• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শহীদ মিনারে কাজী আরিফকে ফুলেল শ্রদ্ধা


সাহিত্য-সংস্কৃতি প্রতিবেদক মে ২, ২০১৭, ০৯:১৭ পিএম
শহীদ মিনারে কাজী আরিফকে ফুলেল শ্রদ্ধা

ঢাকা: স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যে দ্রোহী কণ্ঠস্বরটি প্রকম্পিত করতো রাজপথ থেকে শহীদ মিনার প্রাঙ্গন, সেই শহীদ মিনারেই রাষ্ট্রীয় মর্যাদা আর মানুষের ফুলেল ভালোবাসায় সিক্ত হলেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের চেনামুখ আবৃত্তিশিল্পী মুক্তিযোদ্ধা ও স্থপতি কাজী আরিফ। এ সময় মরদেহের সঙ্গে ছিলেন তার বাবা কাজী আজিজুল ইসলাম, মেয়ে অন্তরা বিনতে আরিফ, অনুসূয়া বিনতে আরিফ ও ছেলে তেপান্তর আরিফ।

মঙ্গলবার (২ মে) সকালে কাজী আরিফের মরদেহ দেশে পৌঁছানোর পর বিমানবন্দর থেকে সরাসরি নেয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। পৌনে ১২টার দিকে জাতীয় পতাকায় মোড়ানো কফিন আসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এরপরই তাকে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট রবীন্দ্র চাকমার নেতৃত্বে গার্ড অব অনার দিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি। শ্রদ্ধা জানান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, আফরাফুল আলম, লিয়াকত আলী লাকী, রোকেয়া প্রাচী, গোলাম কুদ্দুছ, হাসান আরিফসহ রাজনীতি, সংস্কৃতি ও স্থাপত্য শিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্বরা শ্রদ্ধা জানান কাজী আরিফের মরদেহে। 

এরপরই সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় নাগরিক শ্রদ্ধা নিবেদন। এ সময় কাজী আরিফের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবিতা পরিষদ, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, কণ্ঠশীলন, মহিলা আওয়ামী লীগ, মহিলা পরিষদ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, উদীচী, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, কথা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র, বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ, কণ্ঠশীলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ, ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশন, প্রাচ্যনাট, বুয়েট এলামনাই, হরবোলা, পদাতিক নাট্য সংসদ। 

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বাংলাদেশের আবৃত্তিচর্চাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কাজী আরিফ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিশেষ করে নিয়মিত আবৃত্তিচর্চাকে তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তার যে অবদান সেটা ভুলবার নয়। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক আন্দোলনে যুক্ত থেকে তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে অত্যন্ত সচেতন ভূমিকা পালন করেছিলেন।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, কাজী আরিফ এবং আমি একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বুয়েট) ছাত্র ছিলাম। নিপাট ভদ্র এক ছাত্র ছিলেন আরিফ। তিনি প্রগতিশীল ধারার রাজনীতির মানুষ ছিলেন কাজী আরিফ।

কাজী আরিফের মেয়ে অন্তরা বিনতে আরিফ জানান, মঙ্গলবার বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে তার ধানমন্ডির বাসায়। বাসাতেই ফ্রিজিং ভ্যানে রাখা হবে মরদেহ। তাদের আরেক বোন আনুশকা বিনতে আরিফ দেশের বাইরে থেকে ফিরবেন মঙ্গলবার রাতে। তারপর বিকেল ৩টায় মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

কাজী আরিফের বাবা কাজী আজিজুল ইসলাম বলেন, আমি আমার ছেলের পরিচয়ে পরিচিত ছিলাম। সেই ছেলে আমার হারিয়ে গেছে। সে মানুষের ভালোবাসা পেয়েছে, তার জন্য আমিও মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি।

নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে এক গভীর বিশ্বাসের জায়গা থেকে ধারণ করতেন কাজী আরিফ। কবিতার মতো ব্যক্তিশিল্পকে তিনি সমষ্টিগত শিল্পে পরিণত করেছিলেন। 

গার্ড অব অনার

 সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ বলেন, আবৃত্তিকে অস্ত্র হিসেবে নিয়ে তিনি এক নতুন মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তিনি এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থান তৈরি করেছিলেন। আবৃত্তি শিল্পের বিকাশে তিনি তৈরি করেছিলেন এক নতুন সম্ভাবনা।

শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বে এসে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা বললেন, আবৃত্তিকে শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখা কাজী আরিফ স্মরণে তারা মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় পদকের দাবি জানান।

২৯ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কাজী আরিফ। ৬৫ বছর বয়সী এই স্থপতি হৃৎযন্ত্রের নানা জটিলতা ভুগেছিলেন।

কাজী আরিফের জন্ম ১৯৫২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর রাজবাড়ি জেলা সদরের কাজীকান্দা গ্রামে। বড় হয়েছেন চট্টগ্রামে। বাবা কাজী আজিজুল ইসলাম পাকিস্তান ইউনাইটেড ব্যাংকে চাকরি করতেন। মা কাজী নিন্নি ইসলাম। ৬ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। স্কুল-কলেজ জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তারপর ভর্তি হয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে পদচারণা কলেজ জীবন থেকে।

সোনালীনিউজ/এন

Wordbridge School
Link copied!