• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষক সঙ্কট : সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রমে


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ১৫, ২০১৬, ০২:০১ পিএম
শিক্ষক সঙ্কট : সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রমে

সোনালীনিউজ রিপোর্ট

অনেক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। মূলত পদ সৃষ্টি না করেই ওসব বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণি বা কলেজ চালু করায় এই সঙ্কটের সূত্রপাত। দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ে সবচেয়ে বড় ও মানসম্পন্ন সরকারি বিদ্যালয়েই একাদশ শ্রেণি চালু করা হয়েছিল। 

২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষ ও ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে দেশের সবচেয়ে বড় ১১টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণীতে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়। প্রথমে ওসব স্কুলে দু’তিন জন করে সরকারি কলেজের প্রভাষক পদায়ন বা পদায়নের উদ্যোগ নেয়া হলেও পরবর্তীতে আর কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি।

ফলে স্কুলগুলোতে দু’একজন কলেজ শিক্ষক পদায়ন হলেও তারা স্কুল শিক্ষকদের সাথে চাকরি করতে স্বস্তিবোধ করছে না। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।সগংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারি মাধ্যমি বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণী চালু করার প্রায় ৮ বছর পর আজও ওসব বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণির জন্য শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়নি।

যদিও এই শিক্ষক সঙ্কট নিরসনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) থেকে দফায় দফায় পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তব ফলাফল শূন্য। এ পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যেই ৩টি বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণীর শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ কওে দেয়া হয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠান জোড়াতালি দিয়ে অর্থাৎ স্কুল শিক্ষক ও খণ্ডকালীন বেসরকারী কলেজ শিক্ষক দিয়েই চালানো হচ্ছে।

সূত্র জানায়, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সরকারি কলেজগুলোতে ছাত্রছাত্রী ভর্তির সঙ্কুলান না হওয়া ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে প্রথমে রাজধানীর দু’টি স্কুলে একাদশ শ্রেণীতে পাঠদান চালু করা হয়। ওই দুটি প্রতিষ্ঠান হলো গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল এবং  শেরেবাংলা নগর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

পরবর্তীতে ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে আরো ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়। ওই স্কুলগুলো হলো- রাজধানীর শেরেবাংলা নগর সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়, মতিঝিল সরকাি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল, খুলনা জিলা স্কুল এবং বরিশাল জিলা স্কুল। পরে সুনামগঞ্জের সরকারি এসসি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং সিলেটের সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়েও একাদশ শ্রেণিতে পাঠদান চালু করা হয়।

কিন্তু শিক্ষকের পদ সৃষ্টি না হওয়ায় দু’তিন বছর পর খুলনা জিলা স্কুল, বরিশাল জিলা স্কুল ও সুনামগঞ্জ এসসি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণীর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। অথচ ১১টি মাধ্যমিক স্কুলে একাদশ শ্রেণীতে কেবল বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হয়। তারমধ্যে একাদশ শ্রেণী অর্থাৎ প্রথম বর্ষে ১৬০ জন এবং দ্বিতীয় বর্ষে ১৬০ জন কওে মোট ৩২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রমে স্কুল শিক্ষক ও একাদশ শ্রেণির কলেজ শিক্ষকদের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রেইও পরস্পর পরস্পরকে মেনে নিতে পারছেন না। কলেজ শাখার জন্য পৃথক শিক্ষক না থাকায় একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট টিউশনের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। আর প্রাইভেট টিউশনির লোভে পার্শ্ববর্তী বেসরকারি কলেজের শিক্ষকরা সম্মানী ভাতা ছাড়াই সরকারি স্কুলের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন।

বর্তমানে মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণিতে দুই শিফটে ১৫০ জন করে ৩০০ জন ছাত্র আছে। কিন্তু তাদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো শিক্ষক নেই। এ অবস্থায় স্কুল শাখার শিক্ষক দিয়েই ছাত্রদের পাঠদান করা হচ্ছে। বারবার দাবি জানানো হলেও কলেজ শাখার জন্য পদ সৃষ্টি হচ্ছে না।

এদিকে একাদশ শ্রেণির একাডেমিক কার্যক্রম তদারকির দায়িত্ব পালনের কথা মাউশির আঞ্চলিক উপ-পরিচালকদের (ডিডি)। তবে শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মতে- ১১টি স্কুলের একাদশ শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম তদারকি হচ্ছে না বললেই চলে। কারণ মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম তদারকি করতেই ডিডিদের হিমশিম খেতে হয়। 

পাশাপাশি সরকারি স্কুলে এমনিতেই ভয়াবহ শিক্ষক সঙ্কট রয়েছে। বর্তমানে দেশের ৩৩৩টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষকের পদ আছে দশ হাজার ছয়টি। তারমধ্যে ১ হাজার ৬৯১টি পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। ওসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় দুই হাজার কর্মচারীর পদও শূন্য। প্রায় ১শ’ বিদ্যালয়েই প্রধান শিক্ষক নেই। বিদ্যমান এই তীব্র শিক্ষক স্বল্পতার মধ্যেই সহকারী শিক্ষক দিয়ে নামকাওয়াস্তে স্কুলে কলেজ শাখার কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে মাউশির পরিচালক (বিদ্যালয়) অধ্যাপক এলিয়াস হোসেন শিক্ষক সঙ্কট প্রসঙ্গে বলেন, পদ সৃষ্টির জন্য দেয়া মাউশির প্রস্তাব পড়ে আছে। এখনো পদ সৃষ্টি হয়নি। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে একাদশ শ্রেণির পাঠক্রমের জন্য কয়েকজন শিক্ষককে সংযুক্ত হিসেবে পদায়ন করা হয়েছিল। কিন্তু তারা সেখান থেকে অন্যত্র বদলি হয়ে চলে গেছেন। বর্তমানে সমস্যা আরো বেড়েছে। এ অবস্থায় স্কুল শাখার যোগ্যতম শিক্ষকদের দিয়েই একাদশ শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। 

সোনালীনিউজ/আমা

Wordbridge School
Link copied!