• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

লালবাতি উঠিয়ে দিলেন মোদী


আন্তর্জাতিক ডেস্ক এপ্রিল ১৯, ২০১৭, ০৮:০৭ পিএম
লালবাতি উঠিয়ে দিলেন মোদী

ঢাকা: লালবাতির ব্যবহার নিয়ে সাহসী এক সিদ্ধান্ত নিল ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এখন থেকে কোনো গাড়িতেই আর লালবাতি ব্যবহার করা যাবে না। এমনকী, রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতেও নয়। ভিআইপিদের প্রতীক বলে খ্যাত এই লাল বাতি আর থাকছে না। 

তবে, জরুরি মুহুর্তে রাস্তা ফাঁকা করার জন্য দমকল, পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স, সেনাবাহিনীর গাড়ি লালবাতি ব্যবহার করতে পারবে।

বুধবার (১৯ এপ্রিল) দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা যুগান্তকারী এই সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন সিদ্ধান্ত আগামী পয়লা মে থেকে কার্যকর হবে। তবে, লালবাতি নিষিদ্ধ হলেও আপত্কালীন জরুরিভাবে যাওয়ার ক্ষেত্রের নীল বাতি আগের মতোই ব্যবহার করা যাবে। 

নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রীসভার সভাপতিত্ব করেন। এরফলে ভারতে কোনো ভিআইপি গাড়িতে লালবাতি ব্যবহার করতে পারবেন না। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছেন, একান্ত প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর যাতাযাতের ক্ষেত্রে রাস্তা ফাঁকা করার জন্য পুলিশ এই লালবাতি ব্যবহার করতে পারবেন।

তবে, অপ্রয়োজনে আর ট্রাফিক আটকে মানুষকে কষ্ট দিয়ে রাখা হবে না। গণপরিবহনের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে ভিআইপিরা চলাচল করবেন না। ভারতীয় মিডিয়া বলছে, সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদী এক অনুষ্টানে গিয়েছিলেন এই রকম লালবাতির প্রটোকল ছাড়া। কোনো প্রকার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই তিনি বের হয়েছিলেন। তার জন্য কোনো রাস্তা আগে থেকেই আটকে রাখেনি পুলিশ।

সাধারণত প্রধানমন্ত্রী কোন রাস্তা দিয়ে চলাচল করবেন তা আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে। এজন্য পুরো রাস্তা সিলগালা অর্থ্যাৎ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ভারত দীর্ঘদিনের এই বাজে সংস্কৃতি থেকে বের হতে চাইছে।

মন্ত্রী এবং সরকারি ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের  রাস্তা ফাঁকা পেতে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যাতে কোনও বাধা পেতে না হয়, সেই কারণেই নীল বাতির ব্যবস্থা। এ দিন সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী বলেন, ‘মন্ত্রিসভা ঐতিহাসিক এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী পয়লা মে থেকে জরুরি পরিষেবা ছাড়া অন্য কোনও গাড়িতে বেকন বাতি ব্যবহার করা যাবে না।’

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী তো বটেই ওই তালিকায় উপ-রাষ্ট্রপতি, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্য সরকারের মন্ত্রী, কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারি আমলা, সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টের বিচারপতিরাও এখন আর লালবাতি ব্যবহার করতে পারবেন না। 

কোনো ব্যক্তি বা পদাধিকারী আর লালবাতিওয়ালা গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে রাজ্য সরকারগুলিকে জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে কোন কোন গাড়িতে লালবাতি ব্যবহার করা যাবে তার নয়া তালিকা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

লালবাতি নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘ দিনের। অনেকেই ওই বাতি অপব্যবহার করেন বলে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ উঠেছে। তবে, সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশে সদ্য নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তার মন্ত্রীদের গাড়িতে লালবাতির ব্যবহার বহাল রেখেছিলেন। আবার, পঞ্জাবে ক্ষমতায় ফিরে এসে কংগ্রেসের অমরেন্দ্র সিংহ লালবাতিওয়ালা গাড়ি ছেড়ে দিয়েছিলেন। মন্ত্রীদের জন্যও তা নিষিদ্ধ করেছেন। এর আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে লালবাতি বর্জন করেছেন। তাঁকে অনুসরণ করেছেন বেশ কিছু মন্ত্রী। দিল্লিতে আপ সরকারের মন্ত্রীরাও বাতিহীন গাড়ি ব্যবহার করেন।

কিন্তু অধিকাংশ রাজ্যে মন্ত্রী, বড়-ছোট আমলা, সাংসদ, বিধায়ক, এমনকী পঞ্চায়েত প্রধানরাও লালবাতি নিয়ে ঘুরছেন। এত দিন লালবাতি ভারতের ‘ভিআইপি’ সংস্কৃতির প্রতীক হিসাবে গণ্য হত। সাধারণ নাগরিকদের থেকে স্বতন্ত্র থাকতেই এমনটা করেন অনেকে। লালবাতির প্রকৃত প্রয়োজন জরুরি কাজের জন্য যে দ্রুত গতিতে যাওয়ার সঙ্কেত, তা তাঁরা ভুলে যেতেন। কিছু পদাধিকারীকে ‘জরুরি’ বলে চিহ্নিত করাই যেন লালবাতির প্রধান কাজ হয়ে উঠেছিল।

এর আগে সুপ্রিম কোর্ট সাংবিধানিক পদাধিকারীদের জন্য লালবাতি, এবং জরুরি পরিষেবা ও পুলিশের জন্য নীল বাতির ব্যবহারও নির্দিষ্ট করে। বাতির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে রাজ্যগুলিকে নতুন তালিকা তৈরি করতে বলা হয়। কিন্তু, এবার গোটা বিষয়টাকেই সমূলে বিনাশ করতে তত্পর হল কেন্দ্র। লালবাতির ব্যবহারই বন্ধ করে দেওয়া হল।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আতা

Wordbridge School
Link copied!