• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি মিয়ানমার


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৭, ০৯:৩৫ পিএম
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি মিয়ানমার

ঢাকা: একমাত্র আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধান সম্ভব বলে মনে করে ইউরোপিয় ইউনিয়ন(ইইউ)। এ বিষয়ে ইইউর পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে প্রস্তাব দিলে দেশটির সরকার তা মেনে নিয়েছে বলে ইইউ সূত্র জানিয়েছে। চলতি সপ্তাহের শেষেই এ বিষয়ে মিয়ানমার-ইইউ এক বৈঠক করবে বলে জানা গিয়েছে।

ইইউর ভাইস-প্রেসিডেন্ট ফেডেরিকা মগারিন এ বিষয়ে বলেছেন, ইইউ বিশ্বাস করে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করলেই তা সম্ভব। এ বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করেছে ইইউ। মিয়ানমার সরকারও আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে রাজি হয়েছে। চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে ফের মিয়ানমারের সঙ্গে বৈঠক করবে ইইউ।

এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি বিশেষ বৈঠকের আয়োজন করেছে ইইউ। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর সেখানে বিষয়টি আলোচিত হবে। মগারিন আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের এখন মানবিক সহায়তা দেয়া প্রয়োজন। মিয়ানমারে তাদের পুনর্বাসনে ইইউ কাজ করবে। এজন্য মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে একটি বৈঠক হয়েছে তাদের। মিয়ানমার সরকারও ইইউকে সহায়তা করতে রাজি হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে মিয়ানমারের একটি সংবাদপত্র জানিয়েছে, আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে দেশটির সরকার  ১৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি ইইউর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। রাখাইনে শান্তি ফিরিয়ে আনা ও রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে ইইউর উদ্যোগকে গুরুত্ব দিয়েছে মিয়ানমার।

মিয়ানমারের প্রভাবশালী ইংরেজি সংবাদমাধ্যম ইরাবতি বুধবার(১৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে বলছে, ওই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে গত মাসে বেশ কিছু সুপারিশসহ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে উভয় কমিশন। কমিটি গঠনের একদিন পর সুপারিশ বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান, দেশটির সামাজিক কল্যাণ, ত্রাণ এবং পুনর্বাসন মন্ত্রী ইউ উইন মিয়াত আয়ের সঙ্গে কথা বলেছে ইরাবতি।

প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, ধর্ম, বর্ণ, নাগরিকত্ব, লিঙ্গ নির্বিশেষে সব গোষ্ঠীর শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবায় সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে ও বাস্তবায়নে সুপারিশ যাচাই প্রক্রিয়ার গতি বাড়াতে কাজ করবে নতুন কমিটি।

মাদক ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই কমিটি কাজ করবে বলে জানানো হয়েছে। কমিটির সহ-চেয়ারম্যান রাখাইন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ইউ নি পু। নতুন এই বাস্তবায়ন কমিটি আইনের শাসন, স্থিতিশীলতা, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য, নিরাপত্তা, অর্থনীতি, সামজিক কল্যাণ ও মৌলিক অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নে কাজ করবে।

একই সঙ্গে জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর গ্রাম, মানবিক ত্রাণ সহায়তা বিতরণ ও অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদের জন্য আশ্রয়শিবির বন্ধ করে তাদের পুনর্বাসন করা হবে। প্রতি চার মাস অন্তর এই কমিটি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ব্যাপারে তাদের অগ্রগতির তথ্য প্রকাশ করবে। এ কমিটির প্রথম কাজ কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, প্রথমত, বৃহস্পতিবার আমরা একটি বৈঠকে বসব। দুই কমিশনের যেসব সুপারিশ আছে সেগুলো বিস্তারিত নিরীক্ষণ ও পরিষ্কারভাবে বোধগম্যের দরকার আছে।

এরপরই আমরা বাস্তবতার নিরীখে মানুষের জন্য উপকারী সুপারিশসমূহের বাস্তবায়ন শুরু করব। আর যত দ্রুত সম্ভব এটি করা হবে।

ভিন্ন দুই কমিশনের সুপারিশ শতভাগ বাস্তবায়ন করা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট ইউ মিয়েন্ট সোয়ে বলেন, সব সুপারিশ সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষার পরই কেবল আমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারব। পরিস্থিতি ও মানুষের জন্য উপকারী সব সুপারিশকেই আমরা প্রাধান্য দেব।

এদিকে অপর এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিতে ২৯ কোটি ১০ লাখ টাকা সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর আগেও ২০ লাখ ইউরো বরাদ্দ দিয়েছিল সংস্থাটি। এই অর্থ দিয়ে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন ও তাদের মানবিক সহায়তা দিতে ব্যয় হবে।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের কয়েকটি তল্লাশিচৌকিতে উগ্রবাদীদের হামলার সূত্র ধরে রাখাইনে দমন অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এরপর থেকেই প্রাণভয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা সীমান্তের ওপারে সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পরিকল্পিত দমন অভিযানের বিবরণ দিচ্ছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র ভিভিয়ান তান সম্প্রতি কাতারভিত্তিক টিভি চ্যানেল আল-জাজিরাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান। গত দুই সপ্তাহে বাংলাদেশে প্রায় ৩ লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা ঢুকেছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর। 

রাখাইন থেকে বেঁচে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, নারী, শিশু, বৃদ্ধ—কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না। এই রক্তপাত বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, আঞ্চলিক শক্তি ও সরকারের প্রতি সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন তারা। নতুন ও এর আগে আসাদের মিলিয়ে বর্তমানে রোহিঙ্গা সংখ্যা দাঁড়িয়ে দশ লাখের উপরে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/তালেব

Wordbridge School
Link copied!