• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেকড় সন্ধানী গ্রাম বাংলার নবান্ন উৎসব


বিনোদন প্রতিবেদক নভেম্বর ১৫, ২০১৬, ০৬:০৩ পিএম
শেকড় সন্ধানী গ্রাম বাংলার নবান্ন উৎসব

ঢাকা: গ্রাম বাংলার ঋতু প্রকৃতির প্রতি কার না টান আছে! কিন্তু কখনো কখনো যান্ত্রিক সভ্যতা এতো আষ্টেপিষ্টে ধরে যে বাংলার মাটির রূপ রস গন্ধ সব ভুলিয়ে দেয়। এমন ভুলিয়ে দেয়া কৃত্রিমতাকে ধাক্কা দিয়ে বুঝিয়ে দিতেই বোধয় বারবার ফিরে আসে একেবারে শেকড়ের সন্ধান করা বিভিন্ন লোক উৎসব। বাংলাদেশকে বলা হয় বারো মাসে তের পার্বণের দেশ। প্রকৃতপক্ষে উৎসবের দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশে প্রচলিত উৎসবের মধ্যে পহেলা বৈশাখের কথা বাদ দিলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নবান্ন উৎসব।

নবান্ন উৎসবের মূল বিষয় প্রায় সবারই জানা। কারণ গ্রাম বাংলার সংস্কৃতির সাথে নবান্ন উৎসব উতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। নবান্ন মানে নতুন অন্ন। নতুন ফসল ঘরে তোলা উপলক্ষে কৃষকরা এই উৎসব পালন করে থাকেন। অগ্রহায়ন মাসের প্রথম দিনে এই উৎসব অতি উৎসাহে পালন করে তারা। কারণ এই সময়ে আমন ধান কাটা হয়। এই নতুন ধানের চাল দিয়ে রান্না উপলক্ষে নবান্ন উৎসব হয়ে থাকে। কোন কোন অঞ্চলে ফসল কাটার আগে বিজোড় সংখ্যক ধানের ছড়া কেটে নিয়ে ঘরের চালে বেঁধে রাখে এবং বাকী অংশ চাল করে নতুন চালের পায়েশ করে নবান্ন করে থাকে। গবেষকদের মতে কৃষি প্রথা চালু হবার পর থেকে নবান্ন উৎসব পালন হয়ে থাকে। তবে ৪৭ এর দেশভাগের পর এই উৎসব ধীরে ধীরে কদর হারাতে থাকে।

নবান্ন উৎসব এর অন্যতম প্রথা হচ্ছে কাকবলি। একটি কলার ডোগায় নতুন চাল, কলা, নারকেল নাড়ু কাককে খাওয়াতে হয়। প্রচলিত বিশ্বাস হচ্ছে কাকের মাধ্যমে ওই খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌঁছে যায়। এই নিয়ে ছড়া আছে। ছোট ছেলে-মেয়েরা ছড়া কেটে দাড় কাককে নিমন্ত্রণ কর:
কো কো কো,
আমাগো বাড়ি শুভ নবান্ন
শুভ নবান্ন খাবা, কাকবলি লবা,
পাতি কাউয়া লাঠি খায়,
দাড় কাউয়া কলা খায়,
কো কো কো,
মোর গো বাড়ি শুভ নবান্ন

নবান্ন উৎসবের প্রচলন গ্রামে গঞ্জে এখনও হলেও শহরে সংস্কৃতিতে এই বিষয়টি যেনো বড়ই বেমানান। তবু নগর সংস্কৃতিতে বুঁদ হয়ে বাংলার হাজার বছরের কৃষ্টি-কালচার ভুলতে বসা নবপ্রজন্মকে মাটির কাছে ফিরিয়ে নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় যেন সব প্রাণ মিলেছে শেকড়ের খোঁজে। মঙ্গলবার সকাল ৮টায় জাতীয় নবান্ন উৎসব উদযাপন পর্ষদ আয়োজিত ‘এসো মিলি সবে নবান্ন উৎসবে’ শিরোনামের উৎসবের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

নবান্ন উৎসবটিও যে পহেলা বৈশাখের মতোই একটি অসাম্প্রদায়িক উৎসব সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, এ উৎসবে এসে কি জাতি, কি ধর্ম, কি বর্ণ- তা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আজ আমরা এক দেহে লীন হয়ে গেছি। আজ আমাদের সবার একটাই পরিচয়, আমরা বাঙালি। এই তো উৎসবের মাহাত্ম্য। নবান্ন কথন পর্বে অংশ নেন উৎসব উদযাপন পরিষদের কো-চেয়ারম্যান শুভ রহমান, চেয়ারম্যান লায়লা হাসান।

বক্তব্য দেন উৎসবের সহযোগী ল্যাবএইডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম শামীম। চারুকলার বকুলতলায় নবান্ন উৎসবে শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশনা। এর আগে সকাল ৭টায় এস এম মোর্তজা বশীর মুরাদের বংশীবাদনে শুরু হয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র পরিবেশন করে দেশাত্মবোধক গান ‘সুন্দর সুবর্ণ তারুণ লাবণ্য’।

সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর ‘আবার জমবে মেলা হাটখোলা’-গণসংগীত পরিবেশনার পর নৃত্য পরিবেশনায় আসে নৃত্যজন।  ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী গারোদের নাচের দল আচিক নাচের মুদ্রায় তুলে ধরে জুম চাষের নানা পদ্ধতি। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নন্দন কলাকেন্দ্র ও কাঁদামাটি। দলীয় সংগৗত পরিবেশন করে আনন্দন, বহ্নিশিখা, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।  একক সংগীত পরিবেশন করেন ফরিদা পারভিন, তানভির সজিব, অনিমা রায়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিএল

Wordbridge School
Link copied!