ঢাকা: আজ হলো সরকারি শেষ কার্যদিবস। ঈদের আগে আর কোনো অফিস নেই। সরকারি অফিসের সঙ্গে মিল বেসরকারি অফিসেও ছুটি শুরু। তাই কোনোমতে অফিসের কাজ গুটিয়েই বাড়ির দিকে পা ছুটিয়েছে সবাই। পরিবারের সদস্যদের আগেই বলে রাখা হয়েছে কোথায় মিলিত হবে। আর ব্যাচলরদের কাধেঁ ব্যাগ থাকলেই হয়। এভাবে দিনশেষে নগর মানুষের ঢল এখন টার্মিনাল, স্টেশন ও সদরঘাটে। গ্রামে মানুষ গেলেও মনে হচ্ছে, মানুষ নয় শহর চলে যাচ্ছে গ্রামে।
শুক্রবারের (২৩ জুন) আগ থেকেই রাজধানীর তিনটি আন্তঃনগর বাস টার্মিনাল, কমলাপুর রেল স্টেশনে ও সদরঘাটে মানুষের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। আজ সন্ধ্যায় এ ভিড় আরো বেড়েছে। চারিদিকে শুধু ঘরমুখি মানুষ। যেনো মানুষের মিছিল। এবার ঈদের সরকারি ছুটি ২৫ থেকে ২৭ জুন অর্থাৎ রোববার থেকে মঙ্গলবার। তার আগে দুদিন শুক্র আর শনিবার থাকায় কার্যত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই শুরু হয়েছে ঈদযাত্রা।
বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা সেতুতে যানজট দেখা গেলেও শুক্রবার ভোরে কমে এসেছিল। কিন্তু সকালে সেতুতে একটি ট্রাক বিকল হওয়ায় ফের লেগেছে জট। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি শেখ শরীফুল হাসান। তিনি জানান, মেঘনা ব্রিজের গোড়ায় এখন কমে হাফ কিলোমিটারের মতো জ্যাম আছে। এটাও কমে যাবে আশা করছি। আস্তে আস্তে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
মাওয়া মহাসড়কেও তেমন যানজট নেই বলে সায়েদাবাদ থেকে বরিশাল-খুলনা অঞ্চলগামী বাসগুলোর কাউন্টারকর্মীরা জানিয়েছেন। উত্তরের পথে টাঙ্গাইলে মহাসড়কে গাড়িগুলোর গতি ধীর হওয়া ছাড়া আর তেমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। একইচিত্র মহাখালী থেকে ময়মনসিংহগামী বাসের ক্ষেত্রেও।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বিভিন্ন রুটের যানবাহনের ভিড় থাকলেও সকালে নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় তেমন যানজট দেখা যায়নি। মহাসড়কে ট্রাক, কভার্ড ভ্যান বন্ধ রাখার সরকারি সিদ্ধান্ত থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। সকালে ঢাকা বাইপাস সড়কে প্রচুর ট্রাক-কভার্ড ভ্যান চলতে দেখা গেছে।
সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনালে ভিড় বেড়েছে মূলত বাড়বে দুপুরের পর। দক্ষিণাঞ্চলগামী লঞ্চগুলো দুপুরের পর থেকে ঘাট ছাড়তে শুরু করেছে। টার্মিনালগুলো থেকে সকালে ঠিক সময়ে বাস ছেড়ে গেলেও রাস্তার যানজটের আশঙ্কা নিয়েই রওনা হয়েছেন যাত্রীরা। গাবতলীর কয়েকজন কাউন্টার ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সকাল ৯টা পর্যন্ত তারা নির্ধারিত সময়ে বাসগুলো ছাড়তে পেরেছেন। তবে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলাচলে ধীরগতির কারণে পরে সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিকেল পর্যন্ত যমুনা ব্রিজ থেকে এদিকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত যানজট ছিল। রাস্তার যে যানজট সেটাকে স্বাভাবিক হিসাবে দেখছেন শ্যামলী পরিবহনের কল্যাণপুর কাউন্টারের ব্যবস্থাপক সেলিম শিকদার।
শ্যামলীর এই কাউন্টার থেকে নওগাঁ, গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, পাবনা রুটের গাড়ি ছাড়ে। গাবতলী ও কল্যাণপুরের কাউন্টারগুলোতে দেখা যায়, অগ্রিম টিকেটের যাত্রীরা সকাল থেকে ঠিক সময়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা করতে পেরেছেন। তবে অন্য কাউন্টারগুলোর সামনে ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা গেছে অনেক।
ট্রেনের ছাদেও মানুষ
মঙ্গলবার সময়সূচি এলোমেলো হয়ে গেলেও পরদিনই সামলে ওঠেছিল রেলওয়ে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেও কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ট্রেনগুলো মোটামুটি সময় ধরে ছাড়ছে। যাত্রী সংখ্যা বেশি হওয়ায় নিয়ম ভেঙে প্রায় সব ট্রেনের ছাদেই মানুষকে চড়তে দেখা গেছে। কমলাপুর রেলস্টেশনের আনসার কমান্ডার ইয়ার হোসেন বলেন, ট্রেনগুলো সময়সূচি অনুসারেই ছেড়ে যাচ্ছে। তবে গত দুই দিনের চেয়ে আজ যাত্রীদের অনেক বেশি ভিড়। সূত্র মতে, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ২৫টি ট্রেনের মধ্যে মাত্র দুটি দেরিতে ছেড়েছে। এর মধ্যে লালমনি এক্সপ্রেস অন্যতম।
অপরিদিকে সদরঘাটে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে পুলিশ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানান কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. মওদুদ হাওলাদার। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের ২৩৬ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন সদরঘাটে। এছাড়া নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, র্যাব সদস্যের সঙ্গে বিএনসিসির স্বেচ্ছাসেবকরাও রয়েছে। এ ছাড়াও ঘাটের সার্বিক বিষয়ে নজর রাখতে সিসি ক্যামেরা বসিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।
সোনালীনিউজ/ঢাকা/তালেব
আপনার মতামত লিখুন :