• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শাসন-সোহাগেই পাল্টাবে ছাত্রনেতারা!


নীলা বুলবুল জানুয়ারি ৫, ২০১৭, ১০:১০ পিএম
শাসন-সোহাগেই পাল্টাবে ছাত্রনেতারা!

ঢাকা: নব্বই সালের পর থেকেই বদলে যেতে থাকে ছাত্ররাজনীতির চরিত্র। ক্যাম্পাসে আর রাজপথে সবচেয়ে সহিংস হয়ে ওঠে। ‘আতঙ্ক’ হিসেবে দেখা দেয় সাধারণ মানুষের কাছে। দেশের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে মফস্বল পর্যন্ত রক্তাক্ত হতে থাকে শিক্ষা ক্যাম্পাস। এসব ঘটনায় ছাত্ররাজনীতি নিয়ে অস্বস্তি চরমে ওঠে। এই অস্বস্তি চলতে থাকে প্রায় দেড় দশক ধরে।

২০০১ সালে ওয়ান ইলেভেনের মধ্য দিয়ে মূলধারার রাজনীতিতে আসে ব্যাপক পরিবর্তন। পাল্টে যেতে থাকে ছাত্ররাজনীতিও। তবে বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বাপর ঘটনা আবারো বদলে দেয় ছাত্ররাজনীতিকে। রাজপথের ভয়াবহ সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে সরকারবিরোধী ছাত্রনেতারা।

তবে সরকার হটাও আন্দোলনে রাজপথে ব্যাপক সহিংস আচরণ করার পর ক্লান্ত হয়ে পড়ে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। সরকারের প্রবল প্রতিরোধের মুখে ভেঙে পড়ে তাদের সমন্বিত সহিংস আন্দোলন। এভাবে রাজনৈতিক দল নিষ্ক্রিয় হওয়া ও ক্ষমতা থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে এসব দলের ছাত্রসংগঠনগুলোও ঝিমিয়ে পড়ে।

অপরদিকে, ক্ষমতাসীন দলের লাগামহীন ছাত্রনেতাদের নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হয়ে ওঠে শীর্ষ নেতারা। নেতৃত্বে নিয়ে আসা হয় যোগ্যদের। সাবেক ছাত্রনেতারা এসব নেতার পথ পদর্শক হিসেবে কাজ করতে থাকে। এতে ক্যাম্পাসে আবারো স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে শুরু করে।

সময় আর যুগের চাহিদার কারণেই্ পাল্টে যাচ্ছে রাজনীতি। সেই সঙ্গে বদল হচ্ছে দলের চরিত্র। সংঘাত সহিংসতা নয় বরং নিয়মাতান্ত্রিক পথেই হাঁটছেন নেতারা। এসব কারণে সরকার ও সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের ছাত্রনেতারাও ধীরে ধীরে শান্তিপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে মাঝে মাঝে যে তারা হিংস্র হয়ে ওঠে না, দল আর নেতদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে না, তা কিন্তু নয়। এসব কারণেই মূলধারার নেতারা কঠোর মনোভাব দেখাতে শুরু করেছেন।

গত ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগকে পরগাছামুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বর্তমানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারী পরগাছাদের ছাত্রলীগে চাই না। তারাই ছাত্রলীগের এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রধান বাধা। তাদের চিহ্নিত করতে হবে। কমিটি গঠন করার সময় তারা যাতে পদ না পায় সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এসব পরগাছাই বিভিন্ন বিতর্কমূলক কাজ করে। আর বদনাম হয় শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগের।’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কথায় কথায় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন একটি অশুভ প্রবণতা বলে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটি মেনে নেয়া যায় না। তেমনি অনির্দিষ্টকাল কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখাও সমর্থনযোগ্য নয়।’ তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগকে সুনামের ধারায় থাকার শপথ নিতে হবে।’ সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কাছে ছাত্রলীগকে আকর্ষণীয় করে তোলার তাগিদ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নেতাদের পরিচয়, আচার-আচরণ, মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে নিজেদের আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে।’

শুধু সাধারণ সম্পাদকই নন, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বার বারই ছাত্রলীগ নেতাদের পড়ালেখায় মনোযোগি হতে পরামর্শ দিয়েছেন। তারা যেন মারামারি না করে মানুষের মতো মানুষ হয় সেজন্যও তাগিদ দিয়েছেন।

একইরকম পরামর্শ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনিও ছাত্রদলেন নেতাদের ধমকিয়েছেন, শাসিয়েছেন। গত পহেলা জানুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রদলের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে খালেদা জিয়া ছাত্রনেতাদের বলেন, ‘আমি যে ইলেকশন কমিশনের প্রস্তাব দিয়েছি, তোমরা কি পড়েছ সবাই? সবাই পড় নাই। তাইলে তোমরা কিসের ছাত্র? কেন ছাত্রদল কর বা কেন তোমরা যুবদল করবে?’ ছাত্রদল কেন ছাত্রদের সমস্যা, দুর্নীতি, শিক্ষাব্যবস্থার দুরবস্থা নিয়ে স্লোগান দেয় না তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বলেন, ‘তার মানে তোমরা শুধু স্বার্থটা বোঝো।’

ছাত্রদের পরামর্শ দিয়ে চেয়ারপারসন বলেন, ‘বস্তির ছেলেপেলে এনে দল করতে যাবে না। সংখ্যা আমি দেখতে চাই না। আমি দেখতে চাই ভালো, উপযুক্ত ছেলেপেলে আসে কি না।’ ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ন্যায় ও সত্যের পথে থাকার নির্দেশনাও দেন। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নিজের ছেলে মেয়ে হিসেবে উল্লেখ করে বেগম জিয়া বলেন, ‘তোমাদের জাগতে হবে, ঘুমিয়ে থাকলে চলবে না। তোমরা আমার ছেলেমেয়ে। সেভাবে কাজ করতে হবে। না হলে কষ্ট পাব।’

এদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে অতীতের ‘কলঙ্ক’ থেকে ‘মুক্ত’ করতে নতুন আমির নতুন প্রজন্মকে নানা বার্তা দিচ্ছেন। সংগঠনের সংস্কার নিয়ে কিছুটা বিভক্তি থাকলেও নতুন প্রজন্ম ‘নির্দোষ জামায়াত’ দেখতে আগ্রহী। তাই রাজপথের সহিংসতার পরিণতি থেকে শিক্ষা নিয়ে জামায়াতের ছাত্রনেতারা এখন নিয়মাতান্ত্রিক রাজনীতি দেখতে চায়।

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!