• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শাবানাকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি কেউ...


হৃদয় সাহা জানুয়ারি ৭, ২০১৭, ০৭:৪০ পিএম
শাবানাকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি কেউ...

ঢাকা: এক সময় বাংলা সিনেমা মানেই ছিল শাবানার জয় জয়কার। বিশেষ করে আশি ও নব্বইয়ের দশকে সুপার হিট অভিনেত্রী হিসেবে তিনিই ছিলেন সর্বাগ্রে। নায়ক নির্ভর ছবিগুলোও কখনো কখনো শাবানার অভিনয়ের কাছে ম্লান মনে করা হতো। তিনি একাই একটা সিনেমার প্রাণ হয়ে উঠতে পারতেন! কিন্তু হঠাৎ করেই চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নেন তুখোড় এই অভিনেত্রী। তবে তার আগে গড়েন এক অমূল্য কীর্তি। হ্যাঁ, অভিনয় দিয়ে শাবানাই সবচেয়ে বেশী রেকর্ড গড়েন! এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশীবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার রেকর্ডের শীর্ষস্থানে তারই অবস্থান! বাংলা চলচ্চিত্রে জাতীয় পুরস্কার পাওয়া সবচেয়ে বেশীবার রেকর্ডধারী শাবানার সূত্র ধরেই বাংলা সিনেমার অন্যান্য নায়িকাদের কথাও জেনে নেয়া যেতে পারে, যারা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া নায়িকাদের কথা জানাচ্ছেন হৃদয় সাহা:    
 
বিউটি কুইন খ্যাত বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবানা। এখন পর্যন্ত তিনিই সবচেয়ে বেশি ‘সেরা অভিনেত্রী’ বিভাগে জাতীয় পুরষ্কার অর্জন করেন। দুইবার হ্যাটট্রিক সহ মোট ৮ বার এই পুরস্কার অর্জন করেন। পুরস্কৃত ছবিগুলো হল ১.সখি তুমি কার(১৯৮০),২.দুই পয়সার আলতা(১৯৮২),৩.নাজমা(১৯৮৩) ৪.ভাত দে(১৯৮৪), ৫.অপেক্ষা(১৯৮৭),৬.রাঙ্গা ভাবী(১৯৮৯),৭.মরণের পরে(১৯৯০),৮.অচেনা(১৯৯১).তবে ১৯৮০,১৯৮৯,১৯৯১ সালের পুরষ্কার নিয়ে দর্শকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, বিশেষ করে ১৯৮৯ সালে সুবর্ণা মুস্তফা(স্ত্রী) সিনেমার জন্য চুড়ান্তভাবে মনোনীত হলেও হঠাৎ করেই শাবানার নাম চলে আসে।

মিষ্টি মেয়ে খ্যাত নায়িকা কবরী সেরা অভিনেত্রী হিসেবে মাত্র একবার পুরষ্কার লাভ করেন। সে বছর তীব্র প্রতিদ্বন্দিতা করে সারেং বউ(১৯৭৮) চলচ্চিত্রের জন্য এই পুরষ্কার অর্জন করেন। এছাড়া দেবদাস(১৯৮২) ও দুই জীবন(১৯৮৮) সালে পাবার জন্য যোগ্যতা থাকলেও জুরি বোর্ড তাকে হতাশ করে। এছাড়া কবরীর চলচ্চিত্রের অভিষেকের এক দশক পর জাতীয় পুরস্কারের রীতি চালু হয়। তাই তার সুবর্ণ সময়ের ছবিগুলোর জন্য জাতীয় পুরস্কার পাওয়া হয়নি। তবে জুরি বোর্ড ২০১৩ সালে এই বর্ষীয়ান অভিনেত্রীকে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করে।

আর্ন্তজাতিক খ্যাতি সম্পন্না ও হার্টথ্রুব অভিনেত্রী ববিতা সেরা অভিনেত্রী হিসেবে মোট চার বার পুরষ্কার অর্জন করেন। ইনিই জাতীয় পুরস্কারের ইতিহাসে সর্বপ্রথম হ্যাটট্টিক করেন। পুরস্কৃত ছবিগুলো হল ১.বাঁদী থেকে বেগম(১৯৭৫), ২.নয়নমনি(১৯৭৬) ৩.বসুন্ধরা(১৯৭৭), ৪.রামের সুমতি(১৯৮৫)। তবে গোলাপী এখন ট্রেনে(১৯৭৮), কসাই(১৯৮০), বিরাজ বউ(১৯৮৮) সিনেমার জন্য পুরষ্কার পাবার যোগ্যতা থাকা স্বত্তেও তিনি এই পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হন। বিশেষ করে তাঁর অভিনয় জীবনের সেরা ছবি 'গোলাপী এখন ট্রেনে'র জন্য না পাওয়াটা হতাশাজনক, সে বছর জুরি বোর্ড যৌথভাবে পুরস্কার দিতে পারতেন।

ড্রিম গার্ল খ্যাত নায়িকা সুচরিতা দাঙ্গা(১৯৯১) সিনেমার জন্য প্রথম জাতীয় পুরস্কার পাবার কথা থাকলেও ভাগ্য সহায় হয় নি, পরবর্তীতে হাঙর নদী গ্রেনেড(১৯৯৭) সিনেমা দিয়ে ঐ অধরাটা ঘুচান। ক্যারিয়ারে তিনি একবার ই এই পুরস্কার পান।

জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা চম্পা ‘সেরা অভিনেত্রী’ বিভাগে মোট তিনবার জাতীয় পুরষ্কার অর্জন করেন। পদ্মা নদীর মাঝি(১৯৯৩), অন্য জীবন(১৯৯৫),ও উত্তরের ক্ষেপ(২০০০) দিয়ে তিনি এই পুরস্কার অর্জন করেন।

লাক্স তারকা ও প্রিয়দর্শিনী খ্যাত নায়িকা মৌসুমী তিনবার জাতীয় পুরষ্কার পেয়েছেন। পুরস্কৃত সিনেমাগুলি হল ১.মেঘলা আকাশ(২০০১), ২.দেবদাস(২০১৩), ৩.তারকাঁটা (২০১৪)। তবে শেষ দুটি পুরষ্কার নিয়ে বেশ বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে তারকাঁটার জন্য বেশ বিতর্কিত হয়। তবে ইতিহাস(২০০২) ও মাতৃত্ব (২০০৪) সিনেমার জন্য এই পুরস্কারের যোগ্য ছিলেন। বিশেষ করে ইতিহাসের জন্য না পাওয়াটা বিস্ময়জনক, কারন ঐ বছর জুরি বোর্ড এই বিভাগে কাউকেই পুরস্কৃত করেনি।

লাক্স তারকা খ্যাত ও বুনো সুন্দরী নায়িকা পপি মোট তিনবার জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন। পুরস্কৃত সিনেমাগুলো হল ১.কারাগার(২০০৩)২.মেঘের কোলে রোদ(২০০৮), ৩.গঙ্গা যাত্রা(২০০৯)। তবে কারাগার নিয়ে দর্শকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এছাড়া বিদ্রোহী পদ্মা(২০০৬) সিনেমার জন্যও প্রাথমিকভাবে আলোচনায় এসেছিলেন।

এই সময়ের অন্যতম আলোচিত নায়িকা জয়া আহসান গেরিলা(২০১১)ও চোরাবালি (২০১২) দিয়ে মোট দুইবার জাতীয় পুরষ্কার অর্জন করেন। তবে চোরাবালির জন্য না পেয়ে সে বছর তিনি ফিরে এসো বেহুলার জন্য বেশি প্রাপ্য ছিলেন বলে মনে করেন অনেকে। সম্ভবত সিনেমাটি জুরি বোর্ডের কমিটিতে জমা পড়েনি।

নব্বই পরবর্তী সবচেয়ে জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনূর, যাকে বলা হয় এই বিভাগের অন্যতম দূর্ভাগা অভিনেত্রী। তিনি দুই নয়নের আলো(২০০৫) এর জন্য মাত্র একবার জাতীয় পুরস্কার করেন। শাবনূরের বাঙলা(২০০৬) ও নিরন্তর(২০০৭) এর জন্য পুরস্কার না পাওয়াটা বেশ হতাশাজনক, যার কারনে জুরি বোর্ড বেশ সমালোচিত হয়। আনন্দ অশ্রু(১৯৯৭) সিনেমার জন্যও প্রাথমিকভাবে আলোচনায় এসেছিলেন এই জননন্দিত নায়িকা।

সুন্দরী ও মিষ্টি নায়িকা পূর্ণিমা মেঘের পরে মেঘ(২০০৪), শাস্তি(২০০৫) সিনেমা করেও পুরস্কারটি অধরা থাকলেও পরবর্তীতে ‘ওরা আমাকে ভালো হতে দিল না’(২০১০) সিনেমার মাধ্যমে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন। তবে মেঘের পরে মেঘের জন্য পুরস্কার না পাওয়াটা দূর্ভাগ্যেরই শিকার বলা যায়।

নব্বই দশকের আলোচিত নায়িকা সিমলা তাঁর প্রথম সিনেমা ম্যাডাম ফুলি(১৯৯৯) দিয়েই জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন,তবে সে বছর তার যোগ্য প্রতিদন্দ্বি ছিলেন আফসানা মিমি(চিত্রা নদীর পারে)। এছাড়া নেকাব্বরের মহাপ্রয়ান(২০১৪) এর জন্য যোগ্য থাকলেও, জুরি বোর্ডের দরুন ভাগ্য সহায় হয়নি।

এছাড়া ডলি আনোয়ার(সূর্য দীঘল বাড়ী-১৯৭৯), আনোয়ারা(শুভদা-১৯৮৬), অঞ্জনা(পরিনীতা-১৯৮৬), রোজিনা(জীবন ধারা-১৯৮৮), ডলিজহুর(শঙ্খনীল কারাগার-১৯৯২), বিপাশা হায়াত(আগুনের পরশমনি-১৯৯৪),শাবনাজ(নির্মম-১৯৯৬),অপি করিম(ব্যাচেলর -২০০৪), চুমকি(ঘানি-২০০৬), মম(দ্বারুচিনি দ্বীপ-২০০৭), শর্মীমালা(মৃত্তিকা মায়া-২০১৩), মিম(জোনাকীর আলো)দিয়ে এই পুরস্কার অর্জন করেন।

জাতীয় পুরস্কারের ইতিহাসে ১৯৯৮ ও ২০০২ সালে মোট দুইবার এই বিভাগে কাউকে পুরস্কৃত করা হয়নি। কিংবদন্তি অভিনেত্রী শবনব, সুচন্দা, সুজাতা, অঞ্জু, সুবর্ণা মুস্তফা, দিতি, অপু বিশ্বাস এই বিভাগে পুরস্কার অর্জন করতে পারেননি।

সম্প্রতি তথ্য মন্ত্রনালয়ে ২০১৫ সালের জাতীয় পুরস্কার প্রদানের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি সিনেমা জমা পড়েছে। ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলি মধ্যে সেরা অভিনেত্রী বিভাগে সবচেয়ে এগিয়ে আছে অপর্ণা ঘোষ(সুতপার ঠিকানা), তারপর থাকবে জয়া আহসান(জিরো ডিগ্রী) ও মিম(পদ্ম পাতার জল)। এছাড়া পরিমনি(মহুয়া সুন্দরী) ও আলোচনায় আসতে পারেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিএল

Wordbridge School
Link copied!