• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষক সঙ্কটে সরকারি স্কুল-কলেজ চলছে জোড়াতালি দিয়ে


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ৩১, ২০১৬, ১২:২১ পিএম
শিক্ষক সঙ্কটে সরকারি স্কুল-কলেজ চলছে জোড়াতালি দিয়ে

তীব্র শিক্ষক সঙ্কটে ভুগছে সরকারি প্রাইমারি, হাইস্কুল ও কলেজগুলো। ফলে ওসব প্রতিষ্ঠানে জোড়াতালি দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫৫ হাজারেও বেশি শিক্ষকের পদ শূন্য। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানেই প্রয়োজনীয় শিক্ষকের অভাবে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাধ্য হয়েই অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক বিভাগের শিক্ষক অন্য বিভাগ চালাতে হচ্ছে। তীব্র শিক্ষক সঙ্কটের কারণে মফস্বলের সরকারি স্কুল-কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকের সঙ্কট সবচেয়ে বেশি। ওসব স্কুলের সহকারী ও প্রধান শিক্ষকের প্রায় ৫১ হাজার পদ শূন্য। আর সরকারি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের পদ খালি আছে ১ হাজার ৭৫০টি। তাছাড়া সরকারি কলেজের প্রভাষক থেকে অধ্যাপক পর্যায়ে প্রায় আড়াই হাজার পদে শিক্ষক নেই। বর্তমানে দেশে নতুন ও পুরনো মিলিয়ে ৬৩ হাজার ৪১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। 

ওসবের মধ্যে পুরনো সরকারি বিদ্যালয়ে শূন্যপদের সংখ্যা ৯৮২টি। আর জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়ে শূন্যপদ আছে ৪ হাজার ৮১৫টি। ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী ৩৫ হাজার সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য আছে। অবসর, মৃত্যু, ইস্তফাসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক শিক্ষকের পদ শূন্য হচ্ছে। তাছাড়া সারাদেশে বর্তমানে ৩৩৩টি সরকারি হাইস্কুল আছে। তাতে সহকারী শিক্ষকের ১০ হাজার ৬টি পদের মধ্যে ১ হাজার ৭৪৪টি শূন্য। 

প্রধান শিক্ষকের ৩২৪টি পদের মধ্যে ৮৪টিই খালি। ৯টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদই নেই। সহকারী প্রধান শিক্ষকের ৪৫৭টি পদের মধ্যে ৩৬৭টিই খালি। বাংলা, ইংরেজি ও গণিতে খালি পদ বেশি। সরকারি হাইস্কুলে চার বছর ধরে কোনো শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে না। ২০১২ সালের ১৫ মে সরকার ওসব স্কুলের সহকারী শিক্ষকের পদ তৃতীয় শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করে। 

তারপদ ওসব পদে নিয়োগের ক্ষমতা পিএসসির কাছে চলে যায়। তাছাড়া সারাদেশের ৩২৯টি সরকারি কলেজে মোট ১৬ হাজার ১৪১টি শিক্ষকের পদ আছে। তার মধ্যে গত এপ্রিলের হিসাব অনুযায়ী ৩ হাজার ৪৭৩টি পদই শূন্য। সবচেয়ে বেশি শূন্য প্রভাষকের পদ। তারপর অধ্যাপকের পদ বেশি খালি আছে।

সূত্র জানায়, সরকারি হাইস্কুলে ১ হাজার ৭৪৪টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য আছে। তার মধ্যে পিএসসির কাছে ৫০ শতাংশ হিসাবে ৮৭২টি পদ ৩৪তম বিসিএস থেকে পূরণের প্রস্তাব ছিল। কয়েকদিন আগে তার মধ্যে ৪৫০টি পদের জন্য প্রার্থী সুপারিশ করা হয়েছে। তাছাড়া ৩২৯টি সরকারি কলেজের মধ্যে ২১৮টিতে শিক্ষক সঙ্কট আছে। বিপরীত দিকে ঢাকা কলেজসহ ১২টি কলেজে শিক্ষক বেশি আছে। 

এ ধরনের সব কলেজই শহরাঞ্চলে অবস্থিত। যেমন- ঢাকা কলেজে ২০০ পদের বিপরীতে ২২৪ জন, তিতুমীর কলেজে ১৭৪ পদের বিপরীতে ১৯৮ জন, সরকারি বাঙলা কলেজে ১১৭ পদের বিপরীতে ১৪৫ জন, সরকারি বিজ্ঞান কলেজে ২৩ পদের বিপরীতে ৪১ জন শিক্ষক রয়েছেন। অথচ চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজে ৩৫ পদের মধ্যে ১২টি শিক্ষকের পদ শূন্য। আবেদন-নিবেদন করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। কষ্ট কওে সেখানে অনার্স-মাস্টার্স শ্রেণীতে সিলেবাস শেষ হয়। ঝিনাইদহের একটি কলেজে ৪৩ পদের বিপরীতে শিক্ষক আছেন মাত্র ১৮ জন।

সূত্র আরো জানায়, প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক পছন্দসই জায়গায় বদলি হওয়ার জন্য জোর তদবির চালাচ্ছেন। এমনকি অনেকে খোদ শিক্ষামন্ত্রীর কাছেও এ বিষয়ে ধর্না দিচ্ছেন। ওসব শিক্ষকের অধিকাংশই ঢাকাসহ বড় বড় শহরে আসতে আগ্রহী। অথচ সরকারি চাকরি করতে হলে সরকার যেখানে পদায়ন করে সেখানেই যাওয়ার নিয়ম। কিন্তু শিক্ষকরা নানা রকম ক্ষমতাবান লোক দিয়ে শহরে চলে আসছে। যা অন্যায় এবং শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য ক্ষতিকর।

এদিকে শিক্ষ সঙ্কট প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) মহাপরিচালক মো. আলমগীর জানান, সহকারী শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষক মিলিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৫১ হাজার পদ খালি আছে। তার মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ আছে ১৬ হাজার ৩৭৩টি। বিধি অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকের মোট পদের ৬৫ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করতে হয়। ৩৫ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ দেয়া যায়।

সরাসরি পূরণযোগ্য মোট পদ ৫ হাজার ৭৯৭টি। তার ৫০ শতাংশ বা ২ হাজার ৮৯৮টি পূরণের জন্য সম্প্রতি পিএসসিতে (সরকারি কর্মকমিশন) চাহিদা পাঠানো হয়েছিল। তার মধ্যে ৩৪তম বিসিএস থেকে ৮৯৮ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। তাছাড়া একদিকে যেমন চাহিদার তুলনায় সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না, অন্যদিকে শিক্ষকদের বিভিন্ন পক্ষের মামলার কারণেও পদোন্নতি দেয়া যাচ্ছে না। 

তবে সম্প্রতি পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের পদ পূরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওই লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পিএসসির মাধ্যমে শিগগিরই ওই সংক্রান্ত আদেশ আসতে পারে। তবে সম্প্রতি মামলায় জয়লাভের পরিপ্রেক্ষিতে প্যানেলভুক্ত শিক্ষকদের মধ্য থেকে শূন্যপদে নিয়োগ শুরু হয়েছে। 

অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান জানান, সরকারি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষকদের পদের শ্রেণী পরিবর্তন হওয়ায় মাউশি সরাসরি নিয়োগ দিতে পারছে না। ওই ব্যাপারে পিএসসির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। সরকারি কলেজের শিক্ষকের ক্ষেত্রেও তাই। সর্বশেষ ৩৪তম বিসিএস থেকে ৭৫০ জন কর্মকর্তা পাওয়া গেছে। আশা করা যায় পরবর্তী বিসিএসগুলো দ্রুত সম্পন্ন হলে শিক্ষক সংকট ধীরে ধীরে নিরসন হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!