• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিবচরে খাঁচায় মাছ চাষে সফলতা


মাদারীপুর প্রতিনিধি অক্টোবর ২০, ২০১৬, ০৮:৩৫ পিএম
শিবচরে খাঁচায় মাছ চাষে সফলতা

মাদারীপুর : মাদারীপুরের শিবচরের আড়িয়াল খাঁ নদীতে খাঁচায় করে মাছ চাষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। জলাভূমিতে অল্প জায়গায় খাঁচা করে করে ভাগ্য বদল করেছে অনেক যুবক। শিবচরে প্রথম খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রচলন করেন মৎস চাষী তানজিল আহমেদ। আড়িয়াল খাঁ নদের এক শাখা নদী শিবচরের কোল ঘেঁষে পুলিয়া নামক এলাকার জলাভূমিতে দীর্ঘদিন ধরেই এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সফল হয়েছেন তিনি। বর্তমানে তার এ পদ্ধতি দেখে অনেকেই জলাভূমিতে খাঁচা করে মাছ চাষ শুরু করেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাজী শরিয়ত উল্লাহ সেতুর উত্তর-পশ্চিমে শিবচরের শেষ সীমানায় আড়িয়াল খাঁ নদের শাখা নদী, যা অনেক দিন পূর্বে মূল নদীই ছিল। বর্তমানে স্থানীয়দের কাছে মরা নদী বলে খ্যাত এই নদীতে চলছে খাঁচা পদ্ধতিতে মৎস চাষ। শিবচরের তানজিল আহমেদ প্রথমে মাছ চাষ শুরু করলেও বর্তমানে স্থানীয় অনেক যুবকই শুরু করেছে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ। ফলে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে অনেক যুবকই এখন মুক্ত বলে মাছ চাষী যুবকেরা জানান।

স্বল্প জায়গায় খাঁচায় করে অধিক পরিমানে মাছ চাষ করা যায় এ পদ্ধতিতে। ফলে সহজেই অধিক পরিমানে মাছ চাষ করে ছয় থেকে সাত মাসের মধ্যেই এ মাছ বাজারে বিক্রির উপযোগী হয়।

গত ১৪/১৫ বছর আগে চর পরে আলাদা একটি নদী হয়ে যায় আড়িয়াল খাঁ নদের একটি অংশ। তবে আলাদা নদী হলেও মূল নদীর সঙ্গে সরাসরি সংযোগ নেই এই নদীর। শুধু বর্ষা মৌসুমে অনেক ঘুরে মূল নদী থেকে পানি আসে এই মরা নদীতে। কিন্তু কোন স্রোত নেই এই নদীর অংশে। 

শিবচরের কোল ঘেঁষে ফরিদপুরের ভাংগা উপজেলার পুলিয়া ও চান্দ্রা এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদীতে খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছেন শিবচরের তানজিল আহমেদ নামের এক যুবক। প্রায় চার বছর ধরে নদীর এই অংশে খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখেছেন তিনি।

এছাড়াও তারই পরামর্শে শিবচরের উৎরাইল এলাকার আড়িয়াল খাঁ নদীতে গত এক বছর ধরে চলছে খাঁচায় মাছের চাষ। এখন এখানে বড় আকারের দুটি খাঁচা রয়েছে।

খাঁচায় মাছ চাষে সফল যুবক তানজিল আহমেদ জানান, একুশে টেলিভিশনের একটি প্রোগ্রাম দেখে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। পরে স্বল্প পরিসরের ঠিকাদারি ব্যবসা ছেড়ে চাঁদপুরের একটি মৎস্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ শেষ করে নিজ এলাকায় ফিরে আড়িয়াল খাঁর মরা নদের এ অংশে খাঁচায় শুরু করেন মাছ চাষ। প্রায় ৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে একটি ফ্রেমে ত্রিশটি খাঁচা তৈরি করেন তিনি। প্রতিটি খাঁচার গভীরতায় ৬ ফুট,পাশে ১০ এবং লম্বায় ২০ ফুট। প্রতিটি খাঁচাতে তিনি মনোসেক্স তেলাপিয়া জাতের মাছ চাষ করছেন। বছরের জুলাই মাসে ০.২ মি.মি. সাইজের পোনা মাছ কিনে খাঁচার মধ্যে লালন করতে শুরু করেন। পাঁচ মাসের মধ্যেই মাছ বিক্রির উপযুক্ত হয়। সাধারণত ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম হলেই স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দেন। স্থানীয় বাজারে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা খুচরা মুল্যে কেজি দরে বিক্রি হয় এ মাছ।

খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের সুবিধা জানতে চাইলে তিনি জানান, খাঁচা পদ্ধাতিতে মাছ চাষ করতে পুকুরের প্রয়োজন হয় না। এ ধরনের জলাশয়ে একাধিক খাঁচা করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা যায়। তাছাড়া বড় ধরনের বিনিয়োগ মুলত একবারেই করতে হয়। সাধারণত খাঁচা তৈরী করতেই খরচ বেশি পড়ে যায়। তবে খাঁচা তৈরির পরে দীর্ঘদিন এই একই খাঁচা ব্যবহার করা যায়। ত্রিশটি খাঁচার মাছের জন্য প্রতিদিন এক বস্তা করে খাবার লাগে বলে জানান তিনি।

তার এই মাছ চাষের পদ্ধতি দেখে স্থানীয় অনেক বেকার যুবক উৎসাহ পাচ্ছেন। এমনকি এই নদীতেই আরো একাধিক যুবকেরা খাঁচা করে ইতোমধ্যে মাছ চাষ শুরু করেছেন।। শিবচরে আড়িয়াল খা নদীর বিভিন্ন অংশে যেখানে যেখানে পানির  স্রোত নেই এবং উপজেলা বিভিন্ন এলাকার জলাভুমিতে এ পদ্ধতিতে হচ্ছে মাছের চাষ। এতে করে বেকার যুবকেরা আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে সহজ শর্তে ব্যাংক লোনের সুবিধা থাকলে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে অনেক যুবকই স্বাবলম্বী হতে পারে।

শিবচর উপজেলা মৎস্য অফিস জানায়, খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষে অনেক সুবিধা। এতে অল্প জায়গায় অনেক মাছ চাষ করা সম্ভব। এ মাছের চাহিদাও স্থানীয় বাজারে ব্যাপক।  এবং এতে চাষীরা সফলও হচ্ছে। তাছাড়া উপজেলা মৎস অফিস এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহীদের সহযোগিতাও করে থাকে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম
 

Wordbridge School
Link copied!