• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শঙ্কা নিয়েই বিএনপিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি


সোনালী বিশেষ ডিসেম্বর ২৫, ২০১৭, ০৩:৩৭ পিএম
শঙ্কা নিয়েই বিএনপিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি

ঢাকা : নতুন বছর সমাগত প্রায়। এই ২০১৮ হবে বাংলাদেশে বহু প্রত্যাশিত নির্বাচনের বছর। নতুন বছর সামনে রেখে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার জন্য দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আন্দোলন, সংগ্রাম ও নির্বাচন- সবকিছুর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

রোববার (২৪ ডিসেম্বর) মুক্তিযোদ্ধা দলের কাউন্সিল ও মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে খালেদা জিয়া এই আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচন হতে পারে না। নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে।

খালেদা জিয়া বলেন, তারা অশান্তি চান না। নির্বাচন করতে চান। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় যেতে চান। মানুষ পরিবর্তন চায় দাবি করে তিনি বলেন, দেশকে আওয়ামী লীগের শৃঙ্খলমুক্ত হতে হবে। এ জন্য আরেকবার জেগে উঠতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অন্য দলগুলোর উদ্দেশে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘আসুন, আপনারা আমরা সমান ভুক্তভোগী। সবাই মিলে একসঙ্গে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করি। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।

আন্দোলনে সফল হওয়ার আশা ব্যক্ত করে বিএনপি নেত্রী বলেন, আমাদের মাধ্যমেই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র এসেছিল, আবারও বিএনপির মাধ্যমে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে পদত্যাগে সরকার বাধ্য করেছে দাবি করে তিনি বলেন, সরকার জুডিশিয়াল ক্যু করেছে। এই জন্য তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। খালেদা জিয়া বলেন, এস কে সিনহার অপরাধ, তিনি সত্য কথা বলেছিলেন, স্বাধীন বিচার বিভাগের জন্য কাজ করেছিলেন।

প্রতিনিয়ত গুম, খুন হচ্ছে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, কেউ সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বললে, জবাবদিহি চাইলে সরকার গুম করছে, মামলা দিয়ে কারাগারে দিচ্ছে। গুম হওয়ার পর যাঁরা ফেরত আসছেন, তারা কোনো কথা বলছেন না। কারণ, তাঁদের বলে দেওয়া হয়েছে ফিরে এসে কিছু বললে পরবর্তী ফল ভালো হবে না।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দুটো দ্রুত সমাপ্তির পথে রয়েছে। দলটির নেতারা বলেছেন, এ দু’টি মামলা এবং এর সম্ভাব্য রায় নিয়ে তারা বিচলিত নন। তারা মনে করেন, মামলার কাগজপত্র, সাক্ষী, তথ্য-প্রমাণ বিবেচনায় নেয়া হলে খালেদা জিয়া বেকসুর খালাস পাবেন। তবে তাদের শঙ্কা অন্যত্র। তারা বলছেন, দলের চেয়ারপারসনকে আগামী নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে এ মামলাকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে পারে সরকার। তবে সেটি করা হলে রাজনীতি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে এমন আভাসও দিয়েছেন তারা।

দলের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এবং সিনিয়র আইনজীবীদের সাথে চেয়ারপারসনের মামলা ও এর ভবিষ্যৎ নিয়ে নানামুখী আলোচনা হয়েছে। এ আলোচনা চলমান রয়েছে। স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে খালেদা জিয়া নিজেই বলেছেন, ‘ভয়ের কিছু নেই। বিএনপিকে চাপে রাখতেই সরকার মামলাকে কাজে লাগাতে চায়।’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে সর্বশেষ দেয়া বক্তব্যে খালেদা জিয়া নিজেও বলেছেন, ‘তিনি বেকসুর খালাস পাওয়ার যোগ্য।’ জানা গেছে, যদি মামলার রায় বিএনপির বিরুদ্ধে যায়, তাহলে রাজনৈতিক লড়াই ও আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই সেটি মোকাবেলা করা হবে। দলটি আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি মামলা দায়ের করা হয় বিগত সেনাসমর্থিত এক-এগারোর সরকারের সময়ে। বাকি ৩৩টি মামলা দায়ের করা হয় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। হত্যা, সহিংসতা, রাষ্ট্রদ্রোহ, দুর্নীতি, আদালত অবমাননাসহ নানা অভিযোগে এসব মামলা করা হয়। ১৭টি মামলায় ইতোমধ্যে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা আরো এগিয়ে রয়েছে। এ মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে। পরবর্তী তারিখ রয়েছে ২৬, ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দু’টি দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের দায়ের করা। মামলার নথি অনুযায়ী ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানও রয়েছেন।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যেহেতু এই দু’টি মামলায় কোনো শক্ত অভিযোগ নেই, যদি সুবিচার হয়, তাহলে আদালত থেকে খালাস পাবেন চেয়ারপারসন।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ মনে করেন, নিরপেক্ষভাবে বিচার করা হলে খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ খালাস পাবেন। তার বিরুদ্ধ কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, দুদক প্রমাণ করতে পারেনি।

সাবেক এই আইনমন্ত্রী আরো বলেন, প্রথমত, সাক্ষী একেকজন একেক কথা বলেছেন।

দ্বিতীয়ত, এই মামলা যে কারণে করা হলো অথচ কোনো কাগজে তার সই নেই, কোনো ব্যাংক চেকে সই নেই।

তৃতীয়ত, বিএনপি চেয়ারপারসন এই ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য নন, ট্রাস্টের সাথে সংশ্লিষ্টতা নেই, কোনো সম্পর্ক নেই। একটি ট্রাস্ট পরিচালনার জন্য যে লোকজন থাকে, তিনি সেখানেও নেই। এমনকি আদালতে তার সংশ্লিষ্টতা দেখাতে পারেনি। তাহলে প্রাক ধারণার ওপরে কিভাবে সাজা হয়?

জানা গেছে, মামলার আইনগত নানাদিক সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করেছেন দলের আইনজীবীরা। সেভাবেই তারা প্রতিটি শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন। অন্য দিকে মামলার সম্ভাব্য রায় নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা নিয়ে দলটি এ মুহূর্তে তেমন কিছুই ভাবছে না। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা বলেছেন, ‘বৃহত্তম একটি দলের চেয়ারপারসনকে সাজা দেয়া হবে, আর সবকিছু স্বাভাবিক থাকবে তাতো হতে পারে না।’

এ দুটো মামলা সম্পর্কে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, মামলার বিচার যদি আইনের স্বাভাবিক গতিতে যায়, মামলার কাগজপত্র পড়ে যা দেখলাম, তাতে তার জেল হওয়ার কারণ নেই। তবে সেটি সম্পূর্ণরূপে আদালতের ওপর নির্ভর করছে। আমার বিশ্বাস খালেদা জিয়া দু’টি মামলাতেই খালাস পাবেন।

‘আদালতে খালেদা জিয়ার সাজা হলে কী হবে’- এমন প্রশ্নের উত্তরে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, এখন পর্যন্ত আইন যা আছে, তাতে আপিল করলে জামিন পাবেন এবং জামিন পেলেই তিনি নির্বাচন করতে পারবেন। যুক্তিতর্ক ও ফ্যাক্টসের দিক থেকে তিনি বলেন, আপিলটা ট্রায়াল কোর্টের কন্টিনিউয়েশন। আপিল কোর্টে যা হবে, সেটাই ফাইনাল। যতণ না ফাইনাল হচ্ছে, ততণ পর্যন্ত আপনার জেল হয়নি। জেল হিসেবে কাউন্ট হবে জাজমেন্টের পর।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!