• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার অঙ্গীকার নিয়ে দুইপক্ষের আত্মসমর্পণ


ফরহাদ খান, নড়াইল এপ্রিল ১০, ২০১৮, ০৬:২০ পিএম
শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার অঙ্গীকার নিয়ে দুইপক্ষের আত্মসমর্পণ

নড়াইল : জেলার লোহাগড়া উপজেলার আমাদা গ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার অঙ্গীকার নিয়ে দুইপক্ষের দলনেতা আত্মসমর্পণ করেছেন। মঙ্গলবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে এসপি অফিসে আমাদা গ্রামের একপক্ষের দলনেতা আলী আহম্মেদ খান পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

এর আগে গত ৪ এপ্রিল অপরপক্ষের নেতা আবুল কাশেম খানসহ তার সমর্থকরা আত্মসমর্পণ করেন। আলী আহম্মেদ খান বলেন, এসপি স্যারের আহবানে আমি এখানে এসেছি। গ্রামের দ্বন্দ্ব-কলহ নিরসনে তিনি (এসপি) ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন। আমাদা গ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে চাই। দীর্ঘ ছয় মাস ধরে দুইপক্ষের মধ্যে যে বিবাদ চলে আসছে, তা সুষ্ঠু সুন্দর ভাবে মিটিয়ে ফেলতে চাই। এ জন্য প্রতিপক্ষ লোকজনের সহযোগিতা কামনা করেন আলী আহম্মেদ।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম বলেন, আমি প্রায় দেড় মাস আগে নড়াইলে যোগদান করেছি। পরবর্তীতে আমাদা গ্রামের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের বিষয়টি জেনে খুব মর্মাহত হয়। দুইপক্ষের হামলা-মামলার কারণে কয়েক মাস যাবৎ শতাধিক লোক বাড়িঘর ছাড়া। প্রতিপক্ষের ভয়ে যেখানে-সেখানে দিনরাত কাটাতে হয় তাদের। একাধিক মামলার আসামিও তারা।

এ পরিস্থিতিতে আমাদা গ্রামের দুইপক্ষের দ্বন্দ্ব-সংঘাত মিটিয়ে ফেলার লক্ষ্যে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে গ্রামটিতে শান্তি বজায় রাখার উদ্যোগ নিয়েছি। এ আহবানে সাড়া দিয়ে গত ৪ এপ্রিল একপক্ষের নেতা আবুল কাশেম খানসহ তার সমর্থকরা এবং মঙ্গলবার অপরপক্ষের দলনেতা আলী আহম্মেদ খান আত্মসমর্পণ করেন।

জানা যায়, এলাকায় আধিপত্যসহ জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার আমাদা গ্রামে গত ছয় মাস যাবৎ আলী আহম্মেদ খান ও আবুল কাশেম খানের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলে আসছে। এ কারণে গত ৩ এপ্রিল সকালে আমাদা গ্রামে পুলিশ মোতায়েনের মধ্যেই প্রতিপক্ষের হামলায় আলী আহম্মেদ খান সমর্থকদের ২০টি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়।

এর আগে গত ২৪ মার্চ ভোরে প্রতিপক্ষের হামলায় আমাদা গ্রামের আবুল কাশেম খানের সমর্থকদের ১৫টি বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সময় শিশুসহ তিনজন আহত হয়। এ ছাড়া ঘরের আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভেঙে ফেলে এবং লুটে নেয়া হয়। বাড়িঘর ভাঙচুরের সময় প্রতিপক্ষের লোকজন কয়েকটি বোমা বিস্ফোরণ ও কয়েক রাউন্ড গুলি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরের দিন ২৫ মার্চ গভীর রাতে আলী আহম্মেদ খানের সমর্থকেরা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে চার আসামি ছিনিয়ে নেয়। এ হামলায় লোহাগড়া থানার এক এসআই ও তিন এএসআই আহত হন।

এ সময় পুলিশ আত্মরক্ষার্থে শর্টগানের চার রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। এ ছাড়া গত ১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আমাদা গ্রামে দুইপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত পাঁচটি বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শটগানের ১৪ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এসব দাঙ্গা-হাঙ্গামার ঘটনায় উভয়পক্ষের লোকজনের নামে একাধিক মামলা হয়েছে। আমাদা গ্রামের এ বিরোধ পাশের গ্রাম নড়াইল সদরের কামালপ্রতাপেও ছড়িয়ে পড়ে। এতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। দুইপক্ষ সংঘর্ষ-সংঘাতে জড়িয়ে পড়ায় আমাদা আদর্শ কলেজ, আমাদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আমাদা দাখিল মাদরাসা, এবিএনকে আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও আমাদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রী উপস্থিতি কমে যায়।

এ ছাড়া বোরো মওসুমে আমাদা গ্রামের উত্তর ও দক্ষিণডাঙ্গার বিলে শত শত একর জমি অনাবাদি পড়ে রয়েছে। রবি মওসুমেও কোনো ফসল ঠিকমত ঘরে তুলতে পারেননি আমাদা গ্রামবাসী। বেশির ভাগ সময় দুইপক্ষের পুরুষেরা পালিয়ে থাকায় এসব জমি আবাদ করতে পারেননি তারা। মঙ্গলবার থেকে দুইপক্ষের লোকজন আর সংঘর্ষ-সংঘাতে জড়াবেন না বলে অঙ্গীকার করেন।
 
পুলিশের প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম পিপিএম, সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান, সদর থানার ওসি আনোয়ার হোসেন, ওসি (তদন্ত) হরিদাস রায়, লোহাগড়া লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান কাজী বনি আমিন, বাঁশগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জুরুল করিম মুনসহ সাংবাদিকরা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!