• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২১, ২০১৬, ০৮:২৪ পিএম
শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে বিএনপি

ঢাকা: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন-নাসিক নির্বাচনে এবার আর বর্জন নয়, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভোটে থাকবে বিএনপি। কোনো অবস্থায়ই ভোট শুরুর আগে অথবা ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন বর্জন করার কোনো ইচ্ছা নেই দলটির। দলের একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এদিকে ফল ঘোষণা পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বুধবার (২১ ডিসেম্বর) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান।

এছাড়াও দলের একাধিক নেতা জানান, নাসিক নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বিএনপি। এই নির্বাচনে পরাজিত হলে কারচুপি, ভোট ডাকাতি, অনিয়মকে ইস্যু করে বিএনপির প্রধান দাবি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন আদায়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে দলটি। এ জন্য নাসিক নির্বাচনের ইতিবাচক ফসল ঘরে তুলতে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে কড়া নজরদারির দায়িত্ব পালন করছেন খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি মর্যাদার লড়াই হিসেবে নিয়েছে নাসিক নির্বাচনকে। তাই অতীতের নির্বাচনগুলোর মতো তারা ভোটের মাঝামাঝিতে নির্বাচন বর্জন করবে না। বরং ফলাফল বিপক্ষে গেলে, প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে দলটি। আর এমন অভাস মিলেছে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা একজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে আলাপকালে।

বিএনপির হাইকমান্ডের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, নাসিক নির্বাচনে জয়-পরাজয় যা-ই হোক, তা কাজে লাগাতে চায় বিএনপি। ভোটে ধানের শীষের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান জয়লাভ করলে, দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলকে বিএনপি বোঝাতে সক্ষম হবে, সরকারের জনপ্রিয়তা নিম্নমুখী।
সরকার গায়ের জোরে রাষ্ট্রক্ষমতায় টিকে আছে। আর আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী জয়লাভ করলে সেটাও বিএনপির পক্ষেই আসবে। কারণ সরকার যদি ভোট ডাকাতি ও গায়ের জোরে আইভীকে বিজয়ী করে, তাহলে সরকারের স্বরূপ উচিত হবে। এ থেকে প্রমাণিত হবে, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়। ফলে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে খালেদা জিয়ার দেয়া প্রস্তাবের পক্ষে জনমত বা আন্দোলন গড়ে তোলা দলটির জন্য সহজ হবে।

নাসিক নির্বাচনে ভোট প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিকে দেশের মানুষ তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সেখানে জনগণ তাদের ভোটটি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় আছে। দেশে নির্বাচনব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য আরো বলেন, দেশে এখন আর নির্বাচন নেই, আছে নির্বাচনী প্রকল্প। আর এই প্রকল্পের কাজ হচ্ছে ক্ষমতাসীন প্রার্থীদের জোর করে জিতিয়ে দেয়া।

এদিকে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নাসিক নির্বাচনে ভোট বর্জনের প্রশ্নই আসে না এবং এ নির্বাচনে বিএনপি শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে এটাই দলীয় সিদ্ধান্ত। ভোটে কোনো ধরনের কারসাজি হলে ‘নারায়ণগঞ্জবাসী ও ভোটাররা তা মোকাবিলা করবে’ বলেও সতর্ক করেন রিজভী। নির্বাচন কমিশন শেষবেলায় একটা অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

অপরদিকে দলটির সিনিয়র এক নেতা বলেন, দুই দফা সরকারবিরোধী আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর বিএনপি কার্যত ঘরে বসে গিয়েছিল। সভা-সমাবেশের অনুমতি না পেয়ে দলীয় কার্যক্রম শুধু সংবাদ সম্মেলনের মধ্যেই ছিল সীমাবদ্ধ। নাসিক নির্বাচনের কারণে সেই অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। এবার এই নির্বাচনের ফলাফল এবং ক্ষমতাসীনদের কর্মকাণ্ড বিএনপিকে নতুন ইস্যু তৈরিতে সুযোগ করে দেবে। আর সেভাবেই দলের পরবর্তী কৌশল ঠিক করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিভিন্ন দলের সাতজন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেও মূল আলোচনা চলছে আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং বিএনপির সাখাওয়াত হোসেন খানকে নিয়ে।

২০১১ সালের নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে ভোটের আগের রাতে দলের সিদ্ধান্তে ভোট বর্জন করে সরে আসেন বিএনপির প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই নেতা এ কে এম শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াৎ আইভী মেয়র পদে লড়েছিলেন। তবে দলীয় সমর্থন শামীম ওসমানের পক্ষে থাকলেও ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন আইভী। আর বর্জনের পরও বিএনপির তৈমূর আলম খন্দকার সাড়ে সাত হাজার ভোট পেয়েছিলেন।

অরাজকতার আশঙ্কা বিএনপির-
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না বলে আবারও আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে বিএনপি। নির্বাচনের মাত্র ২০ ঘণ্টা আগে বুধবার দুপুরে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ ভালো থাকলেও জনমন থেকে অস্বস্তি ও শঙ্কা দূর হয়নি।

তিনি বলেন, আজকে (বুধবার) পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনী পরিবেশ বাহ্যিক দৃষ্টিতে শান্তিপূর্ণ থাকলেও ভয় ও নির্ভয়ের সংশয়ের দোলাচলে মানুষ ভুগছে। সব ধরনের নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নিকট অতীত যেহেতু সুখকর নয়, সেহেতু মানুষের মধ্যে কিছুটা সংশয় থাকলেও এই সংশয়ের মধ্যেই নির্বাচনের দিন নারায়ণগঞ্জের ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমরা বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পারছি যে, সিটি করপোরেশন এলাকার আশপাশে শাসক দলের ক্যাডাররা নাকি অবস্থান করবে। প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষ কায়দায় নির্বাচনের দিন তারা বিভিন্নভাবে তাদের প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করবে। ইতিমধ্যে কিছু কিছু এলাকায় তাদের আনাগোনার খবরও আমরা পাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আরো বলেন, নির্বাচনে ভোট গ্রহণের সময় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নগরবাসীর ভোট দেয়ার জন্য আমরা আগেও আহ্বান জানিয়েছি। এখনো আহ্বান জানাব। ভোটাররা সব ধরনের ভয় উপেক্ষা করে তাদের ভোট দেবেন।

পাশাপাশি আমরা এখন আহ্বান জানাব, ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির পোলিং এজেন্টরা কেউ ভোটকেন্দ্র থেকে সরে আসবেন না। ভোট বর্জনের কোনো প্রশ্নই আসে না বলেও সাংবাদিকদের জানান রিজভী।

এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ইসিকে বলব, সব পোলিং এজেন্টের নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন ও ভোট গণনার সময় পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ভোটকেন্দ্রের সব পোলিং এজেন্টের দৃষ্টিসীমার মধ্যে অতিরিক্ত খালি ও ব্যালট পেপার ভর্তি বাক্সগুলো রাখা। এরপর ভোট গণনার সময় ব্যালট পেপারভর্তি বাক্সগুলো উপযুক্ত করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেবে নির্বাচন কমিশন, এটা আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বলেন রিজভী।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল কাউয়ূম, আবদুস সালাম, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, সেলিম ভূঁইয়া, আসাদুল করিম শাহীন, মুনির হোসেন, আবদুল আউয়াল খান, হারুন অর রশিদ, খন্দকার আবু আশফাক প্রমুখ।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!