• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিউলীকেই বেছে নেবেন এরশাদ!


সিলেট প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৮, ০৪:২৩ পিএম
শিউলীকেই বেছে নেবেন এরশাদ!

সিলেট: বাংলাদেশের রাজনীতির রম্য-পুরুষ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। রাজনীতির মোড় ঘোরার সঙ্গে সঙ্গেই তাকেও সিদ্ধান্ত পাল্টাতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ আগে যে কথা বলেছেন পরক্ষণেই তা পাল্টিয়ে ফেলেন। শুধু জাতীয় ইস্যুতে এমনটা করেন তা নয় দলের ক্ষেত্রেও তাকে এমন অনেক সিদ্ধান্ত পাল্টাতে দেখা গেছে।

যেমন দলের ভবিষৎ কাকে করা হবে এমন বিষয় নিয়েও তিনি সিদ্ধান্ত পাল্টিয়েছেন। তেমনি একটি সিদ্ধান্ত হলো সিলেট-২ (ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ ও বালাগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নিয়ে।

ওই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির ইয়াহহিয়া চৌধুরী এহিয়া। তাকে সরিয়ে এবার নাকি এক সময়ের নাটক ও মিউজিক ভিডিওতে কাজ করা শিউলী আক্তারকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার কথা চিন্তা করছেন এরশাদ। 

বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সিলেটে মাজার জিয়ারতে এসেছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আলহাজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে তিনি নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করলেন। সেখানেই শিউলীকে দেখে এরশাদ বললেন- ‘শিউলী তোমাকে চেনাই যাচ্ছে না। শুনলাম হজ করেছো। মাঠেও কাজ করছো শুনলাম। সামনে নির্বাচন আছে। কাজ করে যাও।’ 

এরশাদকে বাবার মত মনে করেন শিউলী

এ সময় এরশাদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন জাতীয় মহিলা পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ও সিলেট মহানগরের সাধারণ সম্পাদক শিউলী আক্তার। এরশাদ বের হওয়ার সময় তার সঙ্গে দেখা হয়।

শিউলীকে দেখে এরশাদ এ মন্তব্য করেন। শিউলী সিলেট-২ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী। ইতোমধ্যে তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। তবে এ আসনে জাতীয় পার্টির বর্তমান এমপি ইয়াহহিয়া চৌধুরী এহিয়া বেশ সুসংহত অবস্থানে রয়েছেন। শিউলী মাঠে নামায় সিলেট-২ (ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ ও বালাগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

এর মধ্যে একাংশ এহিয়ার পক্ষে ও অপর অংশ শিউলীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বিগত দিনে সিলেটে শিউলী নানাভাবে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন। খোদ জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে তাকে এখনও আড়চোখে দেখা হয়। এরপরও দলীয় প্রধানের সু-নজরে থাকায় আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী সিলেটের শিউলী।

কে এই শিউলী আক্তার?
নাটক ও মিউজিক ভিডিওতে এক সময় পটু ছিলেন সিলেটের শিউলী। শখের বশে শোবিজ জগতে মেলে ধরেছিলেন ডানা। সেখানে খ্যাতি পেয়েছেন। কিছুটা বিতর্কও ছিল তাকে নিয়ে। এভাবেই তিনি পরিচিতি পেয়েছেন সিলেটে। এরপর রাজনীতি শুরু। পছন্দের জাতীয় পার্টি তার ঠিকানা। পুরোদস্তুর একজন রাজনীতিবিদ হওয়ার জন্য কাজ শুরু করেন। পেয়েছেন সফলতাও। 

এখন তিনি জাতীয় মহিলা পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক। সিলেট মহানগরের সভাপতিও। শিউলী আক্তারকে এক নামে চিনেন সিলেটের সবাই। ভালো চিনেন পার্টির চেয়ারম্যানও। এ কারণে পার্টির চেয়ারম্যান আলহাজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যখনই সিলেটে আসেন তখনই সরব হয়ে উঠেন শিউলী।

নিজ দলের মহিলাদের নিয়ে শোডাউনসহ নানা কর্মকাণ্ড চালান। আবার হঠাৎ কোথায় যেন ডুব দেন শিউলী। খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রায় দুই বছর অনেকটা অন্তরালে ছিলেন। রাজনীতির কর্মকাণ্ড থেকে দূরে অবস্থান করেন। 

সম্প্রতি আবার এসেছেন প্রকাশ্যে। তিনি মহিলাদের জাতীয় পার্টিতে যোগদানের প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন। সংসদ নির্বাচন সামনে। এ কারণে রাজনীতির পরিমণ্ডলে উকি-ঝুঁকি মারছেন তিনি। এমনটি মনে করছেন সিলেট জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। সিলেটের বিশ্বনাথের মেয়ে শিউলী আক্তার। বিশ্বনাথ থেকে একসময় চলে আসেন সিলেটে। পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন নগরীর বিভিন্ন এলাকায়। আর ওই সময় থেকে সিলেটে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন শিউলী। 

নেশার ঘোরে ঢুকে পড়েন শোবিজ অঙ্গনে। সিলেটী নাটক, মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেন অনেক দিন। এতে রাতারাতি পরিচিতি পান। ওই সময় নানা ঘটনায় বিতর্কিত হয়ে পড়েছিলেন। তাকে নিয়ে স্ক্যান্ডাল রটলেও দমে যাননি। সিলেটী নাটক ও মিউজিক ভিডিওতে কাজ করে যান। 

পাশাপাশি শুরু করেন রাজনীতি। কিন্তু রাজনীতিতে ‘বাঁকা’ চোখ তার দিকেই ছিল। এ নিয়ে রাজনীতির মাঠে পড়েন অগ্নিপরীক্ষায়। একের পর এক অভিযোগের তীর ছিল তার দিকে। নিজের স্ক্যান্ডালের কারণে বার বার তাকে বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছে। এসব স্ক্যান্ডালে কখনো কখনো ঘরের ভেতরে বন্দি হয়ে থাকতে হয়েছে শিউলীকে। পাশাপাশি মহিলা পার্টিতেও পড়েন বিরোধিতার মুখে। 

শিউলীর হাতে ফুল দিয়ে দলে যোগ দিচ্ছেন দুই নারী

সিলেট জাতীয় পার্টির রাজনীতিতেও তাকে নিয়ে জল্পনা কম হয়নি। এসব কিছু থেকে রেহাই পেতে ঢাকামুখী হন শিউলী আক্তার। কেন্দ্রের সঙ্গে লবিং করে এখন তিনি জাতীয় মহিলা পার্টির কেন্দ্রীয় নেত্রী। সিলেট নগরীর গার্ডেন টাওয়ারে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। এখনো তাকে নিয়ে জল্পনার অন্ত নেই। 

ইতোমধ্যে  মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। এসব দেশে ভিজিট ভিসায় তিনি ভ্রমণ করেন। ওমরা হজও করেছেন একবার। এখন অনেকটা নীরব। রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসায়ও মন দিয়েছেন। সিলেট নগরীর কুমারপাড়া এলাকার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। সেটিই পরিচালনা করছেন। 

সংসার, ব্যবসা এসবের কারণে এ দফা অন্তরালে ছিলেন অনেক দিন। এবার জানান দিলেন নিজ থেকে। সম্প্রতি তিনি অন্দরমহল থেকে বেরিয়ে রাজনীতির কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়ে উঠলেন। গত বুধবার জাতীয় মহিলা পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট মহানগর শাখার সভানেত্রী শিউলী আক্তারের হাতে ফুল দিয়ে মহিলা পার্টিতে যোগদান করেছেন মিনারা বেগম ও ময়না বেগম। 

সিলেটের এক হোটেলে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা দুইজন জাতীয় মহিলা পার্টিতে যোগ দেন। এ সময় শিউলী বলেন- আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি পল্লীবন্ধু এরশাদের নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করে সরকার গঠন করবে এবং পলীবন্ধু এরশাদের স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাবে। 

জাতীয় মহিলা পার্টি সিলেট মহানগর সহ-সভাপতি রেজিয়া বেগমের সভাপতিত্বে ও কৃষি সম্পাদিকা রেহেনা বেগমের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় মহিলা পার্টি সিলেট মহানগর সহ-সভাপতি নাজমা বেগম, বেগম আক্তার, অর্থ সম্পাদক রোজিনা বেগম, সদস্য সুমানা বেগম, মিতু আক্তার ও সারজানা বেগম প্রমুখ।

শিউলীর এ সরব হওয়ার কারণ কী- এসব নিয়ে জাতীয় পার্টিতে চলছে আলোচনা। জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা জানান, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ কারণে শিউলী সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। গেল বারও তিনি সিলেট-২ আসন থেকে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হতে পারেননি। এবার তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। আর এ কারণে আগে থেকে মাঠে নেমেছেন শিউলী।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!