• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিগগির মন্ত্রিসভায় রদবদল


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১৯, ২০১৭, ০১:০৭ পিএম
শিগগির মন্ত্রিসভায় রদবদল

ঢাকা : শিগগির মন্ত্রিসভায় রদবদল হতে পারে। চলতি মাসের শেষের দিকে অথবা আগস্টের পর সেপ্টেম্বরে এ রদবদল হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ শোকের মাসে আওয়ামী লীগ শোকের কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। শাসক দলের উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন সূত্র এমন আভাস দিয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) ঢাকার মহাখালীর সেতু ভবনে অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, একটা রিশাফল বোধ হয় হতে পারে। তবে কোন সময় হবে, কী হবে, সেটা আমি ঠিক জানি না। একটা রিশাফল হতে পারে। তবে তিনি বলেন,এটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার.. কাকে তিনি রাখবেন, কাকে বাদ দেবেন অথবা এই মুহূর্তে একটা রিশাফল করবেন কি না?

মন্ত্রিসভায় রদবদল হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিলেও উপ-প্রধানমন্ত্রী পদ সৃষ্টির বিষয়টিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই গুঞ্জনের বিষয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,উপ-প্রধানমন্ত্রী এটা স্রেফ একটা গুজব। এটার কোনো বাস্তবতা নেই। এটা একেবারে ভিত্তিহীন মিথ্যা কথা।

আওয়ামী লীগ সূত্রগুলো জানায়, সরকার গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গতি আনার জন্য অন্তত প্রতি বছরেই মন্ত্রিসভায় একটু রদবদল আনা হয়। এতে সরকারের কাজে গতি আসে। সিটিং মন্ত্রীরা কাজের বিষয়ে আরো আন্তরিক হন। কিন্তু বর্তমান মন্ত্রিসভায় দীর্ঘদিন কোনো রদ-বদল হচ্ছে না। মন্ত্রিসভায় একটি রদবদল আসন্ন একথা আওয়ামী লীগ ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের সবাই একবাক্যে স্বীকার করছেন; তবে কে বাদ যাবেন আর কে নতুন যুক্ত হতে পারেন সে বিষয়ে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। মন্ত্রিসভায় এ যোগ-বিয়োগের বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর ল্যাপটপবন্দি।

শাসক দলের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা আলাপকালে বলেন, বর্তমান মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়বেন খুব কম মন্ত্রী। দু’-একজন প্রতিমন্ত্রীর পদোন্নতি হতে পারে। নির্বাচনকে সামনে রেখে মন্ত্রিসভার কলেবর বাড়ার সম্ভাবনা বেশি। এতে দলের সাংগঠনিক নেতাদের জায়গা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যাতে করে সরকারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেও সহজ হয়।

নতুন মুখ দেখা যেতে পারে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পরিবার (জনসংখ্যা) ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে আলাদা করা হতে পারে। সেখানে একজন নতুন মন্ত্রী দেখা যেতে পারে। অনুরূপ ডাক ও টেলিযোগাযোগ আলাদা করে একজন নতুন মন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হতে পারে। স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও দুই ভাগ হবে। তথ্য মন্ত্রণালয় এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী দেয়া হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা এসব বিষয় তাদের রাজনৈতিক অনুমান নির্ভরতা থেকে বলেছেন। তারা জানান, এর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই।

বর্তমান সরকারের মেয়াদ প্রায় সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় পার করেছে। এই মেয়াদে অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীই বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। এর মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে জোর-জবরদস্তিরও অভিযোগ আছে। মন্ত্রণালয়ের কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগ আছে অনেকের বিরুদ্ধে। পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়দের জন্য খবর হয়েছেন অনেকেই। এর পাশাপাশি অনেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অদক্ষতা ও নিজ জেলায় বলয় সৃষ্টি করে পুরো রাজনীতি নিজের আত্মীয়-স্বজনের পকেটস্থ করার অভিযোগ রয়েছে। অনেকে আদালতকে জড়িয়ে বক্তব্য দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। এসব বিষয়গুলো সামনে রেখেই ক্ষমতার মেয়াদের শেষের দিকে এসে এবার মন্ত্রিসভায় রদবদলের সম্ভাবনা আবারো উঁকি দিচ্ছে। আবার দু’-একজন প্রতিমন্ত্রী অনেক ভালো কাজ করেছেন। তাদের পদোন্নতিও হতে পারে। সরকারের সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ঘুরে ঘুরে মন্ত্রিদের বিভিন্ন গ্রেডিং-এ মার্কস দিয়ে রেখেছেন তার নোটবুকে। ‘এ’ গ্রেড পাওয়া মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন। ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডের আট-দশ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর কপাল পুড়তে পারে।

গত বছরের অক্টোবরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের পর থেকেই মন্ত্রিসভায় রদবদলের কথা আলোচনায় আসে। এরপর সরকারের দুই বছর পূর্তিতেও এই আলোচনা জোরদার হয়। কিন্তু বাস্তবে তা আর হয়নি। সর্বশেষ মাসখানেক আগে মন্ত্রিসভার এক বৈঠক থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ইঙ্গিত দেন ওবায়দুল কাদের।

২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি শপথ নেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৯ মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী ও দুই উপমন্ত্রী। এই মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির তিনজন, ওয়ার্কার্স পার্টির ও জাসদের একজন করে স্থান পান। ওই বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় মন্ত্রিসভার কলেবর বৃদ্ধি পায়। শপথ নেন এএইচ মাহমুদ আলী ও নজরুল ইসলাম। এর মধ্যে হজ নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে অক্টোবরে বাদ পড়েন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। পরের বছরের ১৪ জুলাই মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ করে নুরুল ইসলাম বিএসসিকে যুক্ত করা হয়। পদোন্নতি পেয়ে মন্ত্রী হন ইয়াফেস ওসমান ও আসাদুজ্জামান খান কামাল। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তারানা হালিম ও নুরুজ্জামান আহমেদ। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সরিয়ে স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব দেয়া হয় খোন্দকার মোশাররফ হোসেনকে। প্রথমে সৈয়দ আশরাফকে দফতরবিহীন, পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

 

Wordbridge School
Link copied!