• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতি থেকে সঙ্গীতশিল্পী কেনেডি


বাবুল হৃদয় ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৮, ০৪:৩৪ পিএম
রাজনীতি  থেকে সঙ্গীতশিল্পী কেনেডি

সঙ্গীতশিল্পী ও ‘চাতক’ ব্যান্ডের মেইন ভোকাল শাহরিয়ার শামস কেনেডি

ঢাকা: ‘আমি শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে নরসিংদিতে ক্রসফায়ারের তালিকায় ছিলাম। আমার এক বন্ধু ক্রসফায়ারে পড়ে। আরেক বন্ধু ক্রসফায়ারে পা হারায়। ২০টি মামলার আসামি ছিলাম আমি। ১৯৯১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত নরসিংদির এমপি ছিলেন আমার বাবা শামসুদ্দীন আহমেদ এছহাক। এমপির পুত্র বলে চারদিক থেকে টাকা আসতো।

সারাদিন নেশায় মজে থাকতাম। ঘুম ছাড়া সারাক্ষণ নেশার ঘোরে থাকতাম। এলাকায় যাকিছু ঘটতো আমার নির্দেশেই ঘটতো। আমার কিছু বন্ধু ছিল, সবাই আমার কথা শুনতো। ওদের সঙ্গে নিয়ে নানা অপকর্ম করতে করতে আমার ডাক নাম হয়ে গেল বড় সন্ত্রাসী। কোনো থানা-পুলিশ মানতাম না। একমাত্র বাবাকে ছাড়া কাউকে ভয় পেতাম না।’ সোনালীনিউজ কার্যালয়ে এসে এভাবেই শিল্পী হওয়ার গল্প জানালেন সঙ্গীতশিল্পী ও ‘চাতক’ ব্যান্ডের মেইন ভোকাল শাহরিয়ার শামস কেনেডি।

সঙ্গীতশিল্পী শাহরিয়ার শামস কেনেডির সঙ্গে আলাপ করছেন সোনালীনিউজের বিনোদন বিভাগের প্রধান বাবুল হৃদয়

কেনেডি বলেন, এখন আর আগের মতো নেই। কালো থেকে সাদা হয়ে গেছি। শুধু গান নিয়ে আছি। গানই ধ্যানে-জ্ঞানে। সব মামলা চুকিয়ে ফেলেছি। একটিও মামলা আর নেই।

সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছেড়ে গানের লাইনে এলেন কিভাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে কেনেডি বলেন, ২০০৫ সালে বাবা মারা গেলেন। বাবার মৃত্যুর পরপরই জীবনে শুরু হয় নতুন ঝড়। ওয়ান ইলেভেনে ক্ষমতায় আসে নতুন সরকার। বিশেষ ক্ষমতায় প্রথমেই গ্রেপ্তার হই আমরা চার ভাই। সাড়ে তিনমাস জেলে থাকি আমি। মজার বিষয়- এসময় জেলে গিয়ে পরিচয় হয় কুষ্টিয়ার এক লালনগুরুর সঙ্গে। জেল থেকে বের হয়ে নরসিংদি ছাড়ি।  

২০০৮ সালে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে কুষ্টিয়া চলে যাই। সেখানে লালনশাইজীর ভক্ত সাধকদের সঙ্গে মিশে মিশে লালন ভক্ত হয়ে যাই। এখান থেকে কালো জীবন থেকে সাদা জীবনে ফিরে আসি। এরপর থেকেই গানে জড়িয়ে পড়ি। 

এছাড়া পরিবারে বাবা গান লিখতেন ও সুর করতেন। তিনি বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার ও সুরকার ছিলেন। তার ৪ হাজারের বেশী গান রয়েছে। মা গান করতেন। গানের পোকাটা আসলে পরিবার থেকেওে ঢুকেছে। ছোটবেলা থেকেই হাতে একটা গিটার থাকতো। পারতাম আর না পারতাম, টুংটাং করে বাজাতাম। এভাবে বন্ধুদের সঙ্গে টুকটাক স্টেজ শো করে কিছুটা পরিচিতি পেলেও গানের মুল পোকাটা ধরে কুষ্টিয়া থেকেই।

সঙ্গীতশিল্পী শাহরিয়ার শামস কেনেডি

এখন লালন সঙ্গীত নিয়ে কাজ করছেন কেনেডি। তার ‘চাতক’ ব্যান্ড নামে একটি ব্যান্ড রয়েছে। দলে পাঁচজন সদস্য রয়েছে। লিমন, শান্ত, নূর পলক ও কেনেডি। লালনের গান নিয়েই তারা পার্ফমেন্স করছেন। কেনেডি বলেন, ‘আমাদের এখন নতুন অ্যালবামের কাজ চলছে। সবকটি গানই থাকছে লালনের। ২০১৫ সালে ‘সহজ মানুষ’ শিরোনামে ‘চাতক’ ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম বাজারে আসে। শ্রোতারা আমাদের গানগুলো শুনেছিল।’

আগামীর ভাবনা নিয়ে কেনেডি বলেন,  আমি রাজনৈতিক বংসের ছেলে। রাজনীতি থেকে গায়ক হয়েছি। গান, বিশেষ করে লালনশাইজীর গান নিয়ে এগোতে চাই। গানের ভেতরেই ডুবে থাকতে চাই।

এমপি পুত্র হয়েও সন্ত্রাসী লাইনে গেলেন কিভাবে? এমন প্রশ্নে কেনেডি বলেন, রাজনৈতিক পরিবারের ছেলে। বাবা সারাদিন রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকতো, মা সংসার নিয়ে। জনগণ নিয়েই তাদের কাজ। আমাদের নজর দেয়ার সময় কই তাদের? যে কারণে কিছুটা বখে গেলাম।

প্রাথমিক পাস করে ঢাকায় এসে হোস্টেলে উঠলাম। ঢাকা থেকে এসএসসি পাস করে ১৯৯৮ সালে নরসিংদি সরকারি কলেজে ভর্তি হই। কলেজ সংসদের এজিএস হলাম। ছাত্র রাজনীতি করতে গিয়ে এখানকার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। ক্ষমতা কারে বলে? এমপির পুত্র বলে টেন্ডাবাজি করতে হয়নি, চারদিক থেকে এমনিতেই টাকা আসতো। অস্ত্র আর কাঁচা টাকাই আমাকে নষ্ট করে দিয়েছিল।

সোনালীনিউজ/বিএইচ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!