• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

‘শাকিব-অপুর এখনই ডিভোর্স হওয়া উচিত’


বাবুল হৃদয় নভেম্বর ১৭, ২০১৭, ০৫:২২ পিএম
‘শাকিব-অপুর এখনই ডিভোর্স  হওয়া উচিত’

আয়নায় চেহারা দেখে ভাবলাম আমার দ্বারা হিরো হবে না। ভিলেন হলে চলে। সে ভাবনায় চলচ্চিত্রে আত্নপ্রকাশ ঘটে ভিলেন হিসেবে। বলছিলেন, ৫০০ সিনেমার সফল অভিনেতা সিরাজ হায়দার। চলচ্চিত্রের শক্তিমান এই অভিনেতা সম্প্রতি এসেছিলেন সোনালীনিউজ ডটকম কার্যালয়ে। জম্পেশ আড্ডায় চলচ্চিত্রের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি। সিরাজ হায়দারের সঙ্গে কথা বলে তার বর্নাঢ্য চলচ্চিত্র জীবন পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন সোনালীনিউজ ডটকমের বিনোদন ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান বাবুল হৃদয়

চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলেন?

সিরাজ হায়দার: চলচ্চিত্র এখন আর চলচ্চিত্রের মানুষের হাতে নেই। তারা লোকশানের ভয়ে সিনেমা বানাচ্ছে না। ফলে চলচ্চিত্র এখন মিডিয়ার মানুষের হাতে। মিডিয়ার লোকেরা চলচ্চিত্রের ভাষা বোঝেন না। তারা নানা উপায়ে দেশি-বিদেশী প্রডিউসার ম্যানেজ করেন। ৩/৪ কোটি টাকা দিয়ে একটি সিনেমা বানান। দেখা যায় কিছু টাকা ফেরত দেওয়ার পর আর লাভ ফিরে পান না। তখন তারা চলচ্চিত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এটা চলচ্চিত্রের জন্য খুব অশনি সংকেত। যা-ও দু’একটি ছবি ভালো হচ্ছে, তাও হলের পরিবেশের কারণে দর্শক ছবি দেখছেন না। ফলে দিনদিন আমাদের চলচ্চিত্র ধংসের দিকে যাচ্ছে।

সোনালীনিউজ কার্যালয়ে সিরাজ হায়দারের আড্ডা 

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কী?

সিরাজ হায়দার: জেলায় অন্তত দুটি করে ভালো হল নির্মাণ করতে হবে। যেখানে মা বোনেরা ছবি দেখার পরিবেশ পাবেন। সাহিত্য ও পারিবারিক গল্পের সিনেমা বানাতে হবে। মহিলা দর্শক হলে ফেরাতে হবে, তবেই আমাদের চলচ্চিত্র আবার ঘুরে দাঁড়াবে।

সম্প্রতি চলচ্চিত্রের মানুষগুলো দুটি ভাগ হয়ে গেছে, বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?

সিরাজ হায়দার: এটা চলচ্চিত্রের জন্য বেদনাদায়ক, পাশাপাশি আরেকটি অশনি সংকেত। কাজের চেয়ে দলাদলি বেশি হচ্ছে। এতে সিনেমার সর্বনাশ হবে। সবাইকে এক ছাতার নিচে থেকে কাজ করতে হবে।

সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস সম্পর্কে কিছু বলেন?

সিরাজ হায়দার: শাকিব-অপুর বিচ্ছেদের যে আলোচনা এখন চলছে এটা অপুর চেয়ে শাকিবের ক্যারিয়ারে ধকল পড়বে বেশি। আমার মনে হচ্ছে- অপুর সঙ্গে শাকিবের সম্পর্ক দির্ঘস্থায়ী করা ঠিক হবে না। এখনই তাদের ডিভোর্স হওয়া উচিত। শাকিব এখন সুপারস্টার। তাকে চলচ্চিত্রকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে হবে। চলচ্চিত্রের স্বার্থে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমাধানে আসা উচিত।

অভিনেতা সিরাজ হায়দার

রঙ্গময় জীবনে এলেন কিভাবে?

সিরাজ হায়দার: ঘরের পাশেই ছিল সিনেমা হল। মায়ের সঙ্গে সেখানে সিনেমা দেখতাম। সেখান থেকেই অভিনয়ের পোকাটা মাথায় ঢুকে। স্কুল জীবনে থিয়েটার করতাম। ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় দিবসে টিপু সুলতান নাটকে ‘করিম শাহ’ নামে ভিলেন চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনয়ে পথচলা শুরু। এ নাটকে বাহবা পেয়েই অভিনয়ে নেশা পেয়ে বসে। এরপর রেডিও, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রের কাজে নামি। মঞ্চে অসংখ্য নাটকে কাজ করেছি। আমাদের একটি নাট্যগোষ্ঠী ছিল। নাম উর্মি নাট্য গোষ্টী। এখান থেকে ‘রঙ্গনা’, বিয়ের আগে রক্ত পরিক্ষা’, ‘বেয়াদবি মাফ করবেন’, ইতর আলীর দেশপ্রেম ও স্বপ্ন ভাঙ্গা মানুষসহ অসংখ্য নাটক মঞ্চস্ত করেছি। 

প্রখ্যাত অভিনেতা রাজীব, দিলদার, রোজিনা, জোলিয়া, বাবুল আহদে, সাদেক বাচ্চু, কমল সরকার এখানে থেকেই বেরিয়েছে। আরও একটি সুখের খবর আমরাই প্রথম মঞ্চ শিল্পীকে পারিশ্রমিক দেওয়ার রেওয়াজ তৈরি করেছি। এখন মঞ্চ শিল্পীদের কিছুটা হলেও পারিশ্রমিক দেওয়া হয়।

আপনার অভিনীত প্রথম সিনেমা কোনটি?

সিরাজ হায়দার: ‘আদম বেপারি’ আমার অভিনীত প্রথম ছবি। সিনেমায় শিল্পী ছিলেন- সোহেল রানা,  ইলিয়াস কাঞ্চন, রহমান, এটিএম শামসুজ্জামন, দোয়েল, অঞ্জনা ও রওশন জামিলসহ অনেকে। এ ছবির প্রধান ভিলেন ছিলাম আমি। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় ছবিটি অজানা কারণে আজও আলোর মুখ দেখেনি। আমার অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম সিনেমা যদি বলেন সেটা  ‘সুখের সংসার’। ছবিটি সুপার হিট হয়েছে। এরপর তো নিয়মিত অভিনয় করতে থাকি।

ভিলেন হওয়ার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন?

সিরাজ হায়দার: হিরো চরিত্র করা সহজ। ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করা অনেক কঠিন। এখানে এক্সপ্রেশনের কাজ বেশি। জাত শিল্পী না হলে ভিলেন হওয়া কঠিন।

এ পর্যন্ত অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন। উল্লেখযোগ্য সিনেমার কথা মনে আছে?

সিরাজ হায়দার: চার দশকে অ্যাকশন, রোমান্টিক, পারিবারিক সিনেমা মিলিয়ে ৫০০শর বেশি ছবিতে অভিনয় করেছি। ‘সুখের সংসার’সহ অনেক সিনেমার কথাই এখনো মনে পড়ে, যা উল্লেখযোগ্য।  যেমন- ‘অংশীদার’, ‘হাজার বছর ধরে’, ‘পাগল মন’, ‘মুখোমুখি’, ‘জোড়’, ‘প্রেম সংঘাত’, প্রাণের চেয়ে প্রিয়’, বাস্তব, ‘রুস্তুম’ ‘খবর আছে’ প্রভৃতি।

প্রায় ছবিতে আপনাকে পুলিশ অফিসার হিসেবে দেখা গেছে। কারণ বলবেন?

সিরাজ হায়দার: আমার উচ্চতা, এক্সপ্রেশন, বাচনভঙ্গি, পুলিশের সঙ্গে যায়। তাই ভালো-মন্দ দুই পুলিশ চরিত্রে আমাকে টেনেছে পরিচালকরা। এ পর্যন্ত মনে হয় প্রায় দেড়শ সিনেমায় পুলিশ হয়েছি। অনেক দর্শক এখনো মনে করে আমি পুলিশে চাকরি করি।

আপনার জন্ম ও শৈশব কেটেছে কোথায়?

সিরাজ হায়দার: আমার জন্ম ১৯৪৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরে মামা বাড়িতে। তবে আমার নিজের বাড়ি বিক্ররপুরের মুন্সিগঞ্জের দরগাও। বাবা সরকারি চাকরির সুবাদে বিভিন্ন জেলায় বড় হয়েছি।


সোনালীনিউজ/বিএইচ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!