• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার্থী নেই, তবু নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন!


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ১৯, ২০১৭, ১০:৫৯ পিএম
শিক্ষার্থী নেই, তবু নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন!

ঢাকা: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আসনের অভাবে ভর্তি হতে পারচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা। অথচ মাত্রাতিরিক্ত খরচ, যোগ্য শিক্ষকের অভাব ও বিতর্কের কারণে আসন অনুযায়ী শিক্ষার্থী পাচ্ছে না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। প্রায় অর্ধেক আসনপ্রতি শিক্ষাবর্ষে খালি থাকছে।

শিক্ষার গুণগত মান ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে শিক্ষার্থীদের সেভাবে আকৃষ্ট করতে পারছে না অনেক প্রতিষ্ঠান। কোন প্রতিষ্ঠান কখন বন্ধ হয়ে যায়, এ আশঙ্কাও আছে। বাস্তব এ প্রেক্ষাপটের মধ্যেও প্রতি বছর যোগ হচ্ছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে জানা যায়, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গত ও চলতি বছরের মধ্যে আবেদন জমা পড়েছে শতাধিক। এগুলোর মধ্যে ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয় চলতি বছর অনুমোদন পেতে পারে। দলীয় ও রাজনৈতিক বিবেচনায় বেশির ভাগ অনুমোদন পাচ্ছে বলে অভিযোগ। কোনো কোনো উদ্যোক্তার শিক্ষা সম্পর্কিত খাতে কোনো কার্যক্রম নেই। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে বাণিজ্য শুরু করেন কি না-এ আশঙ্কাও করেন ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তারা।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দেশের জন্য একটি বিরাট সম্ভাবনাময় খাত। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে ব্যয় বেশি হওয়ায় অনেকে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করতে হবে।’

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার প্রসার কাম্য। কিন্তু এতগুলো নতুন বিশ্ববিদ্যালয়কে সুষ্ঠুভাবে শিক্ষা দেয়ার জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে কি না, সেটাও বিবেচনা করা দরকার।’

ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৬ ঘেঁটে দেখা যায়, শিক্ষা কার্যক্রম চলমান ৮৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫ সালে আসন ছিল দুই লাখ ৭৯ হাজার ৮৯০টি। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে এ আসনসংখ্যা বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।

নির্ধারিত আসনের বিপরীতে ২০১৫ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী পায় মাত্র এক লাখ ২০ হাজার ৮৪২ জন। এ হিসাবে ওই বছর ৫৭ শতাংশ আসন খালি ছিল। নর্থ সাউথ ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আসনসংখ্যা প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই।

খোঁজ নিলে জানা যায়, হাতেগোনা চার থেকে পাঁচটি ছাড়া বাকি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নির্দিষ্ট আসন অনুপাতে শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। ২০১৪ সালে শিক্ষাকার্যক্রমে ছিল ৭৫টি বিশ্ববিদ্যালয়। ওই বছর আসন ছিল দুই লাখ ৩৫ হাজার দুটি। তবে সব বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে ওই শিক্ষা বছর এক লাখ ২১ হাজার ১৯৪ জন শিক্ষার্থী পায়।

খালি ছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৮০৮টি আসন। ২০১৩ সালে শিক্ষাকার্যক্রমে ৬৮টি বিশ্ববিদ্যালয়। তখন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলে আসন ছিল দুই লাখ ১৪ হাজার ৩৬৯টি। ওই বছর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পায় মাত্র এক লাখ ১৯ হাজার ৭৬৫ জন শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষাবর্ষে আসন খালি ছিল শতকরা ৪৪ ভাগ।

ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি বছরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরো কমার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। জঙ্গি হামলার সঙ্গে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সম্পৃক্ততার খবরে অনেক অভিভাবক উদ্বিগ্ন। এ ছাড়া গত বছরের নভেম্বরে ইউজিসি এক বিজ্ঞপ্তিতে ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ অবৈধ বলে ঘোষণা করে।

এক সপ্তাহের মধ্যে ইউজিসি ওই ঘোষণা থেকে সরে এসে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সনদ গ্রহণযোগ্য বলে বিবৃতি দেয়। এর পরও ওই ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে অনেক অভিভাবক বিভ্রান্তিতে আছেন। এসব প্রতিষ্ঠানে তারা সন্তানকে ভর্তি করাতে রাজি হচ্ছেন না।

সূত্র জানায়, পুরনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যথেষ্ট শিক্ষার্থী না পেলেও থেমে নেই নতুন অনুমোদন। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন জেলা মিলিয়ে ১৭টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় এ বছর অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। অনুমোদন চেয়ে আবেদন জমা পড়েছে শতাধিক।

প্রস্তাবিত ১৭টি অনুমোদন পেলে এখনকার ৯৫টিসহ দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়াবে ১১২টি। ১৯৯২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দুই দশকে অনুমোদন পায় ৫২টি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে অনুমোদন পায় ৪৩টি।

ইউজিসি সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রাজধানীতে চারটি, গাজীপুরে দুটিসহ চাঁদপুর, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলায় প্রতিষ্ঠার কথা আবেদনপত্রে উল্লেখ করেছেন উদ্যোক্তারা।

এগুলোর মধ্যে আছে-খুলনার সোনাডাঙ্গায় ‘খুলনা খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি’, রাজশাহীতে ‘আহসানিয়া মিশন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিনাইরে ‘ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়া’, ঢাকার মিরপুরের সেনপাড়া পার্বতায় ‘সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’, চাঁদপুরের বাবুরহাটে ‘অ্যাপোলা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’, পটুয়াখালীর লাউকাঠিতে ‘সাউথ রিজন ইউনিভার্সিটি’, ময়মনসিংহের ক্রিস্টাপুরে ‘রওশন এরশাদ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ’,

ঢাকার মহাখালীতে ‘ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি’, গাজীপুরে ‘কামাল উদ্দিন আহমেদ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’, সিলেটে ‘আরটিএম আল কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি’, রংপুরে ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ‘ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্স বাংলাদেশ’, রাজধানীর বনানীতে ‘ইউনিভার্সিটি অব মডার্ন টেকনোলজি’ এবং রংপুরের মিঠাপুকুরে ‘নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি, রংপুর’।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!