• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শরবতের নামে কী পান করছে গোপালগঞ্জবাসী?


এম আরমান খান জয়, গোপালগঞ্জ এপ্রিল ৭, ২০১৮, ০৫:১৭ পিএম
শরবতের নামে কী পান করছে গোপালগঞ্জবাসী?

গোপালগঞ্জ : বাইরে যখন তীব্র গরম, তখন দেহের ভেতরেও তৈরি হয় বাড়তি তাপ। সব মিলিয়ে গরমে মানুষের ভোগান্তি পৌঁছায় চরমে। ক্লান্তি, ঘুমের সমস্যা, কাজে অমনোযোগ- কী নেই সে তালিকায়!

এ সময় প্রচুর ঘামের কারণে একটু ক্লান্তি, একটু অলসতা মানুষকে কাবু করে দেয়। এ জন্য প্রকৃতি যখন অগ্নি ঝরায় তখন আপনি তৃষ্ণা নিবারণের জন্য ছুটে যাচ্ছেন ফুটপাতের কোনো ভাসমান শরবতের দোকানে। সময় বাঁচাতে অনেকেই রাস্তার পাশে বিক্রি হওয়া নানা রকমের পানীয়, আঁখের রস, বেলের শরবত পান করেন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অপরিষ্কার পানিতে গ্লাস ধোয়া, এক গ্লাসে অনেকজন মুখ লাগিয়ে পান করার ফলে জীবাণু বেড়ে উঠার নিরাপদ স্থান এগুলো। এর মাধ্যমে নানা রকম অসুখ মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

কি পান করছেন আপনি সেসব ভাসমান দোকানে? গ্লাসে চুমুক দেয়ার আগে একটু ভেবেছেন কী?

শরবতে এমন সব লোভনীয় ফল মূল একসঙ্গে পাচ্ছেন যা দেখলেই পান করতে মন চাইবে যে কারো। কাগজি লেবু, তেঁতুল, বেল, কমলা, আপেল, খেজুর, ভেষজ উপাদান ইসবগুল, ঘৃতকুমারী (অ্যালোভেরা) তোকমা প্রভৃতি দিয়ে শরবত তৈরি করছে ফুটপাতে দাঁড়ানো লোকটি।

গোপালগঞ্জের লঞ্চঘাট ব্রিজে শরবত বিক্রি করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাই। ৮ম শ্রেণি পাস করার পর পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে আর পড়ালেখার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। পরিবারের হাল ধরতে এক মুরুব্বীর পরামর্শে শরবত বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। এখন ভালোই চলছে তার পরিবার।

গোপালগঞ্জের এই ভাইয়ের মতো আরও অনেক বেকার যুবক শহরের পার্ক, বাসস্ট্যান্ডসহ জনবহুল স্থানে শরবত বিক্রির মাধ্যমে তাদের পরিবারের হাল ধরেছেন ঠিকই। কিন্তু এই শরবত তৈরিতে তারা কি স্বাস্থ্য সম্মত পানীয় পরিবেশন করছেন? একটু দৃষ্টি দিলেই আড়ালে নয়।

এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় শহরের রিকশাচালক শিহাবের সঙ্গে। শিহাব সাহেব আপনি কি জানেন এই শরবত কি কি উপাদানে তৈরি? ‘ভাই গরমে খাই ভালো লাগে, অনেক জিনিস একসঙ্গে দামও কম, লোকজন খায় আমিও খাই’।
এই শরবত বিক্রি করে কিছু লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে; আর শিহাবের মতো সাধারণ কর্মচারী বা সাধারণ লোকের তৃষ্ণাও নিবারণ হচ্ছে।

এসব শরবতের প্রধান উপাদান নির্ভেজাল খোলা পানি, সঙ্গে থাকে বরফের টুকরো যা ক্ষয়ে ক্ষয়ে পানির সঙ্গে মিশে তৈরি হয় শীতল পানীয়ে। বরফ তৈরি হচ্ছে খোলা পানি দিয়ে। যা মাছ-মাংস সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়। আর শরবতকে রসাত্মক করে তোলার জন্য চিনির পরিবর্তে ব্যবহার হয় ছ্যাকারিন, অপরিষ্কার পাত্র, রাস্তার ধুলাবালি তো আছেই।

তৃষ্ণা মেটানোর শরবতে ব্যবহৃত বরফ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বরাবর। কেউ দাবি করছে শরবতে ব্যবহৃত বরফগুলো মাছের জন্য প্রযোজ্য। আবার কেউ বলছে শরবতে মাছের বরফ নয়। মর্গে ব্যবহৃত বরফ শরবতে ব্যবহার হচ্ছে। প্রাণ জুড়ানে শরবত যে বরফ ব্যবহার হচ্ছে সেটি কি আধও পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত পানি দিয়ে বানানো?

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরফ কারখানার এক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা মাছে ব্যবহারের জন্য এই বরফ তৈরি করি। তাই সরাসরি পুকুর বা অপরিচ্ছন্ন পানি দিলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমাদের কাছ থেকে যারা কিনছে, তারা যদি এসব বরফ পানীয় তৈরিতে ব্যবহার করে, তাহলে আমাদের দোষ কোথায়?

এ মুহূর্তে গরমের তাপদাহে অতীষ্ঠ হয়ে তৃষ্ণা নিবারণে খোলা শরবত খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। ফলে অফিসে কাজের ব্যস্ততার মাঝে তৃষ্ণা মিটানোর চেয়ে কর্মকামাইয়ের পরিমাণটা নেহায়েৎ বাড়ছে।

এতে করে নিজের অজান্তে বহু রোগের জীবাণু প্রতিনিয়তই নিজের শরীরে অবাধে ঢুকার ব্যবস্থা করছে সাধারণ মানুষ। যা প্রাথমিক পর্যায়ে জানতে না পারলেও ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, কলেরা ও হেপাটাইটিস ‘এ’ এবং ‘ই’র মতো রোগগুলো বহন করছে পরবর্তীতে।

চিকিৎসকরা মনে করছেন- এসব অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় পানীয় খেলে কমে যেতে পারে আপনার শুক্রাণুর পরিমাণ৷ কারণ কোনো খাবারে সুগারের পরিমাণ বেশি থাকলে, সে খাবার খেলে পুরুষদের শুক্রাণুর পরিমাণ হ্রাস পেতে পারে।

পরিশেষে, কোনো পানীয় পানের আগে এসবের গুণগত মান, বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া দরকার। এসব পরিহার করে সার্বক্ষণিক হাতের নাগালে পানির বোতল রেখে পানি পানের চাহিদা পূরণ করে সুন্দর, সুস্থ থাকার অভ্যাস গড়ে তুলুন, সুস্থ-সুন্দর থাকুন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!