• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

শামশাম তাজিলের কবিতা


শামশাম তাজিল জুন ৯, ২০১৬, ০৫:৫২ পিএম
শামশাম তাজিলের কবিতা

ব্যবহারিক পথ


বয়স বত্রিশ, অপেক্ষার বেলা বয়ে গেছে যথারীতি
ক্রিয়াপদহীন পথ হেঁটে গেছেন সমর সেন
ভুল করে ফেলে গেছেন মদের পেয়ালা,
জল ভেবে পান করে হয়েছি বিভোর,     
পাপের ভয় ছিলো না, কিন্তু মাতলামির থেকে কে দেবে নিষ্কৃতি?
দ্রুততার সঙ্গে সাম্যের রয়েছে বিরোধ;
--সব কিছু গুছিয়ে নিন, দূরে বাজছে সাইরেন


নিরর্থক


ঢাকার ভিতর বইসা আছে দিল্লি কলকাতা
তুমি ক্যামনে যাইবা বাড়ি?
ওদের হটাও তাড়াতাড়ি,
আমার পথে অনেক কাঁটা,
আমি পথভোলা এক লোক
দেখি ঢাকার চোখের কোণে শোক
তুমি অন্ধ ক্যানো পরী?    
কবে খুলবে তোমার চোখ!
তারা কানা-ক্যাবলা আমায় ডাকে
তুমি দিও না তাতে সাড়া
আমি ক্যামনে যামু বাড়ি?
তোমার ভিতর বইসা আছে দিল্লি কোলকাতা!


দূরের আগুন


বুকের পাড়ায় হাত রেখে কেউ অশ্ব পেলো, কেউবা পেলো খুরের আওয়াজ
হাত বাড়ালেই হাত পাওয়া যায়-- এমন কোনো মন্ত্র তো নেই
আছে নাকি তেমন কিছু?
ঘুমের ভেতর স্বপ্ন এসে শুরশুড়ি দেয়, কানের কাছে ফিসফিসিয়ে কথা বলে অলীক ভাষায়
সব কিছু তো বদলে গেছে কেমনতরো
গাছে গাছে নতুন পাতা --মেলছে কুঁড়ি, ঋতুর বদল ঘটে গেছে ঘুমের ভেতর
ঘরের লোভে ঘর ভেঙেছে পুরনো মানুষ
ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে কে জিতেছে? জীবনব্যাপী ছায়াবাজি
পাওয়ার ছিলো একটি ঘোড়া, লাগামবিহীন উদার জীবন
বাজার ভেঙে ফিরছে মানুষ ঘরের নেশায়, ঘরের ভেতর অন্য মানুষ কথা বলে
তবে কি আমি ভুল করেছি?
ভুল করে কি নাড়ছি কড়া অন্য ঘরের!
বৃষ্টি নামে ভিজিয়ে দিয়ে নতুন পাতা --অঝর ধারায়
আমায় তখন পোড়ায় কেবল দূরের আগুন


আমি মাথা বিক্রি করি


আমার সাইকেল ছিলো না কোনো কালেই,
যাদের সাইকেল আছে তারা সাইকেল বিক্রি করে বাইক কিনে,
যাদের ঘরবাড়ি আছে তারা কিনে প্রাসাদ, আরো ঘরবাড়ি
যাদের সংসার আছে তারা সংসার ভাঙ্গে, গড়ে
স্বপ্নও ছিলো না, তাই স্বপ্নের অভিচারী
হতে পারি নি
আমার বিক্রি করার মতো কিছু ছিলো না কোনো দিনই
ছিলো কেবল একটা মাথা, যদিও মগজহীন
তারা সাইকেল চালিয়ে আমার পাশ দিয়ে চলে গেছে
ঠোঁটে সুর তুলে, সাইকেলের ঘণ্টা বাজিয়ে টুংটাং
মাহমুদ ইমরান, আমাকে আপনি দেখেন নি? কোনো দিন!
আমি মাথা বিক্রি করি

 

স্মৃতি, পথের সঞ্চয়


বাচ্চাটা সুন্দর । মুখে মুখে বলেছি । সত্যই শিশুটি সুন্দর ।
মনে মনে বলেছি: তার চেয়ে সুন্দর বাচ্চার মা ।
কাম ছিলো না তাতে, তবু খুব গোপনে জেগে রয়েছে কামনা ।
দেখি, দেখি বাবা বলে শিশুটিকে নিয়েছি ক্রোড়ে;
তাকাই নি, তবু দেখেছি নারীটিকে দাঁড়িয়েছিলো দুই হাত দূরে ।
নারীটি কম সেয়ানা নয়, এর মাঝেই কিছুটা নুয়ে ঢেলে দিলো চোখের আগুন ।
সেই চোখে ভালোলাগা ছিলো; ছিলো? তেঁতুলের সঙ্গে মেশানো কিছুটা নুন !
পানি খেয়ে জানিয়ে সালাম কৃতজ্ঞতায় হেঁটেছি নিজের পথ,
যতোটা ভান করি ততো নই সৎ।
-- এই কথা অজানা নয় নারীর
আমাকে সেলাম ঠুকে সদর দরোজা দেখিয়ে দিলো বাড়ির ।
শিশুটিকে কুলে তুলে নেই প্রেমে, নারীর চোখে জ্বলে অগ্নিময় শিলা;
ধনুকের রয়েছে কেন্দ্রাতিগ টান , অধিক বলে ছিঁড়ে যাবে ছিলা ।
শিশুকে ভালোবাসি খুব, তারও বেশি শিশুটির মাকে,
চোখে লজ্জার আবির মেখে বুকের উষ্ণতায় ডাকে ।
সেই ডাকে সাড়া দেব, হয় না সময়-- আমি ডেকেছি ধীরে, গোপন, অনুচ্চ স্বরে;
মনে পড়ে পায়ে চলা পথ, আগুনে পুড়েছে সন্ধ্যা, ভাবি বসে একা চুপচাপ, রাতের অবসরে ।
এই সব কথা জানবে না নারী, শিশুটিও নয়;
পথে পথে কেটে যায় জীবন,পায়ে পায়ে জড়ো হয় স্মৃতি-- পথের সঞ্চয়।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!