• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষা প্রশাসনের শূন্য শীর্ষ পদে পদায়ন পেতে নানামুখী তদবির


সোনালীনিউজ রিপোর্ট মে ২, ২০১৬, ১২:১৭ পিএম
শিক্ষা প্রশাসনের শূন্য শীর্ষ পদে পদায়ন পেতে নানামুখী তদবির

বর্তমানে দেশের শিক্ষা প্রশাসনের বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পদই শূন্য। কিছুদিনের মধ্যে আরো কয়েকটি উচ্চপদ শূন্য হতে চলেছে। আর ওসব পদে পদায়ন পেতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চলছে নানামুখী তদবির। সেজন্য সরকারের বিভিন্ন প্রভাবশালীর কাছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা ধরনা দিচ্ছেন। আর তাদের পক্ষে মন্ত্রী, এমপি ও সরকারদলীয় নেতাদের তদবিরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সরগরম হয়ে উঠেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। এই প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব হচ্ছে সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অনিয়মের তদন্ত, নিরীক্ষা ও পরিদর্শন। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পরিচালক পদটি শূন্য রয়েছে। আর গত ডিসেম্বর থেকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান পদ শূন্য রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ড. মিয়া ইনামুল হক সিদ্দিকী (রতন সিদ্দিকী) এতোদিন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু চার মাস শূন্য থাকার পর সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে রাজধানীর সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ নারায়ণ চন্দ্র সাহাকে প্রেষণে ওই পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শূন্য হয়ে গেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদটি।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড ইভল্যুয়েশন) অধ্যাপক হরষিত বালা সম্প্রতি অবসরে চলে যাওয়ায় শিক্ষা প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ওই পদটিও শূন্য রয়েছে। আর আগামী জুলাই মাসেই শূন্য হতে যাচ্ছে মাউশির মহাপরিচালকের পদটিও।
সূত্র জানায়, ডিআইএর দায়িত্ব পেতে রাজধানীর একাধিক সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ চেষ্টা-তদবির চালাচ্ছেন। তবে ধারণা করা হচ্ছে অবসরে যাওয়া অধ্যাপক মফিক উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়াকেই ওই পদে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হতে পারে। তার চুক্তি নিয়োগের প্রস্তাব ইতিমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান পদটি গত ডিসেম্বর মাস থেকেই শূন্য।
তবে প্রতিষ্ঠানটির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ড. মিয়া ইনামুল হক সিদ্দিকী (রতন সিদ্দিকী) এতোদিন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ চার মাস সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে রাজধানীর সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ নারায়ণ চন্দ্র সাহাকে প্রেষণে ওই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই পদের জন্য রাজধানীর একাধিক সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষরা চেষ্টা-তদবির চালান।
তাছাড়া বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ পদ শূন্য হওয়ায় ওই পদের জন্যও প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। তাছাড়া ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদ শূন্য পদে পদপ্রত্যাশীর সংখ্যাও বিপুল। তবে ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ মো. মাহবুবুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং ইতিমধ্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এই সংক্রান্ত নথিতে স্বাক্ষর করেছেন। অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানের পক্ষে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন তদবির করেছিলেন বলে জানা যায়।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড ইভল্যুয়েশন) পদটিও শূন্য রয়েছে। আর একই প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক পদটিও আগামী কিছুদিনের মধ্যে শূন্য হতে চলেছে। এ অবস্থায় মাউশির মহাপরিচালকের পদ পেতে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের সরকার সমর্থক কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে।
বর্তমান মহাপরিচালক প্রফেসর ফাহিমা খাতুনের চাকরির মেয়াদ আগামী ৪ জুলাই শেষ হচ্ছে। ইতিমধ্যে তিনি চাকরির মেয়াদপূর্তির বিষয়ে শিক্ষা সচিব বরাবর অবহিতপত্র পাঠিয়েছেন। শিগগিরই ওই পদে নিয়োগের জন্য নাম প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। এ অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ওই পদের জন্য এখন চলছে জোর লবিং।
রাজনৈতিক আনুকূল্য পেতে চলছে বিভিন্ন পর্যায়ে দেন-দরবারও। কেউ কেউ ছাত্রজীবনে রাজনীতির অভিজ্ঞতার প্রমাণ ও পারিবারিক সংশ্লিষ্টতাও তুলে ধরছেন সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে। মাউশির মহাপরিচালকের পদটি অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার এবং তা বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদ। শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিবেচনায় মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধার দিক থেকেও পদটি খুবই আকর্ষণীয়।
ওই পদে নিয়োগের জন্য সরকারপ্রধানের অনুমোদন প্রয়োজন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই পদে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে। নিয়ম অনুযায়ী, শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের মধ্য থেকে চাকরির জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে মহাপরিচালক নিয়োগের কথা থাকলেও ১৪-১৫ বছর ধরে রাজনৈতিক বিবেচনায়ই ওই পদে নিয়োগ প্রাধান্য পেয়েছে।
এদিকে মাউশিতে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ বহু পুরনো। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সাড়ে ১৪ হাজার কর্মকর্তার নিয়োগ-বদলি-পদোন্নতি, টাইম স্কেল, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা বোর্ডসহ সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে প্রেষণে নিয়োগ দেয়ার দায়িত্ব মাউশির ওপরে। পাশাপাশি সারাদেশের সাড়ে ৬ হাজার বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিয়োগ, এমপিওভুক্তি, টাইম স্কেলসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা এই কার্যালয়ের।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওই প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক পদে নিয়োগ পেতে সরকার-সমর্থক শিক্ষকরা জোর লবিংয়ে নেমেছেন। ইতিমধ্যে মাউশির মহাপরিচালকের পদের জন্য রাজনৈতিক তদবির বেশ জোরালো হয়ে উঠেছে। অসংখ্য পদপ্রত্যাশীর মধ্য থেকে ওই পদের জন্য ৪ জনের নাম শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হতে পারে।
অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মাউশির মহাপরিচালক পদের জন্র যে ৪ জনের নাম প্রস্তাব করা হতে যাচ্ছে তারা সবাই রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী প্রার্থী। তবে ধারণা করা হচ্ছে বর্তমান মহাপরিচালক প্রফেসর ফাহিমা খাতুনকে আরো একবার ওই পদে নিয়োগ দেয়া হতে পারে। কারণ তিনি প্রশাসনিকভাবে অভিজ্ঞ ও সৎ। ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবেও তার অভিজ্ঞতা রয়েছে।তাছাড়া তিনি খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের ছোট বোন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক এপিএস র আ ম উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরীর সহধর্মিণী।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, মাউশির ডিজি পদ একটি অত্যন্ত সম্মানজনক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার নীতিনির্ধারণী পদ। ওই পদে সরকার যোগ্য লোককেই নিয়োগ দেবে। তবে এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আমা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!