন্দা, ইতিহাস ঘেঁটে তার প্রমাণ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরা হলেও মিয়ানমার সরকারের দৃষ্টিতে এরা ‘অবৈধ বাঙালি অভিবাসী’।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আসার শুরু ১৯৭৮ সালে; এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনের মুখে শরণার্থী জীবনে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৪ লাখ ছাড়ায়। গত ২৫ অগাস্ট রাখাইনে সেনা নির্যাতন শুরু হলে বাংলাদেশের দিকে রোহিঙ্গা ঢল নামে। এই সংখ্যা আড়াই মাসে ৬ লাখ ছাড়িয়েছে।

বর্তমানে দেশে নতুন-পুরনো মিলিয়ে দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।

সোনালীনিউজ/আতা

Wordbridge School

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর

Link copied!