শিশুদের জেহাদি শিক্ষার পাঠ দিচ্ছে জঙ্গিরা

ঢাকা : দূরে বেঞ্চের উপর পড়ে রকেট লঞ্চার। পাশেই আত্মঘাতী জঙ্গির বিস্ফোরক বেল্টের একাংশ। আর কয়েকটা বই। হাওয়ায় উল্টে যাচ্ছে পাত। তাতে বন্দুক হাতে এক ব্যক্তি। তলায় লেখা ‘স্নাইপার’। পাশে আরও একটি বন্দু। তলায় লেখা ‘গান’। মসুলের অনাথাশ্রমের এই ছবিই সম্প্রতি প্রকাশ্যে এল।

আইএস পরিচালিত এতিমখানায় অনাথাশ্রমে এভাবেই চলছে জেহাদি শিক্ষার পাঠ। না জেনেই সেই পড়া মুখস্থ করছে শতশত অনাথ শিশু। গত বছরের শেষে সেনা অভিযানে মসুলের অধিকাংশ স্থানই দায়েশের হাতছাড়া হয়। তবে শহরের কিছু কিছু অঞ্চলের রাজদণ্ড আজও বাগদাদি বাহিনীর হাতে। আর সেখানে এখনও জারি করা হয় শিশুদের মগজধোলাইয়ের কাজ।

ব্রিটিশ সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’-জানিয়েছে, পশ্চিম মসুলে বন্দি প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ শিশু। অবিলম্বে তাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিসেবা চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন সংস্থার পরিচালক মরিজিও ক্রিভালেরো। পূর্ব মসুলে রয়েছে ‘জুহুর’ নামের ওই অনাথাশ্রম। পরিচালনা করে ইসলামিক স্টেটের ফিদায়েঁরা। আশপাশের বহু শিশুই পড়তে আসে সেখানে। আসে পড়শি সিরিয়ার সীমান্ত অঞ্চলের অনাথ শিশুরাও। বয়স ৩ থেকে ১৬-র মধ্যে। বেশিরভাগই হয় শিয়া নয় ইয়াজিদি। পরিচালকদের কাছে এরা ‘খিলাফতের ছানা’। প্রথম প্রথম জুহুর-এ এসে তারা মা-বাবার জন্য কান্না জুড়ত। তবে যত দিন গিয়েছে কট্টরপন্থী সুন্নি জেহাদি আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছে তারা। শুকিয়েছে চোখের জল। ‘আমির’দের (গুরু) দেখানো পথেই ঘেন্না করতে শুরু করেছে শিয়া ও ইয়াজিদি পরিবারকে। মা-বাবা তাদের কাছে হয়ে উঠেছে ‘অধার্মিক ঘৃণ্য বস্তু’।

বইতে নেই ‘এ ফর অ্যাপেল, বি ফর বল’। বদলে রয়েছে ‘এ ফর ‘আর্মি’, বি ফর ‘বুলেট’, ‘বম্ব’, ‘গান’, ‘মর্টার’, ‘মার্টিয়ার’, ‘স্নাইপার’ ইত্যাদি জেহাদ ও যুদ্ধ সংক্রান্ত শব্দ। ‘উওম্যান’ বোঝাতে পাশে প্রতিকৃতিহীন কালো রং। অর্থাৎ নিকাবে ঢাকা মাথা। বইয়ে আবছা করে দেওয়া হয়েছে ‘আঙ্কল’, ‘আর্মি’-র মতো শব্দগুলির পাশের ছবিও। কোনো কোনো শব্দ আবার ছবিহীন। শরিয়ত অবয়ববিরোধী বলেই। চতুর্থ শ্রেণির পাটিগণিত বইয়ে দেয়া অঙ্কও (ইক্যুয়েশন) রাইফেল আকৃতির! অঙ্ক বইয়ের ছত্রে ছত্রে যুদ্ধের চিত্রকল্প। তাতে ‘পবিত্র’ জেহাদি ও কাফেরের সংখ্যা নির্ণয় করতে দেয়া হয়। ইতিহাস বই জুড়েও ইসলামের উপর অত্যাচার, মুসলিমদের পাল্টা জেহাদ, রক্তপাতের কাহিনি। ছেলে ও মেয়েদের আলাদা আলাদা ক্লাসরুম। কিশোর ছাত্রদের পাঠিয়ে দেয়া হয় পশ্চিম মসুলের তেল আফর-এ। তারা নাকি মাঠে নেমে জেহাদে শামিল হওয়ার বয়সে পৌঁছে গিয়েছে। ছ’মাসের ক্যাম্প শেষে কালাশনিকভ কাঁধে জুহুর-এ ফেরে তারা। ছোট ভাই-বোনদের কাছে হয়ে ওঠে আদর্শ। এভাবেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ওদের দিতে পারেনি কিছুই। উল্টে কেড়ে নিয়েছে মা-বাবা, একটা ঝলমলে শৈশব। আর বোধ হয় জীবনবোধও। সূত্র-সংবাদ প্রতিদিন

সোনালীনিউজ/এমটিআই