• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রথম পর্ব

শিক্ষক সংকটে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ায় শিক্ষা ব্যাহত


বিল্লাল হোসেন রাজু, কুমিল্লা জুন ৫, ২০১৭, ১১:১৬ এএম
শিক্ষক সংকটে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ায় শিক্ষা ব্যাহত

কুমিল্লা : পূর্ব বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ। কলেজটিতে শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

বর্তমানে কলেজটিতে ২৪০ জন শিক্ষকের প্রয়োজন থাকলেও  শিক্ষক পোষ্ট রয়েছে মাত্র ১৫৬ টি। ১৫ জন সংযুক্ত শিক্ষক সহ কলেজে মোট  শিক্ষক সংখ্যা ১৬৪। সংকট রয়েছে আরো ৭২ জন শিক্ষকের।  বর্তমানে কলেজে ২০টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৮টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু রয়েছে। বর্তমানে কলেজে  ২২ হাজার ৪শ ৬৮ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে।  প্রশাসনিকভাবে ডিগ্রি ও  উচ্চমাধ্যমিক শাখা এক হওয়া পাঠদান কার্যক্রমও একই সাথে পরিচালিত হয়। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য নেই বাড়তি কোন শিক্ষক।  যার ফলে ক্লাস নিতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষকদের। আবার শিক্ষার্থীরাও বঞ্চিত হচ্ছে গুণগত শিক্ষা থেকে।

জানা যায়, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর আছে এমন প্রতিটি বিভাগের জন্য ১২ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে এমন ১১ বিভাগেই রয়েছে চরম শিক্ষক সংকট। এদের মধ্যে পরিসংখ্যা বিভাগে রয়েছে ৩টি শিক্ষক পোষ্ট, প্রাণীবিদ্যায় ৬টি, উদ্ভিদবিদ্যায় ৬টি, গণিত ৬টি, ইতিহাস ৫টি,  দর্শন ৫টি, ইসলাম শিক্ষা ৫টি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে ৫টি, সমাজকর্মে ৬টি, ইংরেজী ১০টি ও সমাজবিজ্ঞানে ১০ টি শিক্ষক পোষ্ট রয়েছে।  

অপরদিকে শিক্ষার্থীদের  অভিযোগ রয়েছে অনেক বিভাগের শিক্ষক থাকার পরও নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না। এদের মধ্যে বিশেষ করে প্রদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, ইংরেজি, বাংলা ও  হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস না করায় শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট নির্ভর হতে হচ্ছে। একে কেন্দ্র করেই কলেজের আশপাশে গড়ে ওঠেছে অসংখ্য প্রাইভেট কোচিং সেন্টার।

বিশেষ করে ২০১৪ সালে যুক্ত হয় মার্কেটিং ও ফিনেন্স বিভাগ। ইতিমধ্যে নবাগত এই বিভাগের  শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরী করা হয়েছে নতুন ভবন।  এমনকি এ দুই বিভাগে পাঠদানের জন্য নেই কোন শিক্ষক। ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক দিয়ে চলছে মার্কেটিং বিভাগ ও হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক দিয়ে চলছে ফিনেন্স বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম। তাছাড়া বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আইসিটি । কিন্তু ডিজিটালের  এই যুগেও এই বিষয়ে নেই নির্ধারিত কোন শিক্ষক।

পরিসংখ্যান ও মার্কেটিং বিভাগের কয়েক জন শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের বিভাগে শিক্ষক না থাকায় কোন ক্লাস হয় না। যার ফলে আমাদের প্রাইভেটের উপর নির্ভর  হতে হয়। তারা আরো বলেন, আমাদের মধ্যে অনেকেরই প্রাইভেট পড়ার সামর্থ না  থাকায় ভাল ফলাফল সম্ভব হয় না।

ভিক্টোরিয়া কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ড.রাজু আহম্মেদ বলেন, শিক্ষানীতির পরিপত্রের বিধান কোন কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর চালু আছে এমন প্রতিটি বিভাগে ১৮ জন শিক্ষক থাকার সুপারিশ করা হয়েছে, না হয় কমপক্ষে ১২ শিক্ষক থাকাকে বধ্যতামূলক করা হয়েছে। কলেজের বর্তমান শিক্ষাকার্যক্রম স্বাভাবিকভাকে পরিচালনার জন্য কমপক্ষে  ৭২ জন শিক্ষক প্রয়োজন।  তিনি দাবি জানিয়ে বলেন ন্যাশানাল ইউনির্ভাসিটি কর্তৃপক্ষ ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠের শিক্ষক সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করবেন।  

কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মো.আবু তাহের বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা কয়েক বার যথাযথ কর্তৃপক্ষে নিকট  আবেদন পাঠিয়েছি। কর্তৃপক্ষ পদ সৃষ্টি না করলে আমাদের কিছু করার নেই। শিক্ষক সংকট সমাধানে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

তিনি আরো বলেন, উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রি শাখা দুটি আলাদা ক্যাম্পাসে হওয়ায় শিক্ষকদের ক্লাস নিতে অসুবিধা হচ্ছে। যার ফলে শিক্ষার্থীরাও বঞ্চিত হচ্ছে গুণগত শিক্ষার অধিকার থেকে। শিক্ষার্থীরা প্রায়শই অভিযোগ নিয়ে আসে। তাদের ক্লাস হয় না। তখন আমাদের কিছু বলার থাকে না। তিনি আশা ব্যাক্ত করে বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষ অল্পসময়ের মধ্যে এই সমস্যার সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা রাখবেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!