• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লেখক-সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের


মেহেদী হাসান, নিউজরুম এডিটর অক্টোবর ২৩, ২০১৬, ০৭:৫১ পিএম
লেখক-সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের

ঢাকা: ওবায়দুল কাদের শুধু রাজনীতিকই নন, একজন লেখক ও সাংবাদিকও। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বোর্ড স্ট্যান্ড করেছিলেন। ছাত্র থাকাকালীন তিনি জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলন কিংবা গণআন্দোলনে তিনি ছিলেন রাজপথের সৈনিক। এ জন্য তাকে কারাগারেও যেতে হয়েছে একাধিকবার।

কারাগার কিংবা রাজনীতি তাকে কখনই বই থেকে বিচ্যুত করেনি। বরং কারাগারের অন্ধকার তাকে দিয়েছে অন্যরকম আলো। সেখানে বসেও লিখেছেন স্মৃতিকথা। তিনি যেমন করে কথা বলেন কাব্যিক ছন্দে, তেমনি তার লেখাতেও রয়েছে সেই ছোঁয়া। 

দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতাও করে গেছেন। দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসাবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। সেখানেও তিনি লিখেছেন। তার লেখা বই অনেক। তবে সেসব বই নিয়ে কোথাও লেখা বা আলোচনা হয়নি। 

মানুষ তার মধ্যে একজন রাজনীতিককেই খুঁজেছে। লেখক হিসেবে তিনি বই মেলায় গেছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বইয়ের স্টলে সময়ও দিয়েছেন। তিনি যেমন রাজনীতি নিয়ে স্মৃতিকথা লিখেছেন, তেমনি সাধারণ মানুষের জীবনও বিশ্লেষণ করেছেন। তার লেখা উপন্যাসগুলোতে সে অভিজ্ঞতার প্রমাণ রয়েছে।

ওবায়দুল কাদেরের ‘Bangladesh: A Revolution Betrayed’ বইটি প্রকাশ হয়েছিল তার ২৪ বছর বয়সে, ১৯৭৬ সালে। বইটি কলকাতা থেকে প্রকাশ করেছিল মনীষা পাবিলশার্স। তার অন্য বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য - ‘বাংলাদেশের হৃদয় হতে’, ‘পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু’, ‘এই বিজয়ের মুকুট কোথায়’, ‘তিন সমুদ্রের দেশে’, ‘মেঘে মেঘে অনেক বেলা’। এছাড়া তার স্মৃতিকথা ‘কারাগারে লেখা অনুস্মৃতি: যে কথা বলা হয়নি’, ‘জীবনস্মৃতি: সব মনে নেই’। তার ‘রচনাসমগ্র’ ও ‘নির্বাচিত কলাম’ প্রকাশিত হয়েছে বইমেলায়। 

গেল বছর (২০১৫ সাল) একুশে বই মেলায় প্রকাশিত হয়েছে তার উপন্যাস ‘গাঙচিল’। এটি পাঠক মহলে সাড়া ফেলেছিলো। যার ঝাপটা লেগেছিল চলচ্চিত্র পাড়া এফডিসিতেও। সে কারণেই ‘গাঙচিল’ অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। 

জন্ম ও শিক্ষা: ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি ওবায়দুল কাদেরের জন্ম হয় নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে। বাবা মোশারফ হোসেন সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে শুরু করেছিলেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা।

ওবায়দুল কাদের স্থানীয় বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। এরপর নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে মেধা তালিকায় স্থান নিয়ে এইচএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

ছাত্র রাজনীতি: কলেজ জীবন থেকেই রাজনীতি শুরু করেন ওবায়দুল কাদের। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলন ও ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক ছিলেন।

কারাবরণ: রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার কারাবরণ করেন। ১৯৭৫ সালের পর থেকে ওবায়দুল কাদের এক নাগাড়ে আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থাতেই ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি পরপর দুইবার ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

রাজনৈতিক জীবন: ওবায়দুল কাদের ১৯৯৬ সালের ১২ জুন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নোয়াখালী-৫ আসন থেকে নির্বাচিত হন। পরে ২৩ জুন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন। একই দিনে যুব ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রাণালয়ের দায়িত্বও পান। ২০০১ সালের ১৫ জুলাই পর্যন্ত ওই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে।

২০০২ সালের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন থেকে ২০০৯-এর সম্মেলন পর্যন্ত ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১/১১ পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তিনি ২০০৭ সালের ৯ মার্চ জরুরি বিধিতে গ্রেপ্তার হন। এরপর ১৭ মাস ২৬ দিন ছিলেন কারাগারে। ২০০৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্ত হন। কারাগারে থাকাকালে কারাজীবনের বর্ণনা দিয়ে ‘অনুস্মৃতি: যে কথা বলা হয়নি’ স্মৃতিকথা লেখেন। একই বছরের ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো নোয়াখালী-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে নিয়োগ পান।  পরের বছর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন।

২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর বঙ্গভবনে মহাজোটের মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। বর্তমানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। কিছুদিনের জন্য তিনি রেলমন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!