• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শাকিবের ‘চালবাজ’ নিয়ে দুই বাংলায় চালবাজি!


বিনোদন প্রতিবেদক এপ্রিল ৮, ২০১৮, ০৩:৪৪ পিএম
শাকিবের ‘চালবাজ’ নিয়ে দুই বাংলায় চালবাজি!

চালবাজ সিনেমার একটি দৃশ্যে শাকিব খান

ঢাকা: সুপারস্টার শাকিব খান অভিনীত আলোচিত সিনেমা ‘চালবাজ’ নিয়ে দুই বাংলায় চলছে চালবাজি! সিনেমাটি কলকাতায় মুক্তি পেলেও মুক্তি পাচ্ছে না বাংলাদেশে। এ নিয়ে হতাশ দর্শক আর সিনেমা হল মালিকরা। গত এক যুগ ধরে শাকিব অভিনীত ছবির জন্য তীর্থের কাকের মতো প্রতীক্ষার প্রহর গুনেন সিনেমা হল মালিক আর দর্শক। কারণ একটাই, তার ছবি বেশি ব্যবসা সফল হয়। কথা ছিল ৬ এপ্রিল মুক্তি পাবে শাকিব খান অভিনীত কলকাতার ছবি ‘চালবাজ’।

ঢাকার এন ইউ ট্রেডার্সের পক্ষে কামাল কিবরিয়া লিপু সরকারের রপ্তানির বিনিময়ে আমদানির অধীনে ছবিটি আনতে যাচ্ছিলেন। ‘চালবাজ’ সিনেমাটি আমদানির জন্য ৮ মার্চ তথ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন তিনি। দীর্ঘ সময় পার করে ২১ মার্চ অতিরিক্ত তথ্য সচিব ছবির আমদানি-রপ্তানি কমিটির সদস্যদের বৈঠকে ডাকেন।

ওই দিন বেলা ১১টায় বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও সচিব আসেন বেলা আড়াইটায়। তিনি এসে কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়েই তাড়াহুড়া করে বৈঠক শেষ করেন বলে আমদানি-রপ্তানিকারকরা অভিযোগ করেন। ফলে ৬ এপ্রিল ছবিটির মুক্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

২৭ মার্চ প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার নওশাদ, প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাশ, উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দীন প্রমুখ তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলে মন্ত্রী ‘চালবাজ’ ছবিটি দ্রুত আমদানির ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্টকে নির্দেশ দেন। ওই দিন বিকালেই আমদানি-রপ্তানিকারকদের নিয়ে সচিব জরুরি বৈঠক করে ছবিটি আমদানির জন্য পদক্ষেপের কথা জানালেও পরে অজ্ঞাত কারণে মন্ত্রণালয় থেকে আমদানিকারককে এপ্রিল মাসে ছবিটি মুক্তি না দিতে বলা হয়। এতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এন ইউ আহমেদ ট্রেডার্সের পক্ষ থেকে হতাশা প্রকাশ করে জানানো হয়, এখন ঈদ ছাড়া ‘চালবাজ’ মুক্তি দেওয়া আর সম্ভব নয়। কারণ মে মাসে রমজান থাকায় তখন ছবিটি মুক্তি দেওয়া যাবে না।

এদিকে ১৩ এপ্রিল কলকাতায় ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে বলে জানা গেছে। যদিও ৬ এপ্রিল ছবিটি ঢাকায় মুক্তি না পাওয়ায় এসকে মুভিজ এখন ১৫ জুন সেখানে ছবিটি মুক্তি দেওয়ার চিন্তা করছে বলে জানা গেছে। তারপরও নববর্ষে যদি কলকাতায় মুক্তি পায় ঢাকায় মুক্তি পাচ্ছে না শাকিবের ‘চালবাজ’। প্রদর্শক সমিতির কাছে জানতে চাওয়া হয় ‘চালবাজ’ মুক্তি নিয়ে কেন এই টানাপড়েন? 

এর জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, অভিনেতা আলমগীর তার পরিচালিত ‘একটি সিনেমার গল্প’ ছবিটি মুক্তি ও ব্যবসা সফল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি চাননি এপ্রিল মাসে আর কোনো ছবি মুক্তি পাক। আর এ জন্য তিনি দেশের সর্বোচ্চ স্থান পর্যন্ত দৌড়ঝাঁপ করেছেন। ১৩ এপ্রিল তার ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে।

আলমগীরের ভয় হলো— ওই মাসে অন্য কোনো ছবি মুক্তি পেলে তার ছবিটি ব্যবসা সফল হবে না। প্রদর্শক সমিতির এই কর্মকর্তা বলেন, কোনো নির্মাতা যদি ভালো ছবি নির্মাণ করেন এবং সেই ছবির সফলতার ব্যাপারে তার আত্মবিশ্বাস থেকে থাকে তাহলে ওই ছবির সঙ্গে মুঘলে আজম মুক্তি পেলেও তার ভয়ের কিছু থাকে না। আসলে আলমগীর সেই সত্তর-আশির দশকের ফর্মুলায় বেকডেটেড ছবি নির্মাণ করেছেন বলেই ‘চালবাজ’ নিয়ে তার যত ভয়।

এই কর্মকর্তা বলেন, তিনি ছবির নাম রেখেছেন ‘একটি সিনেমার গল্প’। মানে একটি জ্ঞানী নাম। আমাদের দেশের সিংহভাগ সিনেমা হলের দর্শক হলো সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। তারা এই জ্ঞানী নাম শুনলে আর সিনেমা হলে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ফলে লোকসানের ভয়ে ভীত আলমগীর তার আশপাশে এমনকি ওই মাসে বড় মাপের কোনো ছবি যেন মুক্তি না পায় সেই দৌড়ঝাঁপ করলেও শেষ রক্ষা কিন্তু হয়নি তার।

১৩ এপ্রিল তার ছবির পাশাপাশি মুক্তি পাচ্ছে ইফতেখার চৌধুরী পরিচালিত চিত্রনায়িকা ববি প্রযোজিত ও অভিনীত নতুন ধারার গল্পের রোমান্টিক-অ্যাকশনধর্মী বিগ বাজেট ও অ্যারেঞ্জমেন্টের ছবি ‘বিজলী’। প্রদর্শকদের কথায়, এই ছবিটি নতুনত্বের কারণে দর্শক নিঃসন্দেহে লুফে নেবে। ‘বিজলী’ ছবির ‘পার্টি পার্টি’ গানটি ও এর ট্রেইলার ইতিমধ্যে দর্শকের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। প্রদর্শকদের কথায়, একই দিন ছবিটি মুক্তি পেতে যাওয়ায় আলমগীরের দৌড়ঝাঁপের আর কোনো অর্থ রইল না।

‘চালবাজ’কে কলকাতার ছবির তকমা দিয়ে আটকালেও দেশি ছবি তাকে ব্যারিকেড দিয়েছে। নববর্ষের মতো একটি বড় মাপের বাঙালিয়ানা উৎসবের দিনে সবাই বঞ্চিত হলো শাকিব-শুভশ্রী অভিনীত বহুল আকাঙ্ক্ষিত রোমান্টিক-কমেডি ছবি ‘চালবাজ’ থেকে। প্রদর্শকদের কথায়, শাকিবের ছবি এখন শুধু দেশে নয়, কলকাতায়ও ব্যাপক জনপ্রিয়। তার নবাব আর শিকারি ছবি দুটি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। 

ওপার বাংলায় শাকিবের এই জনপ্রিয়তার কারণে সেখানকার নির্মাতারা এখন শাকিবের শিডিউলের জন্য ছুটছেন। শাকিবকে নিয়ে বেশকটি ছবিও নির্মাণ করছেন। প্রদর্শক সমিতি জানায়, শুধু দেশে নয়, কলকাতায়ও শাকিব এখন নাম্বার ওয়ান শীর্ষনায়ক। কলকাতায় তার অভিষেকে দেব চলে গেছেন রাজনীতিতে। আর জিৎ হলেন অ্যাকশন ধাঁচের ছবির নায়ক। আর রোমান্টিক-অ্যাকশন দুই ঘরানার ছবি নিয়ে শাকিব কলকাতায়ও ফিল্ম ক্যারিয়ারের শক্ত ভিত গড়ে নিয়েছেন। তাই দুই বাংলার নির্মাতা যারা শাকিব খান ছাড়া ছবি নির্মাণ করেন তারা সবসময় শাকিব আতঙ্কে ভুগেন। তারা চান না তাদের ছবির ধারেকাছে শাকিবের কোনো ছবি মুক্তি পাক।

যেটি করেছেন অভিনেতা-নির্মাতা আলমগীর। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাশ বলেন, মানসম্মত ও পর্যাপ্ত দেশীয় ছবির অভাবে বাধ্য হয়ে কলকাতার বাংলা ছবি সাফটা চুক্তির আওতায় আমদানি করা হয়, যাতে সিনেমা হল টিকিয়ে রাখা যায়। কিন্তু এফডিসিভিত্তিক কিছু বেকার আর অদক্ষ প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী যারা নিজেরা ছবি নির্মাণ করেন না, করলেও তা দুর্বল হওয়ায় দর্শক দেখে না। তাই তারা কলকাতার ছবি সরকারি আইন মেনে আমদানি করতে গেলে ভীত হয়ে অযৌক্তিকভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন। এর সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো শাকিব-শুভশ্রী অভিনীত কলকাতার ছবি ‘চালবাজ’।

সোনালীনিউজ/বিএইচ

Wordbridge School
Link copied!