• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পীর পাশে শিল্পী...


মিতুল আহমেদ, বিনোদন প্রতিবেদক নভেম্বর ১৮, ২০১৬, ০৫:০১ পিএম
শিল্পীর পাশে শিল্পী...

ঢাকা: অসুস্থ, বিপন্ন, দুরারোগ্যব্যাধীতে আক্রান্ত মৃত্যুপথযাত্রী শিল্পীদের কথা প্রায়শই গণমাধ্যমে শোনা যায়। আর্থিক অনটনের শিকার হয়ে চিকিৎসার অভাবে মারাও গেছেন কেউ কেউ। কিন্তু এখন পর্যন্ত শিল্পীদের স্বার্থ রক্ষায় কোনো ধরনের ট্রাস্টি বা ফান্ডিংয়ের কোনো ধরনের মহতি উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। বিচ্ছিন্নভাবে হয়তো শিল্পীদের কেউ কেউ সহায়তা করেছেন কিন্তু কোনো ধরনের সমন্নয় ছিল না কারো মধ্যেই। তবে আনন্দ সংবাদ হচ্ছে, অপেক্ষাকৃত পরে হলেও বিপন্ন শিল্পীদের নামে ফান্ডিং তৈরিতে গঠিত হচ্ছে ‘শিল্পীর পাশে ফাউন্ডেশন’। যার প্রধান সমন্নয়ক ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আনিসুল হক। বাংলাদেশের শিল্পাঙ্গনের সব সেক্টর থেকে আর্টিস্টরা যুক্ত থাকবেন সংগঠনটির সাথে।

১৯ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করছে ‘শিল্পীর পাশে ফাউন্ডেশন’। দুপুর বারোটা থেকে শুরু হতে যাওয়া রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে এদিন বাংলাদেশের শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রায় সব বিভাগ থেকেই আর্টিস্টদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। আর এদিন শিল্পীর পাশে ফাউন্ডেশন’ সংগঠনটি দুরারোগ্যব্যাধীতে আক্রান্ত শিল্পী ও মিউজিশিয়ান লাকী আখন্দ ও বাংলার প্রভাবশালী সুরকার আলাউদ্দিন আলীকে অর্থ তোলে দিবে বলে জানিয়েছে ইভেন্টটির আয়োজক এরশাদুল হক টিঙ্কু।   

শিল্পীর পাশে ফাউন্ডেশন সম্পর্কে জানিয়ে সোনালীনিউজকে তিনি বলেন, অসুস্থ আর্টিস্টদের জন্য মূলত এই সংগঠনটি গড়ে তোলা হচ্ছে। আর্থিকভাবে অসচ্ছ্ল শিল্পী যারা ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে অবস্থান করছেন তাদের স্বার্থে কাজ করবে সংগঠনটি। শুধু যে কণ্ঠশিল্পী তা কিন্তু নয়। আর্টিস্ট বলতে যা বোঝায়, মানে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি অঙ্গনের বিপন্ন মানুষের সহায়তায় কাজ করবে শিল্পীর পাশে ফাউন্ডেশন। তাদের চিকিৎসায় অর্থ যুগান দিতেই এই উদ্যোগ। যাতে বাংলার কোনো শিল্পীকে অন্যের কাছে হাত পাততে না হয়।

‘শিল্পীর পাশে ফাউন্ডেশন’ আগামিতে আরো বড়ো পরিকল্পনা নিয়ে আসছে জানিয়ে এরশাদুল হক টিঙ্কু আরো জানান, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আরো বিস্তৃত। বিশেষ করে আগামি ফেব্রুয়ারিতে দুস্থ বিপন্ন শিল্পীদের সহায়তা করতে বিশাল কনসার্টের আয়োজন করবে সংগঠনটি। কনসার্টটি আর্মি স্টেডিয়ামে হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে সেখানে না হলে সামরিক যাদুঘরেই হবে। এ উদ্যোগটিও নিয়েছেন মেয়র আনিসুল হক। শুধু তাই না, ফান্ডিং কালেকশনের এই কনসার্টে অংশ নিবে বাংলাদেশের অসংখ্য তারকা শিল্পী যা আগে কেউ কখনো দেখেনি। যারা এখানে পারফর্ম করবেন তারা সবাই বিনা পয়সায় গাইতে এরইমধ্যে রাজিও হয়েছেন। বিনা পারিশ্রমিকে বাংলাদেশের আর্টিস্টদের পাশে দাঁড়াবে বাংলাদেশের সব সেক্টকেরর স্বণামধন্য খ্যাতিমান শিল্পীরা।

১৯ নভেম্বরে হোটেল ওয়েস্টিনের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এটা শুধু আনুষ্ঠানিকতা। পনেরো মিনিটের একটি এক্সিভিশন হবে। আর এখানেই লাকী ভাই ও আলাউদ্দিন আলীকে ‘শিল্পীর পাশে ফাউন্ডেশন’ থেকে অর্থ তোলে দেয়া হবে। অনুষ্ঠানে লাকি ভাই উপস্থিত থাকবেন। তিনি হয়তো গাইবেন না, কারণ তার গাওয়ার অবস্থাটা নাই এখন। তবে তার ব্যান্ড হ্যাপী টাচ অনুষ্ঠানে গাইবে। এছাড়া আলাউদ্দিন আলীও গাইতে পারেন। আগত শিল্পীদের অনেকেই গাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। আসলে ওই মুহূর্তের উপর নির্ভর করবে সবকিছু। 

লাকী আখন্দ ও আলাউদ্দিন আলীকে যে অর্থ তোলে দেয়া হচ্ছে তার ব্যবস্থা কিভাবে হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন কর্পোরেট হাউজগুলোর চ্যারিটি ফান্ড থেকে এই অর্থ নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকও যুক্ত রয়েছে।

‘শিল্পীর পাশে ফাউন্ডেশন’-এ এরইমধ্যে ট্রাস্টি হিসেবে যুক্ত হয়েছেন বাংলাদেশের সব খ্যাতনামা কবি, লেখক, শিল্পী, সুরকার এবং চলচ্চিত্রকাররা। বিশেষ করে সংগঠনটি ট্রাস্টিদের যে তালিকা দিয়েছে তাদের মধ্যে আছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, আসাদুজ্জামান নূর, সেলিনা হোসেন, মোস্তফা মনোয়ার, অধ্যাপক সৈয়দ মনজরুল ইসলাম, ফেরদৌসি রহমান, জাফর ইকবাল, আবুল খায়ের লিটু, অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, আলী যাকের, সৈয়দ আব্দুল হাদী, ফরিদুর রেজা সাগর, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু এবং মেয়র আনিসুল হক প্রমুখ। 

সাম্প্রতিক সময়ে লাকী আখন্দ, কাঙালিনি সুফিয়া, আলাউদ্দিন আলী কিংবা কবি হেলাল হাফিজ ছাড়াও বেশ কয়েকজন শিল্পীকে চিকিৎসা নিয়ে অর্থ সহায়তা বা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে দেখা গেছে। কিন্তু এমন অনেক শিল্পীই আছেন যারা আত্মসম্মান নিয়ে নিরবে নিজের মধ্যে ভয়ঙ্কর রোগ সয়ে যাচ্ছেন। দিনে দিনে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে লোকসঙ্গীতের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করা শিল্পী ও কালজয়ী গানের গীতিকার আবদুল গফুর হালী এবং সৈয়দ গোলাম আম্বিয়া। লোকগানের দুই মানুষই এখন মৃত্যুর জন্য দিন গুনছেন। তাদের চিকিৎসার জন্য কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তার আশ্বাস নিয়ে কেউ এখন পর্যন্ত এগিয়ে আসেনি।  

যেহেতু কারো কাছে হাত পেতে সহায়তা চাওয়া একজন শিল্পীর জন্য আত্মমর্যাদার প্রশ্ন। ফলে কোনো শিল্পীই একেবারে দুরাবস্থার শিকার না হলে কারো কাছে হাত পাতেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন বেঁচে থাকাটা জরুরিই হয়ে উঠে তখন কিছু করার থাকে না বলেই অর্থ সহায়তা চান। কিন্তু এবার যদি ‘শিল্পীর পাশে ফাউন্ডেশন’ শিল্পীদের এই দুরাবস্থাগুলো যথাযথভাবে দেখভাল করে তাহলে হয়তো শিল্পীদের এই দুর্দশা কিছুটা হলেও কমবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিএ

Wordbridge School
Link copied!