ফোটেনি কদম
প্রথম আষাঢ়ে
বৃষ্টিও নেই
রিমঝিম সুরে
তবুও তোমায়
স্বাগত জানায়
তাপিত হৃদয়
মেঘবতী সুরে
ফোটেনি চামেলি
জুঁই আর বেলী
সুরভিত নয়
আমাদের রাত
তবুও জানাই
স্বাগত তোমায়
দূর করে দাও
সব অপঘাত
তোমাকে খুঁজছে
চাতকের চোখ
খরতাপে কাঁপে
বৃক্ষের শাখা
সব তৃষ্ণায়
তুমি হে আষাঢ়
ভেজাও স্বদেশ
ভেজাও পতাকা।
দুঃখবতী একটি মেয়ের গল্প বলি শোনো
গল্প বলি গল্প অনেক আঙুল দিয়ে গোনো
এই মেয়েটির দুঃখ অনেক কোথায় করি শুরু
তার কথাটি উঠলে মনে বুক যে করে দুরু
এই মেয়েটি বাহান্নতে ভাষার দাবী বুকে
দিয়েছিলো জিন্না মিয়ার আগ্রাসী হাত রুখে
এই মেয়েটি একাত্তরে স্বাধীনতা চেয়ে
ঢেলেছিলো রক্ত বুকের স্বাধীন গানটি গেয়ে
এই মেয়েটি আজও দেখি কষ্ট নিয়ে বুকে
দিনেরাতে অকারণে মরছে ধুকে ধুকে;
এই মেয়েটি মা যে আমার এই মেয়েটি সব
এই মেয়েটি ঘিরেই আমার যত কলরব
এই মেয়েটি মাটি আমার এই মেয়েটি আশা
এই মেয়েটি ঘিরেই আমার যত ভালোবাসা।
এই মেয়েটির বুকে এতো কষ্ট কেনো বলো
এই মেয়েটির চোখে কেনো অশ্রু টলোমলো
এই মেয়েটি বাংলাদেশ ভাবতে অবাক লাগে!
তাকেই তবু জড়িয়ে আছি গভীর অনুরাগে!
জন্ম নিয়ে পাবে তুমি ডানো
মায়ের দুধের আকাল ভীষণ, জানো!
জেনে রাখো আজকে নতুন শিশু
আঁচলে নয়, মুখ মোছাবে টিস্যু
ঘুমের জন্যে কোল পাবে না তুমি
শূন্য আকাশ যাবে কেবল চুমি
খেলনা দিয়ে মন ভোলানো খেলা
খেলার ভেতর পার হবে যে বেলা
একটু বেড়ে কিশোর হবে যখন
দোলনা হবে হাতছাড়া যে তখন
এ-ঘর, ও-ঘর খুঁজবে তুমি মাকে
মায়ের মতো পাবে নতুন যাকে
মা সেতো নয়, বুয়া কিংবা আয়া
বৃথাই খোঁজা তার কাছে সে মায়া
এমনি করে কাটবে কিশোর বেলা
দেখবে কেবল মন ভোলানো খেলা
মাকে মেরে, বাবা যাবেন বারে
বিসণ্নতা চাপবে তোমার ঘাড়ে
খুঁজবে বাঁধন, বাঁধন পাবে নাতো
দিনের সাথে ফসকে যাবে রাতও
তোমায় কেবল ভালোবাসে যারা
বলছে তারাই, হঠাৎ জাগুক পাড়া
পাড়া জাগুক, পাড়া জাগুক, পাড়া
ঘর ফিরে পাক- সকল হতচ্ছাড়া!
কাঁদছে শিশু স্বাধীন দেশের আস্তাকুড়ে
লক্ষশিশু ঘুরছে দেখি রাস্তাজুড়ে।
মিনতি তারা, তারাই দেখি রিকশা ঠেলে
এই আমাদের কেউ-বা তাদের ফিক্কা ফেলে।
কারখানাতে তাদের হাতেই রক্ত ঝরে
ওষুধ ছাড়াই দিন কাটে তার শক্ত জ্বরে।
যখন তাদের যাবার কথা শিক্ষাঘরে
বাধ্য হয়ে তারাই তখন ভিক্ষা করে।
অধিকারের দিনটি যখন অন্ধকারে
নেতায়-নেতায় তখনও যে দ্বন্দ্ব বাড়ে।
ওদের নিয়ে আর কত যে কাব্য হবে!
নিজের মতো সবাই তাদের ভাববো কবে?
রাজনীতি অ্যাটরেট জনগণ ডটকম
আমাদের হেড হবে আর কবে হট কম?
জনগণ থাকে নাতো নেতাদের চিন্তায়
খুনে খুনে দেশটার সারারাত দিন যায়
গরিবের ভাবনায় আমাদের থট কম
রাজনীতি অ্যাটরেট জনগণ ডটকম
জনতার ছাউনিতে কারা দেয় রড কম?
মজুরের বাড়া ভাতে ছাই দিতে যারা চায়
গরিবের মস্তক ঝোল ক’রে তারা খায়
অপরাধে আইনের তাই এতো কট কম
রাজনীতি অ্যাটরেট জনগণ ডটকম
ভালোবাসা অভিনয়ে ওনাদের নট কম
ভালো পথে কেউ নেই, এই পথে জট কম
কেউ গড়ে পাকাঘর কারো চালে চট কম
রাজনীতি অ্যাটরেট জনগণ ডটকম
নেতাদের ইশারাতে বিশ বারো ভাগ হয়
তাতে যদি জনতার খুব বেশি রাগ হয়
সেই রাগে রাজনীতি খুনোখুনি নট কম
রাজনীতি অ্যাটরেট জনগণ ডটকম।
শেখ নজরুল : জন্ম সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামে। বাবা প্রয়াত স্কুল-শিক্ষক নূরুল ইসলাম এবং মা রাশিদা খানম। শেখ নজরুল ভ্রমণ করেছেন আমেরিকা, জাপান, চীন বেলজিয়াম, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, হংকং, ভারত ও অন্যান্য বেশ কয়েকটি দেশ। পেয়েছেন শেরেবাংলা স্বর্ণ পদক (১৯৯৩), সাতক্ষীরা জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (২০০৯), স্বাধীনতা ফাউন্ডেশন পুরস্কার (২০১২)। প্রকাশিত গ্রন্থ ৪১টি। প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই ‘যতক্ষণ তুমি মাধবী’।
কাব্যগ্রন্থ : ‘পাঁজরের মানচিত্রে অনেক নদী’, ‘কষ্টের অনুবাদ’, ‘মা ও জোনাক তারার কাব্য’, ‘অষ্টধাতুর মাদুলি’, ‘আমার খুনের তালিকায় জোছনাও আছে’, ‘মলাটবন্দি চেতনার কফিন’, ‘মেঘ সম্পাদনা’, ‘মীমাংসিত মৃত্যু অমীমাংসিত জীবনে’, ‘নারীনিধি’, ‘রাষ্ট্র বনাম একা’, ‘আপেল কাটা ছুরি’, ‘গোলাপি দরজা’, ‘পতাকায় ফাল্গুন মানচিত্রে বসন্ত’, ‘ফুলশুমারি’, ‘আমাদের ভদ্র হবার গল্প’, ‘এখন তুই মাঠ’, ‘আমি খেলছি’, ‘গোলাপেও দুর্দিন ফোটে‘।
ছড়াগ্রন্থ : ‘কার ঘাড়ে কে চড়ে’, ‘ফন্দিফিকির’, ‘কাঠমোল্লা’, ‘রাজনীতি এ্যটরেট জনগণ ডটকম’, ‘বুকের ভেতর বাংলাদেশ’, ‘বৃষ্টিকাব্য’, ‘বন্ধুকাব্য’, ‘মুঠির ভেতর আগুন ঝরে কার’, ‘সময়ের কাব্য’, ‘হায় পাখি’, ‘ছড়া বসন্ত’।
গল্পগ্রন্থ : ‘গ্লাসভাঙা দুপুর’।
আখ্যানকাব্য : ‘রাজাকারনামা’।
প্রবন্ধ : ‘গল্প রাতে নাটক সকালে’
তথ্যগ্রন্থ : ‘আন্তর্জাতিক দিবস জাতীয় ভাবনা’
সম্পাদিত গ্রন্থ : ‘আমার স্বপ্ন আমার স্বাধীনতা’, ‘কবিতায় বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধুর কবিতা’, ‘দুই বাংলার মুক্তিযুদ্ধের নির্বাচিত কবিতা’।
সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি
আপনার মতামত লিখুন :