• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লিরার দরপতন, কী ঘটছে তুরস্কে


আন্তর্জাতিক ডেস্ক আগস্ট ১৮, ২০১৮, ০৮:৪৬ পিএম
লিরার দরপতন, কী ঘটছে তুরস্কে

ঢাকা : মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশ তুরস্ক নিকট অতীতে ব্যাপক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। গত বছর দেশটিতে বাজেট উদ্বৃত্ত ছিল ১ হাজার ১৩০ কোটি লিরা। রফতানি করে দেশটি গত ১২ মাসে আগের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি আয় করেছে।

ক্রমাগত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে ডলারের বিপরীতে তুরস্কের মুদ্রা লিরার মান বেড়েছে। এ বছরের এপ্রিলে ৪ লিরায় ১ ডলার পাওয়া গিয়েছে। তবে আমেরিকার সঙ্গে সাম্প্রতিক উত্তেজনায় ডলারের বিপরীতে লিরার মান কমে গিয়েছে। লিরার দরপতনের কারণ ও প্রভাব বুঝতে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর পেতে হবে।

লিরা সংকটের কারণ কী?

তুরস্কের দু’টি পণ্যে আমেরিকার দ্বিগুণ শুল্ক বৃদ্ধি হচ্ছে মূল কারণ। তবে ঘটনার সূত্রপাত তুরস্কে বসবাসরত খ্রিস্টান ধর্মযাজক এন্ড্রু ব্রানসনকে নিয়ে। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে তুরস্কে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান হয়। ওই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় আমেরিকা জড়িত বলে সরাসরি অভিযোগ এনেছিল তুরস্ক সরকার।

অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার অভিযোগে আমেরিকার নাগরিক ব্রেনসনকে দেশটির পুলিশ গ্রেফতার করে। আদালত তার জামিন আবেদন মঞ্জুর না করে জেলহাজতে পাঠায় এবং সর্বশেষ গৃহবন্দির আদেশ দিয়েছে।

আমেরিকার আহ্বান সত্ত্বেও ব্রানসনের জামিন না দেয়ার প্রতিক্রিয়ায় চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে তুরস্কের দুই মন্ত্রীর ওপর অবরোধ আরোপ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সর্বশেষ গত সপ্তাহে তুরস্কের অ্যালোমিনিয়াম ও স্টিলপণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দেন।

প্রেসিডেন্ট এরদোগান আমেরিকার এই পদক্ষেপকে তুরস্কের ওপর আক্রমণ বলে অভিহিত করেন। ট্রাম্পের পদক্ষেপের পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় তুরস্ক সরকারও আমেরিকার গাড়ি, মাদক, তামাক, ইলেকট্রনিকস পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমেরিকার সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ায় লিরার দরপতন ঘটেছে।

তুর্কি মুদ্রা লিরার ক্ষেত্রে কী ঘটেছে?

আমেরিকা ও তুরস্কের একে অন্যের পণ্যের ওপর পাল্টাপাল্টি শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ডলারের বিপরীতে লিরার মান নামতে থাকে। গত সপ্তাহে লিরার রেকর্ড পরিমাণ দরপতন হয়। ৭ দশমিক ২৪ লিরায় ১ ডলার কিনতে হয়েছে।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে তুরস্ক সফর করেন কাতার আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সঙ্গে তিনি বেঠক করেন। বৈঠক শেষে ঘোষণা দেন, কাতার সরকার তুরস্কের শেয়ারবাজার ও ব্যাংক খাতে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে।

কাতার আমিরের এমন ঘোষণার ফলে লিরার দাম আবার বাড়তে থাকে। ১ ডলারের বিপরীতে ৫ দশমিক ৮৪ লিরায় নেমে আসে।

লিরার দরপতনের প্রভাব কী?

তুর্কি জনগণের ওপরে লিরার দরপতনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কারণ ডলারের বিপরীতে লিরার মূল্য কমে যাওয়ায় তুরস্ক যেসব পণ্য আমদানি করে সেগুলোর দাম বেড়ে গেছে।

বাইরের দেশের সঙ্গে কোনো দেশের বাণিজ্য ডলারে করতে হয়। তাই ডলারের বিপরীতে দরপতন হলে আমদানি ব্যয় বেড়ে যায় এবং রফতানি আয় কমে যায়। ফলে দেশে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়।

লিরার দরপতন হওয়ায় তুরস্কে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে ১৫ দশমিক ৬ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া তুরস্কের শেয়ারবাজার শতকরা ১ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। ২০০১ সালে তুরস্কে মুদ্রাস্ফীতি ছিল রেকর্ড ৬৯ শতাংশ। এরদোগান ২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশটির ক্ষমতায় আসেন।

এরদোগানের গত ১৫ বছরের শাসন আমলে দেশটির অর্থনীতির প্রভূত উন্নতি হয়েছে। তবে বর্তমান সংকট এরদোগান কীভাবে মোকাবেলা করেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।

সংকট মোকাবেলায় তুরস্কের পদক্ষেপ : সংকট সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে এরদোগান সরকার তা মোকাবেলায় বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমদানি ব্যয় কমানোর জন্য আমেরিকান পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি করেছে তুরস্ক। এরদোগানের সিদ্ধান্ত স্বাগত জানিয়ে দেশটির অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আমেরিকার সঙ্গে পণ্য কেনা চুক্তি বাতিল করেছে।

এদিকে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি তুরস্ক সফর করে দেশটির শেয়ারবাজার ও ব্যাংকে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই ঘোষণার পরপরই ডলারের বিপরীতে লিরার দাম আবার বেড়ে গেছে।

প্রেসিডেন্ট এরদোগান তুরস্কের জনগণকে ডলার ও ইউরো বিক্রি করে দিতে বলেছেন যাতে লিরার মুদ্রামান ঠিক থাকে। অনেকে আশা করছিলেন মুদ্রাস্ফীতি ঠেকাতে তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়ে দেবে।

তবে মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার সাংবাদিক কোসেগলু ইস্তাম্বুল থেকে বলেছেন, তুরস্কের জন্য এটা অসম্ভব। মুদ্রাস্ফীতি থাকা সত্ত্বেও এরদোগান সরকার কখনো এটা করবে না।

লিরার দরপতনে আন্তর্জাতিক বাজারে কেমন প্রভাব পড়ছে?

লিরার দরপতন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রভাব ফেলেছে। লিরার দরপতনের পরে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির মূল্যও কমে গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার মুদ্রা র‌্যান্ডের দামও পড়ে গিয়েছে।

এছাড়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লিরার দরপতন ডলারের সরবরাহ কমিয়ে দিবে। তুরস্কে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি অন্যান্য বাজারেও এর প্রভাব ফেলবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর

Link copied!