• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
সংসদে প্রধানমন্ত্রী

লিটন হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৩, ২০১৭, ১২:১০ পিএম
লিটন হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে

ঢাকা : সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল তাণ্ডব ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল সংসদ সদস্য লিটন। যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকেও তার এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়নি। এটাই হয়তো ছিল এমপি লিটনের বড় অপরাধ। এলাকার মানুষের শান্তি ও স্বস্তি নিশ্চিত করেছিল বলেই তাকে এভাবে অকালে জীবন দিতে হলো। এ হত্যাকাণ্ড অবশ্যই মেনে নেয়া যায় না। আমরা জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যেভাবে কঠোর অবস্থান নিয়েছি, তেমনিভাবেই লিটন হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।  

গতকাল রোববার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে জাতীয় সংসদের ১৪তম অধিবেশনে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে এই আলোচনায় আরো অংশ নেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বি মিয়া, চিফ হুইপ আসম ফিরোজ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, জুনাইদ আহমেদ পলক, হুইপ মাহবুব আরা গিনি, এ কে এম শামীম ওসমান, মীর শওকত আলী বাদশা ও জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ।  

বক্তাদের বেশিরভাগই হত্যাকাণ্ডের শিকার মনজুরুল ইসলাম লিটনকে নিয়ে একশ্রেণির গণমাধ্যমের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন। আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। 
 
প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের চরম তাণ্ডব, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা ও নাশকতার বিবরণ তুলে ধরে বলেন, গাইবান্ধাসহ পুরো উত্তরাঞ্চলই বিএনপি-জামায়াত জোট সন্ত্রাস ও জঙ্গিদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিল। ২০১৩ ও ২০১৫ সালে গাইবান্ধাসহ আশপাশের এলাকায় প্রচণ্ড সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায় জামায়াত-শিবির ও বিএনপির সন্ত্রাসীরা। পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ চালিয়ে চার পুলিশ সদস্যকে পুড়িয়ে হত্যা করে তারা। সেখানে আওয়ামী লীগের এক থেকে দেড় হাজার সদস্যের বাড়ি-গাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছিল জোটের সন্ত্রাসীরা।  

সংসদ সদস্য লিটনের নির্বাচনী এলাকা জামায়াত অধ্যুষিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন বানচালের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্র নিয়ে হাজার হাজার গাছ কেটে রাস্তায় অবরোধ করে সারাদেশের মতো ওই এলাকাতেও বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। যখন ওই এলাকার জনগণ বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলল, তখন এমপি হিসেবে নয়, একজন এলাকার সাধারণ মানুষ হয়ে মনজুরুল ইসলাম লিটন নেতৃত্ব দিয়েছে। এটাই যেন এমপি লিটনের জীবনে কাল হয়ে দাঁড়াল। তাদের অগ্নিসন্ত্রাস লিটন রুখে দিয়ে ওই এলাকায় মানুষের মধ্যে শান্তি ও স্বস্তি ফিরিয়ে দিয়েছিল। এটা যেন ছিল লিটনের বড় অপরাধ। এজন্যই তাকে টার্গেট করা হলো।  

শিশু সৌরভ গুলিবিদ্ধ হওয়া নিয়ে ওই সময় কিছু গণমাধ্যমের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্য লিটন কেন একটি শিশুকে গুলি করবে? শিশু সৌরভের পরিবারও তো আওয়ামী লীগ করত। লিটনকে হত্যার জন্য ওই সময় অ্যামবুশ করে বসেছিল। এটা দেখে লিটন নিজের জীবন বাঁচাতেই ফাঁকা গুলি করে, কিন্তু কেউ সত্য ঘটনাটি লিখল না। তিনি বলেন, সে বারবার বলছিল যেখানেই যাই সেখানেই নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই দিতে হয়, নইলে আমাকে মেরে ফেলা হবে। কিন্তু তার স্ত্রীসহ সবার অস্ত্র সিজ করা হলো। নির্বাচনের কথা বলে পুলিশের নিরাপত্তাও তুলে নেয়া হলো। এই সুযোগেই হত্যাকারীরা বাড়িতে ঢুকে নির্মমভাবে লিটনকে হত্যা করে।  

বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া, সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ড এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তদন্তেই বেরিয়ে এসেছে এসব ঘটনার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোটই জড়িত ছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। লিটন গোলাম আযমকে তার এলাকায় নামতে দেয়নি। এরই যেন প্রতিশোধ নেয়া হলো। যেখানেই আওয়ামী লীগের কেউ শক্ত হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তাদেরই হত্যা করা হচ্ছে।’

সংসদ সদস্যদের প্রবল দাবির মুখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, গোয়েন্দাদের একটি চৌকস দল ছাড়াও পুলিশ বাহিনী খুনিদের ধরতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অবশ্যই হত্যাকারী ও মূল পরিকল্পনাকারীদের ধরে তাদের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচন করা হবে। তিনি বলেন, এমপি লিটন যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে জনগণের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। গোলাম আযমকে তার এলাকায় ঢুকতে দেয়নি, যা তার মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তবে তদন্তেই আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।  

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনের হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত’ উল্লেখ করে বলেন, এটা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। পরিকল্পিতভাবেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। অবশ্যই এ হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন এবং খুনিদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।  

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘অত্যন্ত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত এলাকায় লিটনকে রাজনীতি করতে হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাস-নাশকতার ও চার পুলিশ সদস্য হত্যার বিরুদ্ধে লিটন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিল। এটাই ছিল যেন তার অপরাধ।’ তিনিও দ্রুত খুনিদের গ্রেফতারের দাবি জানান।

 

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে দায়ী করে বলেন, সন্ত্রাস-নাশকতা-সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে গেছেন এমপি লিটন। এই হত্যাকাণ্ডের মূল নায়ক হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জোট ও তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া। এজন্য অবশ্যই তাকে জবাব দিতে হবে। অগণতান্ত্রিক অপশক্তির নেত্রীই হচ্ছেন খালেদা জিয়া।  

ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবেই লিটনকে হত্যা করা হয়েছে। একটি শিশু গুলিবিদ্ধ হওয়া নিয়ে দেশের মিডিয়া লিটনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। শত চেষ্টা করেও লিটনের সিজ করা অস্ত্র ফেরত আনা যায়নি। পেলে হয়তো তাকে এভাবে জীবন দিতে হতো না।  

জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ এমপিদের নিরাপত্তা দাবি করে বলেন, তিনশ জনকে নাকি দেহরক্ষী দিয়ে নিরাপত্তা দেয়া হয়। দেশে তো ৩০০ এমপি নেই। তবে বাকি ভিআইপি কারা তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানাতে হবে। অতীতে যারা এমপিদের হত্যা করেছে, তারা পুরস্কৃত হয়েছে। আগামীতে লিটনের হত্যাকারীরাও পুরস্কৃত হবে কি না জানি না। এই হত্যার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই


 

Wordbridge School
Link copied!