• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লালমোহন হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা


ভোলা প্রতিনিধি জানুয়ারি ২১, ২০১৮, ০৪:৩২ পিএম
লালমোহন হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা

ভোলা : জেলার লালমোহনের ৫০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসার অভাবে রোগীরা ফিরে যাচ্ছেন। ডাক্তার ও নার্সদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় রোগীরা চরম হতাশা নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করছে। ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে ১ জন মাত্র ডাক্তার ডিউটি দিতে দেখা গেছে। শুক্রবার এ হাসপাতালে নিউমোনিয়া আক্রান্ত সানজিদা নামের এক বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এতে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুর অভিভাবকদের মাঝে আতংক দেখা দেয়।

রোববার (২১ জানুয়ারি) সকাল বেলা ১০টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় চিকিৎসার অভাবে জমজ দুই শিশু আজিজুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলামকে নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন পাঙ্গাসিয়া স্লুইজঘাট এলাকা থেকে আসা নাহার নামে এক মা। দুই শিশুকে তিনি ২ দিন আগে ভর্তি করান।

ডায়রিয়া আক্রান্ত এ শিশুদের কোনো উন্নতি হয়নি শনিবার পর্যন্ত। কর্তব্যরত ডাক্তার আব্দুল্লা আল মামুনের কাছে গেলেও কোনো সমস্য নেই বলে তিনি শিশুর মাকে জানান। এ ছাড়া নতুনবাজার এলাকা থেকে আসা আলী আহমেদ নামে এক বৃদ্ধকে নিয়ে ফিরে যেতে দেখা গেছে তার স্বজনদের।

তাকে ভোলা হাসপাতালে নিবেন বলে জানান ওই স্বজনরা। তিনদিন আগে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করান।

কোনো উন্নতি না হওয়ায় তাকে নিয়ে যান। হাসপাতালে এ অবস্থার কারণে রোগীরা ফিরে যাচ্ছে। ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে একজন ডাক্তার ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। সময়মত ডাক্তার, নার্স পাচ্ছেন না বলে হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীরা জানিয়েছেন। পাওয়া যাচ্ছে না ঠিকমতো ওষুধ।

কেবলমাত্র স্যালাইনই দেওয়া হয় বলে রোগীর স্বজনরা জানান। শনিবার আউটডোরেই ৩৭ জন শিশুকে ডাক্তারের কাছে আনা হয়। এ ছাড়া ডায়রিয়া আক্রান্ত ৪১জন শিশু ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত ৭জন শিশুকে এ সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

জানা গেছে, লালমোহন হাসপাতাল ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও এর কোনো সুফল পাচ্ছে না লালমোহন উপজেলাবাসী। হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার, প্যাথলজী বিভাগ থাকলেও বছরের পর বছর ধরে তা বন্ধ রয়েছে। বিষেষজ্ঞ ডাক্তার ও প্যাথলজিষ্ট না থাকায় অপারেশন থিয়েটার এবং প্যাথলজী খোলা হচ্ছে না। রোগীরা সামান্য রক্ত, ইউরিন এমনকি এক্স-রে করতে হলেও বাইরের ডায়াগনোস্টিকে যেতে হয়। ১৯ জন মেডিকেল অফিসারের পদে মাত্র ৭ জন যোগদানকারী ডাক্তার থাকলেও হাসপাতালে গিয়ে কেবল মাত্র ১ জন ডাক্তার পাওয়া গেছে। নবযোগদানদারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুর রশিদসহ বাকী ৬ জনকেই হাসপাতালে পাওয়া যায়নি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং চর্ম ও যৌন বিষেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান ছুটিতে আছেন এবং ডা. মো. মহসিন ট্রেনিংয়ে আছেন বলে কর্মরত স্টাফরা জানালেও বাকীদের ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে পারেনি। তারা ছুটিও নেননি। ডা. মো. মহিবুর রহমান (অর্ধ.) মুঠোফোনে জানান, তিনি ইস্তেমায় গেছেন। তাছাড়াও এত বড় এলাকায় ৭ জন ডাক্তার দিয়ে রোগী সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এখানে কমপক্ষে আরো ৪/৫ জন ডাক্তার প্রয়োজন। তজুমদ্দিন থেকে আনা ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন চিকিৎসা সেবা দিলেও তিনি এখন পর্যন্ত কাগজে কলমে এই হাসপাতালে যোগদান করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। অগত্যা গাইনি ডাক্তার বিনয় কৃষ্ণ গোলদারই আউটডোরে রোগীদের দেখতে ব্যস্ত। তিনি জানান, আমি রোগী সামলাতে হিমশীম খাচ্ছি।

জরুরি বিভাগে নিয়মিত ডাক্তার পাওয়া যায় না। সেকমো মো. আবুল হোসেন মেডিকেল অফিসার না হলেও মেডিকেল অফিসারের মতোই রোগী দেখেন জরুরি বিভাগে বসেই। পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে থাকেন এই আবুল হোসেন। যথাযথ তদারকী এবং ডাক্তারের অভাবে জরুরি বিভাগ চলে তাদের ইচ্ছামতো।

এ ব্যাপারে ভোলার সিভিল সার্জন ডা. রথিন্দ্রনাথ জানান, দুই জন ডাক্তার প্রশিক্ষণে আছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইজতেমায় গেছে। ডাক্তার সংকটের বিষয়ে আমরা চেষ্টা করছি সমাধান দিতে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!