• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

লাশটাও কি পেতে পারি না?


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২২, ২০১৮, ০৬:৪১ পিএম
লাশটাও কি পেতে পারি না?

ঢাকা: কত ঈদ যায়, ঈদ আসে। ফিরে আসে বিজয় ও স্বাধীনতা দিবসসহ নানা উৎসব আনন্দের দিন। কিন্তু ফিরে তো আসে না আমাদের প্রিয়জনেরা। আজো চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকি, এই বুঝি আমাদের স্বজনরা বাড়ি ফিরে এলো। কিন্তু কেউ ফিরে আসে না। কেউ কি বলতে পার; আর কত অপেক্ষা করব? কবে ফিরে পাব সন্তানকে? জীবিত না হোক সন্তানের লাশটাও কি পেতে পারি না; সে অধিকারও কি আমাদের নেই?

এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে আক্ষেপ প্রকাশ করলেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া নিখোঁজ সন্তানের মায়েরা। জাতীয় প্রেস ক্লাবে শনিবার (২১ এপ্রিল) ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত গণশুনানিতে অংশ নেন গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা। প্রায় ৫০টি পরিবার শুনানিতে অংশ নিয়ে জানান, তারা আজো বিচার কিংবা স্বজনের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন। তাদের প্রশ্ন, স্বজন হারানোর জন্য কারা দায়ী, এর বিচার কোথায় পাবেন? কোথায় গেলে মিলবে তাদের খোঁজ?

গুম হওয়াদের পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতনে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭২৭ জন। এর মধ্যে কেউ কেউ ফিরে এলেও অধিকাংশই নিখোঁজ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. শাহিনুর আলমকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন ছোটভাই মেহেদি হাসান। তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের নামে কোনো মামলা ছিল না। তিনি কোনো রাজনীতিও করতেন না। ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল র‌্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্পের সদস্যরা এসে তাকে ধরে নিয়ে যায়। আমরা সব জায়গায় খুঁজেও তাকে পাইনি। সাত দিন পর জানতে পারি আমার ভাইয়ের লাশ পাওয়া গেছে। পরে আমরা বিচারের আশায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করি। ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন নাহার মামলা আমলে নেন। কিন্তু সেই মামলা এখনো ঝুলে আছে। কোনো শুনানি হয়নি।

চট্টগ্রামের নুরুল আলম নুরুর স্ত্রী দাবি করেন, বাসায় এসে কলিংবেল চেপে পুলিশ পরিচয় দেওয়ায় তিনি গেট খুলে দেন। খালিগায়েই তার স্বামীকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার স্বামীকে এক সেকেন্ডও সময় দেওয়া হয়নি। আমাদের আশা ছিল, নিয়ে গেছে যখন কোর্ট থেকে জামিনের আবেদন করব। কিন্তু তার আগেই ভোর ৪টায় খবর আসে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে লাশ পড়ে আছে। আমরা সকাল ৭টায় সেখানে পৌঁছাই। তার মাথায় দুটি গুলি করা হয়েছিল। তিন মাসের বাচ্চা রেখে গেছে সে। সেই বাচ্চা এখন বড় হয়ে গেছে। বাবা নেই তার।

এ সময় স্বজনরা আক্ষেপ করেন, প্রথমে ২০১৩ সালে সন্তানদের সন্ধানের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আটজন মা ও কারো বাবা, স্ত্রী, সন্তান, ভাই ও বোন হাজির হয়েছিলেন। আজ সারা দেশ থেকে গুম হওয়া শত শত পরিবারের প্রিয়জনরা হাজির হয়েছি। গুম হওয়া মুন্নার বাবা নিজাম উদ্দিনের শেষ আকুতি কেউ রক্ষা করতে পারল না। তিনি বেঁচে থাকতে বলেছিলেন আমার মুন্নাকে ফিরিয়ে না দিলে তার কবর দেখিয়ে দিন। অসহায় বাবা সন্তানের কবর না দেখে নিজেই কবরবাসী হয়েছেন। 

মুন্নার মা ময়ূরী বেগম কাঁদতে কাঁদতে এখন অন্ধ। সূত্রাপুরের পারভেজ হোসেনের বাবা ও শ্বশুর না-ফেরার দেশে। পারভেজের ছোট মেয়ে হৃদির আবদার কে মেটাবে! তেজগাঁওয়ের সাজেদুল ইসলাম সুমনের মা বাথরুমে ঠান্ডা পানি ভেবে গরম পানি গায়ে ঢেলে শরীর ঝলসে দিয়েছেন। খালেদ হাসান সোহেলের ছেলে আরিয়ান আকাশের দিকে তাকিয়ে বাবাকে খোঁজে। চঞ্চলের ছেলে আহাদ ঘুমের ঘোরে বাবা বাবা বলে চিৎকার করে। সুমনের মেয়ে আরোয়ান বাবার ছবির দিক ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। কাওসারের শিশুকন্যার দিকে তাকানো যায় না। স্বজনরা প্রশ্ন করেন, এভাবে আর কত দিন! এর শেষ কোথায়? মানবতার মা তো আমাদের প্রধানমন্ত্রী, তবে গুমের মা কে?

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!