• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

শব্দদূষণে শ্রবণশক্তি হারাচ্ছে ঢাকাবাসী


নিজস্ব প্রতিবদক জানুয়ারি ২৩, ২০১৮, ০২:৪১ পিএম
শব্দদূষণে শ্রবণশক্তি হারাচ্ছে ঢাকাবাসী

ঢাকা : শব্দদূষণের কারণে ক্রমেই শ্রবণশক্তি হারাচ্ছে রাজধানীবাসী। এক গবেষণায় দেখা গেছে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ঢাকার মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ কানে কম শুনবে।

জার্মানিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু ঢাকাতেই নয়, দেশের সর্বত্রই শব্দদূষণের আইন লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। ঢাকা শহরে শব্দদূষণের প্রধান কারণ যানবাহন ও এর হর্নের অতিরিক্ত শব্দ। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জনসমাগমস্থানে (পাবলিক প্লেস) উচ্চস্বরে মাইক বাজানো হয়।

এছাড়া ওয়াজ-মাহফিল, কীর্তন ইত্যাদিতে মাইক বাজানো ও বিয়ে বা নানা অনুষ্ঠানে উচ্চস্বরে গান বাজানো শব্দদূষণের অন্যতম কারণ।

বেসরকারি সংস্থা ‘ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’ ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের শব্দ পরিমাপ করে। এতে দেখা যায়, ওই জায়গাগুলোতে নির্ধারিত মানদণ্ডের চেয়ে গড়ে প্রায় দেড়গুণ বেশি শব্দের সৃষ্টি হয়। জরিপে দেখা গেছে, উত্তরার শাহজালাল অ্যাভিনিউতে শব্দমাত্রা সর্বোচ্চ ৯৩ দশমিক ৫ ডেসিবেল, মিরপুর-১-এ সর্বোচ্চ ৯৬ ডেসিবেল, পল­বীতে সর্বোচ্চ ৯১ দশমিক ৫ ডেসিবেল, ধানমন্ডি বালক বিদ্যালয়ের সামনে সর্বোচ্চ ১০৭ দশমিক ১, ধানমন্ডি ৫ নম্বর সড়কে সর্বোচ্চ ৯৫ দশমিক ৫, নিউমার্কেটের সামনে সর্বোচ্চ ১০৪ দশমিক ১, শাহবাগে সর্বোচ্চ ৯৭ দশমিক ৩ এবং সচিবালয়ের সামনে সর্বোচ্চ ৮৮ ডেসিবেল।

সংস্থাটির প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে এলাকাভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য শব্দের মাত্রার পাঁচটি ভাগ আছে। সেই হিসাবে শব্দের গ্রহণযোগ্য মাত্রা হলো ৪০ থেকে ৭০ ডেসিবেল। আমরা পরীক্ষায় দেখেছি, কোথাও কোথাও শব্দের মাত্রা গ্রহণযোগ্য মাত্রার তিনগুণেরও বেশি।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকায় সাধারণভাবে যানবাহন ও হর্নের শব্দই শব্দদূষণের মূল কারণ। তবে এর বাইরে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উচ্চশব্দে মাইক বা সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার আর একটি বড় কারণ। যদি আমরা ইনডোর শব্দদূষণের দিকটি বিবেচনায় নিই তাহলে টাইলস লাগানো, মিউজিক সিস্টেমে জোরে গান বাজানো, ড্রিলিং এগুলোর শব্দ রয়েছে।’

উচ্চমাত্রার শব্দের কারণে মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস, বধিরতা, হৃদরোগ, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, আলসার, বিরক্তি সৃষ্টি হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশু এবং বয়স্করা। এমনকি গর্ভে থাকা সন্তানও শব্দদূষণে ক্ষতির শিকার হয়। তাদের শ্রবণশক্তি খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।

স্যার সলিমুল­াহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের প্রধান ডা. মনিলাল আইচ লিটু বলেন, ‘এক গবেষণায় দেখা গেছে, এইভাবে শব্দদূষণ অব্যাহত থাকলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ কানে কম শুনবে।’

তিনি বলেন, ‘বয়স্ক এবং অসুস্থরা এই শব্দদূষণের বড় শিকার। এছাড়া শব্দদূষণের ফলে সড়কে দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। কারণ শব্দদূষণে মেজাজ খিটখিটে হয়, মনোযোগ নষ্ট হয়। শব্দের সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৬০ ডেসিবেল, সেখানে ঢাকা শহরের বেশিরভাগ এলাকায় এখন শব্দের সার্বক্ষণিক গড় মাত্রা ১০০ ডেসিবেল।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, আবাসিক এলাকায় শব্দের মাত্রা দিনের বেলা ৫৫ ডেসিবেল, রাতে ৪৫ ডেসিবেল হওয়া উচিত। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৬৫ ডেসিবেল, রাতে ৫৫ ডেসিবেল; শিল্পাঞ্চলে দিনে ৭৫ ডেসিবেল, রাতে ৬৫ ডেসিবেলের মধ্যে শব্দমাত্রা থাকতে হবে। আর হাসপাতালে বা নীরব এলাকায় দিনে ৫০, রাতে ৪০ ডেসিবেল শব্দমাত্রা থাকা উচিত।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ক্ষমতাবলে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ প্রণয়ন করা হয়। বিধিমালার আওতায় নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এই আইনের তেমন প্রয়োগ দেখা যায় না।

মারুফ হাসান বলেন, ‘আইনে ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ আরো কিছু বিষয়ে ব্যতিক্রম আছে। তবে সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টা এবং রাত ১০টার পর কোনোভাবেই উচ্চশব্দের কোনো অনুষ্ঠান করা যাবে না। পুলিশের স্বপ্রণোদিত হয়ে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার আছে। আর পাবলিক প্লেসে অনুষ্ঠানের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আগাম অনুমতি নেওয়ার বিধান রয়েছে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!