• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ফেরাতে মিয়ানমারের আগ্রহ দেখছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৩, ২০১৭, ০১:১১ পিএম
রোহিঙ্গা ফেরাতে মিয়ানমারের আগ্রহ দেখছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ থেকে সব রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে হবে। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি’র সফররত বিশেষ দূত ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী চাও টিনের কাছে এই কড়া বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে মিয়ানমার চায় শুধু সম্প্রতি আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে আলোচনা। 

এ ছাড়াও, রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের লক্ষ্যে মিয়ানমারের কাছে পাঁচ দফার প্যাকেজ প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। এতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে কর্মকৌশল প্রণয়ন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া তাদের নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য যথাযথ কমিটি গঠন এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধিতে দুটি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি, বাংলাদেশ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছে। চাও টিন মিয়ানমার ফিরে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে এসব প্রস্তাব তুলে ধরবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। 

বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) এ উপলক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার দফতরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, মিয়ানমারের বিশেষ দূতের এ সফর জটিল বিষয়ে আলোচনার পথ সুগম করবে। এর ফলে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

গত দু’মাসে সীমান্ত পেরিয়ে মিয়ানমার থেকে এসে যারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের ‘যাচাই-বাছাই করে’ ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে দেশটি আগ্রহ দেখিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। সফররত মিয়ানমারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু জানাতে গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মাহমুদ আলী বলেন, ‘তাদের আগ্রহ দেখছি। তাদের আন্তরিকতায় আমরা আশাবাদী।’

মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে রোহিঙ্গাদের যেন বারবার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের প্রয়োজন না হয়, সেরকম ব্যবস্থা নিতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সরকার। সফররত মিয়ানমারের বিশেষ দূত চাও টিন’কে এমন বার্তাই দিয়েছে বাংলাদেশ। 

গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের আলোচনায় ‘নিরাপত্তা সংলাপ ও সহযোগিতা’ এবং ‘বর্ডার লিয়াজোঁ অফিস’ বিষয়ক দুটি সমঝোতা স্মারক দ্রুত স্বাক্ষরের বিষয়ে উভয় পক্ষ একমত হয়েছি। বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী মিয়ানমার নাগরিকদের দ্রুত ফিরিয়ে নিতে একটি ‘যাচাই কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি আমরা। প্রস্তাবটি তার দেশের সংশ্লিষ্টদের কাছে তুলে ধরবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন মিয়ানমারের বিশেষ দূত। 

কয়েক মাস ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকারের অত্যাচারে বিশ্বব্যাপী নিন্দা প্রকাশ পেয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির বিশেষ দূত চাও টিন বর্তমানে বাংলাদেশ সফর করছেন। তিনি গত বুধবার পররাষ্ট্র সচিব এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। 

বিশেষ দূতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে আবুল হাসান মাহমুদ আলী আরো বলেন, মিয়ানমারের বিশেষ দূত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ও জোরদার করার জন্য অং সান সু চির বিশেষ আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর ও সমস্যা সমাধানে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তাদের পক্ষ থেকে এমন আগ্রহ প্রদর্শনে আমরা এ সমস্যা সমাধানে আশাবাদী।

মিয়ানমারের দূতের বরাত দিয়ে মাহমুদ আলী জানান, সু চি’র বিশেষ দূত গত বছরের অক্টোবর মাসে তাদের দেশের সীমান্ত ফাঁড়িতে সন্ত্রাসী হামলার পর বাংলাদেশের ভূমিকা ও সহযোগিতার প্রশংসা করেছেন। ওই ঘটনায় বাংলাদেশের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত করে মিয়ানমারে সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে বিশেষ দূত বলেন, মিয়ানমার সরকার কখনো বাংলাদেশকে দোষারোপ করেনি।

রাখাইন রাজ্যে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে মিয়ানমার দূতকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের পূর্ণ নিরাপত্তা ও জীবিকার নিশ্চয়তাসহ ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করুন। রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলমান জনগোষ্ঠীর গণহারে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান ও মূল সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিন, যাতে বারবার এ সমস্যা তৈরি না হয়। 

বাংলাদেশের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার ফিরতে আগ্রহীদের নাগরিকত্বের বিষয়টি যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন সফররত মিয়ানমারের বিশেষ দূত চাও টিন। রাখাইন রাজ্যের ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সশস্ত্র চরমপন্থা বিকাশের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে মিয়ানমারের বিশেষ দূত ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সশস্ত্র চরম পন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সহযোগিতা চায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জনানো হয়, সন্ত্রাস ও উগ্র জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমারের বিশেষ দূতকে অবহিত করেন, বাংলাদেশ কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে নিজেদের ভূমি ব্যবহার করতে দেয় না এবং ইতিপূর্বে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ধর্মীয় ও জাতিগত উগ্রবাদ এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মিয়ানমারকে পূর্ণ সহযোগিতার নিশ্চয়তা দেন। রাখাইন রাজ্যে সন্ত্রাস ও উগ্র জঙ্গিবাদ যাতে বিস্তার লাভ না করে সে লক্ষ্যে অধিকারবঞ্চিত হতাশায় নিমজ্জিত রাখাইন মুসলমান জনগোষ্ঠীর মূল সমস্যা সমাধানে আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়া হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ সফর দুই দেশের মধ্যকার জটিল বিষয়ে আলোচনার পথ সুগম করবে। রাখাইনের মুসলিমদের নাগরিকত্ব প্রদানসহ তাদের মিয়ানমারের সমাজে সম্মানজনক আত্মীকরণের মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করি। 

উল্লেখ্য, গত বছরের ৯ অক্টোবরে মিয়ানমারে সৈন্যদের ওপর হামলার পর সেনাবাহিনী সে দেশের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ব্যাপক নির্যাতন শুরু করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত চার মাসে প্রায় ৬৫ হাজার মিয়ানমার নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। তবে অনুপ্রবেশের ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এর বাইরে আনুমানিক তিন লাখ অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক দীর্ঘদিন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। সে দেশের নাগরিকদের অবৈধ অবস্থানের কারণে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে বিশেষ দূতকে অবহিত করেছে বাংলাদেশ।  

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!