• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষক লাঞ্ছনার তদন্ত প্রতিবেদন দায়সারা : হাইকোর্ট


বিশেষ প্রতিনিধি মে ২৯, ২০১৬, ০২:১৩ পিএম
শিক্ষক লাঞ্ছনার তদন্ত প্রতিবেদন দায়সারা : হাইকোর্ট

নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনার ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার ওসির দেয়া প্রতিবেদনে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।  এ প্রতিবেদনকে ‘দায়সারা’ বলে মন্তব্য করেন আদালত।

ভবিষ্যতের এই ধরনের প্রতিবেদন দেয়া হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আদেশ দিতে আদালত কুণ্ঠাবোধ করবে না। একই সঙ্গে আগামী ৮ জুন আইনগত পদক্ষেপের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ওই তিন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী ৯ জুন এ বিষয়ে পুনরায় শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

রোববার (২৯ মে) বিচারপতি মঈনুল  ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের  ডিভিশন বেঞ্চ  শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।

শিক্ষকের পক্ষে আদালতে ছিলেন সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এন কে রহমান ও অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।

এ বিষয়ে সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এন কে রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এসপি ও ওসিকে ফৌজদারি অপরাধের বিষয়ে, কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল, সে বিষয়ে রুলে জানতে চেয়েছিল আদালত। কিন্তু প্রতিবেদনে কোনো বিষয়ই উল্লেখ করেনি। বরঞ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পদক্ষেপগুলোই তাঁরা উল্লেখ করেছেন। তাই এ ধরনের দায়সারা প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আদালত মন্তব্য করেন।

এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে, তাতে আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ৮ জুন পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় কি আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে নারায়ণগঞ্জের ডিসি, এসপি ও ওসিকে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দেয়া ওই আদেশের পর প্রশাসনের ওই তিন কর্মকর্তা এফিডেফিড আকারে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেন।

ডিসির প্রতিবেদনে ওই ঘটনায় তদন্তের জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে কমিটি করা হয়। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মাউসির করা তদন্ত প্রতিবেদনের পর কমিটির কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়। অপরদিকে পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কান-ধরানোর ঘটনা  অআমলযোগ্য অপরাধ। এই ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অনুমতি নিয়ে বন্দর থানা পুলিশ ঘটনা তদন্ত করছে।

আমলযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও জিডিতে সুনির্দিষ্ট ধারার বিষয়টি উল্লেখ না থাকার বিষয়টি আদালতের দৃষ্টিতে আনেন অ্যাডভোকেট এম কে রহমান ও মহসিন রশীদ।

এ পর্যায়ে হাইকোর্ট বলেন, জিডি একটি লিগ্যাল প্রসেস। তবে সুনির্দিষ্ট ধারা উল্লেখ থাকলে বিষয়টি ভাল হত। ডিসির প্রতিবেদনের বিষয়ে হাইকোর্ট বলেছে, জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখার দায়িত্ব হলো ডিসির। কিন্তু এই ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক কোনো প্রতিবেদন দেননি তিনি। এই ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে ডিসি ব্যর্থ হয়েছে। আগামী ৮ জুনের মধ্যে এই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে হবে। পরদিন এই বিষয়ে আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে গত ২৫ মে সেলিম ওসমানসহ দোষীদের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিবেদন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে জমা দেয় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন।

গত ১৩ মে শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছেন—এমন অভিযোগে এলাকাবাসীর সামনে সেলিম ওসমানের নির্দেশে তাঁকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়। সমবেত জনতার কাছে করজোড়ে মাফ চাইতেও বাধ্য করা হয় ওই প্রধান শিক্ষককে। পরে সংসদ সদস্যের নির্দেশে প্রধান শিক্ষককে পুলিশের হেফাজতে স্কুল থেকে বের করা হয়। পরে ওই শিক্ষককে স্কুল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ। পরে অবশ্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে সেই শিক্ষককে পুনর্বহাল করা হয়।

এ ঘটনার পর দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ওঠে সমালোচনার ঝড়। এর একপর্যায়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/ জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!