• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

লিটন হত্যা : ৪৫ জন আটক হলেও রহস্যের কিনারা হয়নি


গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানুয়ারি ১১, ২০১৭, ১১:২৪ এএম
লিটন হত্যা : ৪৫ জন আটক হলেও রহস্যের কিনারা হয়নি

গাইবান্ধা : দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মো. মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যার ১১ দিন পার হয়ে গেলেও রহস্যের এখনো কোনো কূলকিনারা করতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এ পর্যন্ত ৪৫ জনকে আটক করা হলেও আসল খুনিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। হত্যার ঘটনার সুরাহা না হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মাঝেও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

লিটন হত্যার পর থেকে পুলিশ সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের আটক করে। এছাড়া আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের কয়েকজন নেতাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন দলীয় নেতাকর্মীও এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন।

এর মধ্যে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি মো. আহসান হাবীব মাসুদকে পুলিশ শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) তার নিজ বাসা থেকে আটক করে। পরে লিটন হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। আদালত তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন।  
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা ও সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এমপি লিটন হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কয়েকজন নেতাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। গত বৃহস্পতিবার উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদুল ইসলামকে নিজ বাড়ি থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি টিম ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। 

তিনি আরো বলেন, ‘লিটন হত্যার রহস্য উদঘাটনে দলীয় আরো অনেক নেতাকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তদন্তের প্রয়োজনে যে কাউকে আটক করলেও কোনো সমস্যা নেই।’ সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহম্মেদ বলেন, ‘এমপি লিটন হত্যার ১০ দিন পেরিয়ে গেছে, কিন্তু হত্যার রহস্য কিংবা হত্যাকারীরা গ্রেফতার হয়নি। এমনকি হত্যাকারীদের ব্যবহৃত দুটি পালসার মোটরসাইকেলও আটক করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা চাই খুনিদের অতিসত্বর চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হোক। এখানে আওয়ামী লীগের তেমন কোনো বিভেদ বা বিরোধ ছিল না। অন্য কোনো দলের বিরুদ্ধেও হত্যাকাণ্ড ঘটানোর কোনো অভিযোগ নেই। আর এমপি লিটন যেহেতু জামায়াত-শিবিরকে এলাকায় রুখে দিয়েছিলেন, সে কারণে লিটনকে হত্যার বিষয়ে আমাদের সন্দেহ জামায়াত-শিবির চক্রের দিকেই।’

বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুদ্দিন বাবু বলেন, ‘লিটন হত্যাকাণ্ডে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের দ্রুত খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া দরকার। কোনো কারণে হত্যাকারী পার পেয়ে গেলে গোটা সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগশূন্য হবে। সেইসঙ্গে জামায়াত-শিবিরের দাপট ও তাদের উত্থানে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাবে।’    

সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি মো. আতিয়ার রহমান বলেন, ‘এমপি লিটন হত্যার ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তদন্ত চালাচ্ছেন। ইতিমধ্যে আটক, গ্রেফতার ও রিমান্ডে এনে বিভিন্ন জনকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়াও অব্যাহত আছে। আশা করা হচ্ছে, খুব অল্প সময়ে এ হত্যার রহস্য উন্মোচিত হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এমপি লিটন হত্যার পর সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবির ও আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা মাসুদসহ অন্তত ৪৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। এর মধ্যে আটজনকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, গত ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের শাহবাজ এলাকায় নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে মারাÍকভাবে আহত হন মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে নেয়া হলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় লিটনের বোন তাহমিদা বুলবুল বাদী হয়ে অজ্ঞাত চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!