• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

লিটন হত্যায় আতঙ্কে আ.লীগ নেতাকর্মীরা!


গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানুয়ারি ১০, ২০১৭, ০৮:০৫ পিএম
লিটন হত্যায় আতঙ্কে আ.লীগ নেতাকর্মীরা!

গাইবান্ধা: মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যার ঘটনায় সুন্দরগঞ্জের সর্বত্রই এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে! মন খুলে কথা বলতেও ভয় পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যারা কাজ করেন, তাদের ভয় আরো বেশি। দুর্বৃত্তরা যে কোনো সময় যে কারও ওপরই হামলা চালাতে পারে।

গত ৩১ ডিসেম্বর গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যার পর এখন সবার মুখে মুখে একটি কথাই উচ্চারিত হচ্ছে। তা হলো, যেখানে দিনে-দুপুরে স্লোগান দিয়ে পুলিশ হত্যা করা হলো, বাড়ির বৈঠকখানায় ঢুকে একজন এমপিকে মেরে ফেলা হলো, সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? সেইসঙ্গে নয় দিনেও এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের রহস্যের জট না খোলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এমপি লিটন হত্যার পর সুন্দরগঞ্জের সাধারণ মানুষ ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সমর্থকরা রয়েছেন আতঙ্কে! গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময়ও তারা চারদিক তাকিয়ে তারপর কথা বলেন। যেন আশেপাশেই দাঁড়িয়ে আছে কোনো দুর্বৃত্ত। সন্ত্রস্ত জনপদ সুন্দরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই পাওয়া যায়।

সুন্দরগঞ্জের রামজীবন ইউনিয়নের বাজারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা খালেদ রেজা বাবুল বলেন, আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে তারা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। সন্ধ্যার আগেই বাড়িতে ফিরে যান। রাতে কাছের কোনো আপনজন গেলেও পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পরই দরজা-জানালা খোলেন। দিনের বেলায়ও একা কোথাও যেতে ভয় পান। বিশেষ করে এমপি লিটনের মৃত্যুর পর তারা আরো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। প্রকাশ্যেই জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা মোটরসাইকেলে বাড়ির সামনে মহড়া দেয় বলেও জানান তিনি।

সুন্দরগঞ্জের গোপালচরণ গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুছ আলী সরকার বলেন, ‘এমপি লিটনের মৃত্যুতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা চরম আতঙ্কে আছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা থাকায় এখনো তারা কথা বলতে পারছেন। কয়েক মাস গেলে জামায়াত নেতাদের কদমবুসি করে এলাকায় চলতে হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুন্দরগঞ্জ থানা এলাকার একটি পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা বলেন, ‘সুন্দরগঞ্জের তদন্ত কেন্দ্রের নিরস্ত্র চার পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এখনো অনেক পুলিশ সদস্যের মধ্যেই আতঙ্ক রয়েছে। তবে এমন ঘটনা মোকাবিলায় পুলিশ সদস্যরাও এখন আগের চেয়ে অনেক সক্ষম ও সতর্ক রয়েছে।’ 

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘মৃত্যুকে সঙ্গী করে সুন্দরগঞ্জে রাজনীতি করতে হচ্ছে। প্রতিনিয়তই মৃত্যু আতঙ্কে থাকি। একজন এমপি, চারজন পুলিশ সদস্য, একজন ছাত্রনেতা ও কয়েকজন সাধারণ সমর্থককে যেভাবে প্রকাশ্যে হত্যা করা হলো, সেখানে আমরা তো কিছুই নই। এত স্পর্ধা ও হিম্মত সুন্দরগঞ্জে কার আছে, আপনারা সবাই জানেন। এগুলো খতিয়ে দেখতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি সুন্দরগঞ্জের ওসির কাছে জানতে চেয়েছি, ছাত্রলীগ নেতা মামুন হত্যার এজাহারভুক্ত প্রথম সারির আসামিদের এখনো গ্রেফতার করা হলো না কেন?’ গোলাম মোস্তফা জানান, এমপি লিটনকে হত্যাকাণ্ডের নয় দিন পার হওয়ার পরও তদন্তের কোনো অগ্রগতি তাদের কিংবা স্বজন এমনকি গণমাধ্যমকেও জানানো হচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, ‘কেবল স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আহসান হাবিব মাসুদ নন, দলের যাকেই সন্দেহ হয় পুলিশ আটক করুক। তারপরও এমপি লিটনের খুনিদের দ্রুত ধরা হোক।’

গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এমপি লিটন হত্যাকাণ্ড তদন্তের অগ্রগতি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ পর্যন্ত সন্দেহভাজন হিসেবে ৪০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে আটজনকে। আর কদিন অপেক্ষা করেন, এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের সবই জানানো হবে গণমাধ্যমকে।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!