• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শাহানারা রশিদ ঝরনার কবিতাগুচ্ছ


শাহানারা রশিদ ঝরনা জানুয়ারি ১৫, ২০১৮, ০১:১৫ পিএম
শাহানারা রশিদ ঝরনার কবিতাগুচ্ছ

১ । কেউ বুঝিনা

স্বপ্নগুলো আগুন রোদে পুড়ে পুড়ে হয়যে তামা
ভাবান্তরের ইচ্ছে নিয়ে কেউ লেখেনা হলফনামা

তেঁতুলগাছে পায়রা নাচে হাতছানি দেয় কিশোরবেলা
মইষালে গায় বাউল সুরে বুকের ভেতর স্মৃতির খেলা

সপ্তডিঙায় অভিসারে কোকিলা যায় কোন সে দেশে !
গুণ টানেনা পবনমাঝি নদী কাঁদে কাঙাল বেশে

জলসাঘরে সানাই বাজে নর্তকী গায় বিষাদগীতি
আর কতকাল কাটবে সময় নিয়ে এমন বৈরি নীতি ?

মেঘবালিকা কতোই কাঁদে জমিন তবু খরায় পোড়ে
বোধবুদ্ধির রঙমহলে অন্ধ - বধির স্বপ্ন ঘোরে

ভাবুকজনে ব্যস্ত খুবই কাটায় নিয়ে দৈববাণী
মূর্খগুলো সুযোগ বুঝেই দিচ্ছে পেতে আসনখানি

বোকাবাবু রাত-বিরাতে পাল্টে স্বভাব হচ্ছে রাজা
অতি চালাক মোহের বশে ধরা পড়ে পাচ্ছে সাজা

বুদ্ধিজীবীও যাচ্ছে ভুলে মানবতার সহজ রীতি
সকলখানেই চলছে কেবল ইচ্ছেমত স্বজনপ্রীতি

পাচ্ছে যারা তাদের শুধু পাওয়ার আশা বাড়ছে আরো
মানবতার দরপতনেও নেই বুঝি তাই ভাবনা কারো

বিদ্যা ভরা মেমোরিতে সেভ করা নেই বোধের আলো
লোভের ধোঁয়ায় অন্ধ সবাই , কেউ খুঁজিনা মন্দ ভালো !

২ । জীবনের ইতিহাস

বৈকালিতে বসে দেখি পড়ে আছে অপার খেয়াঘাট ,
ধীরগতিতে রাত নামে , বন্ধ হয়ে যায় নিয়তির কলাপসেবল গেট ।
অনেক কিছুই কিংবদন্তি হয় ,
শিরোনামহীন পড়ে থাকে মুর্খামির জীবন পঞ্জিকা ।

হৃদয়ের দূষণ রোধে কেউ যদি হয় মনস্তত্ত¡বিদ
দলছুট মেঘের মত আমিও হারিয়ে যাব একা
বস্তুত অধনমিত কোন অপসিদ্ধান্তের কারিক্যুলাম
হীনমন্যতাকে বর্ধিত করে আজীবন !
ট্যুরিজমবিদ্যার আপগ্রেড পাণ্ডিত্যও ঢেকে যায় খোলসের আবরণে -
লোপ পায় মনিটরিং ক্যাপাসিটি ।

যখন কেউ মধ্যবয়েস পেরিয়ে পৌঁছে যায় বার্ধক্যের ঘাটে
সুনসান নীরবতায় পোড়ে শেষকৃত্যের পাণ্ডুলিপি
সংবিধিবদ্ধ নিয়তির বিজ্ঞাপন বারবার পাল্টায় রঙ
মায়ামঞ্চের উপঢৌকন নিয়ে ভাবের মানুষ চলে যায় অনেক দূর ।
আমিরি আভিজাত্য ধারণ করে দেখি
মননের সেন্সর বোর্ডও দুর্নীতির আওতামুক্ত নয় ---!
লেখা হয় তবু জীবনের ইতিহাস
পুরোহিত আবহেই করি সেলফি সমাবেশ !

৩ । নকল কিছু পেলে

রাত বয়ে যায় আদরগুলি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে
কেউ বুঝি দেয় মন পাহারা বৃক্ষলতার ফাঁকে
ও কলাবউ , বনস্পতি ও দেউলের দেবী
সম্মোহনে হোসনে তোরা ভোগের মানবসেবী !
জনশ্রুতির বার্তা নিয়ে যায় উড়ে দূর পাখি
ও কিশোরী তুই কিরে তার খবর রাখিস নাকি ?

রাত বেড়ে যায় দানবদলে যায় পড়ে যায় সাড়া
মনের জমিন লিজ নিতে হয় বিশ্ব মাতোয়ারা ।
পুঁজিপতি বণিকদেরও মুখে জাগে হাসি
হলদে পাখি কষ্টে শোনে চৌরাশিয়ার বাঁশি !

রাত শেষে হায় থমকে দাঁড়ায় আকুল নিশিচারি
নিশ্বাসে বিষ ছড়িয়ে পড়ে বাতাস যে হয় ভারি !
ও কুঁড়িফুল , বলনারে তুই ফুটবি কেমন ক'রে ?
বিবর্তনের চলছে খেলা কাল- মহাকাল ধরে ।!

রাত থেমে যায় সাক্ষী যে ওই সবুজ বৃক্ষলতা
আমার ' আমি ' হই সার্থক , পুড়িয়ে মানবতা
দেখি, বুঝি, সবই করি লোভের আগুন জ্বেলে
আসল ফেলে হই যে খুশি নকল কিছু পেলে ।

৪ । চেনা পথের দূরত্ব

মহাশূন্যে প্রতিধ্বনিত হয় শব্দের কোলাহল ,
সময়ের তাঁতঘরে কোন বুণন উপকরণ নেই
তবু বুনে চলি , আলোকিত রাখি নির্মোহ প্রচেষ্টার উঠোন ।
বুকের শহরে চলে বাক্যের কারফিউ -পাল্টাতে পারিনা
যাপিত জীবনের পঞ্জিকা
পরজীবী হৃদয় নিয়ে , মিথ্যেই কোলাজ করি জীবন সুচিক্রম ।

মতানৈক্যের প্ল্যাকার্ড হাতে কখনো ছুটে যাই দিকবিদিক
ন্যায়ের মিছিল নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে দেখি
সভ্যতার আঁতুড় ঘরে নিজেই আমরা শ্রবণ কিংবা দৃষ্টি প্রতিবন্ধির মত
কেউ আর করতে চাইনা অনুভ‚তির তরজমা ,মানিনা সৃষ্টির ব্যাকরণ !

বাতাসকে ছুঁয়েই নিবিড় বিরহ কুড়োই
ক্রমাগত বেড়ে যায় চেনা পথের দূরত্ব
ইচ্ছের দূরদর্শিতা যতই থাক , সবকিছু নিবন্ধিত হয়ে যায়
চেতনার বাতাসে ভাসে প্রপিতামহের আদর্শের স্বরলিপি !
শাহানারা রশিদ ঝরনা

৫ ।ইচ্ছের অজান্তেই

কী আছে আর কী যেন নাই , বলছে কে যে হায় !
নাই কুশিলব , নাই বিনোদন , স্বপ্ন মরে যায়

হচ্ছে নিলাম আঙুর বেদন , লজ্জারাঙা টিপ
নাবিক বিহীন যাচ্ছে জাহাজ নিঝুম কোন দ্বীপ

মনের মাঝেই স্বর্গ নরক সাধক পাপীর বাস
লাভ লোকসান হিসেব তারাই করছে বারোমাস

সুখমহলের মালিক বোঝে সুখের কতো দাম
তার সঙ্গেই সখ্য পেতে বাড়াই নিজের নাম

আমি অবোধ -তুইও কী তাই ! আয় বেঁধে নিই জোট
শুদ্ধ হতে আয় পরে নিই , শুদ্ধি মোহর কোট ।

মন অভিধান না যদি হয় সঠিক সমন্বয়
দেহঘড়ি ঘটায় তবে বৈরি বিপর্যয় ।

প্রাণ ভোমরা খেলছে পাশা চক্ষু ভরা জল
অন্তরেতে বিষাদ নদী বইছে ছলাৎছল

যেতে হবে একদিন ঠিক , সত্যটা তো এই
দিন ফুরোলেই হারিয়ে যাব ইচ্ছের অজান্তেই !!

 ৬ । পথ কী জানে !

পথ কী জানে পথের রেখা কোথায় কখন শেষ !
পথ তো নিজেই নীরব চলে একলা  নিরুদ্দেশ ।

নিবিড় নিয়ম মানতে গিয়েই হারিয়ে ফেলি সব
শহর নগর বন্দরে আজ কিসের কলরব ?

এই যে আছি , এই বুঝি নেই তবু নিরীক্ষণ
নিঃশব্দের ঘোর কাটেনা চাই  শুধু  বন্ধন ।

সবুজ পাতায় দিনকে রাখি বালির ভাঁজে মন
আয়ুষ্মতীর খবর আনে সখের গ্রামীণফোন

সিন্দুকে নেই সোনার মোহর আকাশ কেনার সাধ
অবহেলায় শতাব্দী  যায় হয়না  প্রতিবাদ !

পূর্ণিমা রাত বলবে কী আর ,  সেইতো ব্যথায় নীল
রঙমাখানো তুলির মাঝেই  খুঁজি  অন্ত্যমিল ।

রোদ ঝলোমল আকাশ দেখেই দিন যে বয়ে যায়
পথ কী জানে ! পথে বসেই ভাবি  আশংকায় ?

উত্তরা/ঢাকা
০১৭৩৫৮০১৭২১

Wordbridge School
Link copied!