• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শেখ নজরুলের কাব্যত্রয়


সাহিত্য সংস্কৃতি ডেস্ক আগস্ট ২৭, ২০১৬, ০৬:৪৯ পিএম
শেখ নজরুলের কাব্যত্রয়

আমারও পূর্ণ সমর্থন আছে

আমারও পূর্ণ সমর্থন আছে
মৌমাছি তুমি হুল ফোটাও
তোমার কষ্টে গড়া মৌচাক ভেঙে
তাবৎ নির্মম নির্লজ্জ মধু আরোহনে
কি অধিকার ছিলো?
তোমার মধুতে বীর্যের ঘনত্ব যত না বেড়েছে
তারও চেয়ে বাড়িয়ে দিয়েছে চোখের লাল

আমারও পূর্ণ সমর্থন আছে
গোখরো আয়, একবার বিষ ঝেড়ে যা
ব্যাংকে জমানো টাকায় যখন আমার অধিকার
তোর সঞ্চিত বিষ ভেঙে ভেঙে
আমার ক্যান্সার নিরাময়ের প্রেমিক হবার
কি অধিকার ছিলো?
তোর ফণার নৃত্যে যত না নাচুনি হয়েছি
তারও বেশি কোমর দুলিয়েছে পূর্ণিমার রাত!

আমারও পূর্ণ সমর্থন আছে
গোলাপ তুমি কাঁটায় রক্তাক্ত করো
এ খুনের হাত দিয়ে কখনও যেনো
প্রেম নিবেদনের সাহস না করি!

রক্তাক্ত বালিশে ভিজছে, নিজেরই মস্তক!

হাসবার কথা মানুষের
অথচ দেখো, হাসছে মৃত্যু
জীবন হবে প্রবহমান নদী
অথচ দেখো, রক্ত-গঙ্গার
আনন্দ নৃত্য!

তবুও কী সব নির্লজ্জের মতো
আজও রাত জেগে, কবিতা লিখি
পাখিময় আগামীর গল্প বলি
তাজমহল দর্শনের সুপারিশ দিই
অথচ ভাবছি না কখনও

বৃক্ষের সবুজ পাতাগুলো ঝরে গেছে
তাতে শোভা পাচ্ছে, চকচকে ছুরি
গোলাপের কুঁড়ি থেকে ফুটছে-
চাপাতির ধারালো স্পর্ধা!

কী ভয়ানক ঘুম আসে, চোখে আজও
বুঝতে চাই না, রক্তাক্ত বালিশে ভিজছে
নিজেরই মস্তক!

খুব গাঁ-ঘেষে দাঁড়াই জীবনের প্রয়োজনে

কিছুদিন আগেও তো এমন ছিলো না
একটি পাখির মৃত্যুতেও মন কেঁদে উঠতো
একটি মৃত বৃক্ষের জন্য বুক হাহাকার করতো
একটি শুকিয়েযাওয়া পুকুরের জন্য কান্না জাগতো
এমনও তো হয়েছে একা একটি ঘাসফুলের সঙ্গে
ভর দুপুরে কাটিয়েছি কিছুটা সময়
ভ্রমরের সুর আরোপ করেছি, নিজের ঠোঁটে

কিছুদিন আগেও তো এমন ছিলো না
প্রেম ছিলো আরাধ্য, নারী ছিলো পূজনীয়
মানুষ মানুষের খুব গাঁ-ঘেসে দাঁড়াতো
একজন হেসে উঠতো আরেক জনের ঠোঁটে
একজন নত হতো আরেক চোখের প্রার্থনায়

কিছুদিন আগেও তো এমন ছিলো না
ছিলো না মৃত্যুর খাতে সামান্য প্রণোদনা!

শেখ নজরুল : 
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামে জন্ম কবি শেখ নজরুলের। বাবা প্রয়াত স্কুল-শিক্ষক নূরুল ইসলাম এবং মা রাশিদা খানম। শেখ নজরুল ভ্রমণ করেছেন আমেরিকা, জাপান, চীন বেলজিয়াম, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, হংকং, ভারত ও অন্যান্য বেশ কয়েকটি দেশ। পেয়েছেন শেরেবাংলা স্বর্ণ পদক (১৯৯৩), সাতক্ষীরা জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (২০০৯), স্বাধীনতা ফাউন্ডেশন পুরস্কার (২০১২)। প্রকাশিত গ্রন্থ ৪১টি। প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই ‘যতক্ষণ তুমি মাধবী’।
কাব্যগ্রন্থ : ‘পাঁজরের মানচিত্রে অনেক নদী’, ‘কষ্টের অনুবাদ’, ‘মা ও জোনাক তারার কাব্য’, ‘অষ্টধাতুর মাদুলি’, ‘আমার খুনের তালিকায় জোছনাও আছে’, ‘মলাটবন্দি চেতনার কফিন’, ‘মেঘ সম্পাদনা’, ‘মীমাংসিত মৃত্যু অমীমাংসিত জীবনে’, ‘নারীনিধি’, ‘রাষ্ট্র বনাম একা’, ‘আপেল কাটা ছুরি’, ‘গোলাপি দরজা’, ‘পতাকায় ফাল্গুন মানচিত্রে বসন্ত’, ‘ফুলশুমারি’, ‘আমাদের ভদ্র হবার গল্প’, ‘এখন তুই মাঠ’, ‘আমি খেলছি’, ‘গোলাপেও দুর্দিন ফোটে‘।
ছড়াগ্রন্থ : ‘কার ঘাড়ে কে চড়ে’, ‘ফন্দিফিকির’, ‘কাঠমোল্লা’, ‘রাজনীতি এ্যটরেট জনগণ ডটকম’, ‘বুকের ভেতর বাংলাদেশ’, ‘বৃষ্টিকাব্য’, ‘বন্ধুকাব্য’, ‘মুঠির ভেতর আগুন ঝরে কার’, ‘সময়ের কাব্য’, ‘হায় পাখি’, ‘ছড়া বসন্ত’।
গল্পগ্রন্থ : ‘গ্লাসভাঙা দুপুর’।
আখ্যানকাব্য : ‘রাজাকারনামা’।
প্রবন্ধ : ‘গল্প রাতে নাটক সকালে’
তথ্যগ্রন্থ : ‘আন্তর্জাতিক দিবস জাতীয় ভাবনা’
সম্পাদিত গ্রন্থ : ‘আমার স্বপ্ন আমার স্বাধীনতা’, ‘কবিতায় বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধুর কবিতা’, ‘দুই বাংলার মুক্তিযুদ্ধের নির্বাচিত কবিতা’।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!