• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ পর্যায়ে দেশের প্রথম ওষুধ শিল্প পার্কের কাজ


মঈনউদ্দিন সুমন, মুন্সীগঞ্জ থেকে মার্চ ১৬, ২০১৮, ০৫:১৮ পিএম
শেষ পর্যায়ে দেশের প্রথম ওষুধ শিল্প পার্কের কাজ

মুন্সীগঞ্জ : দেশের ওষুধের চাহিদা মিটবে দেশীয় তৈরি কারখানাতেই। দেশের প্রথম ওষুধ শিল্প পার্ক হচ্ছে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায়। ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে ২০০৮ সালে বাংলাদেশ সরকার এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের তৈরি ওষুধ সুনাম অর্জন করেছে বিশ্বব্যাপী। তবে ওষুধের কাঁচামাল বাহিরের দেশগুলো থেকে আমদানি করার ফলে দেশে তৈরি ওষুধের দাম তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়। ওষুধ শিল্প পার্ক বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের বাজারে দাম কমবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে একদিকে যেমন দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসবে অন্যদিকে জেলার অর্থনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রাখবে অগ্রসর ভূমিকা।

ঢাকা থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরত্বে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে উপজেলার বাউশিয়া মৌজায় ২০০ একর জমির ওপর হচ্ছে প্রকল্পটি। ২০১০ সালে অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) শিল্প পার্ক নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি আশার আলো না দেখায় কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে জুন ২০২০ করা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ওষুধ শিল্প পার্ক সূত্রে জানা যায়, ২৭টি প্রতিষ্ঠানকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, আগামী দুই বছরের মধ্যে শুরু হবে এর উৎপাদন। নানা জটিলতায় এর কাজ পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানে আশার আলো দেখছে প্রকল্পটি। প্রকল্প এলাকায় বেড়েছে কাজের গতি। বর্তমানে দেশের ওষুধ শিল্প খাতে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার ওষুধ উৎপাদন হচ্ছে। এই উৎপাদনে অভ্যন্তরীণ চাহিদার শতকরা ৯৭ ভাগ মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

এপিআই শিল্প পার্ক স্থাপন করা হলে ওষুধ শিল্পের কাঁচামালের দেশীয় চাহিদার শতকরা ৭০ ভাগ যোগান দেওয়া সম্ভব হবে। শিল্প মন্ত্রণালয়য়ের অধীনে ২শ একর জমিতে গড়ে উঠা এই প্রকল্পে ৪২টি শিল্প ইউনিটের অনুকূলে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। জমির প্রতি শতাংশের মূল্য ধরা হয় ৩ লাখ ৯ হাজার টাকা। ৪২টি প্লটের মধ্যে ১০ বিঘা আয়তনের প্লট হবে ৩৮টি এবং ৮ বিঘা আয়তনের প্লট হবে ৪টি।
 
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয় এপিআই শিল্প পার্কটির। সভায় তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১৩ কোটি টাকা। নির্ধারিত সময়ে কাজ পিছিয়ে থাকায় ও নানা জটিলতার কারণে বেড়েছে প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ। সর্বশেষ এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩৩১ কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ২৫১ কোটি টাকা ও বাকি ৮০ কোটি টাকা ওষুধ শিল্প মালিক সমিতি সিইটিপি নির্মাণে দেওয়ার কথা রয়েছে।

শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করে পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে ও প্রকল্পের ব্যয় আরো ৫০ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন এখন প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করছে। ধারবাহিক কার্যক্রম শেষে প্রকল্পটি আবারও পাঠানো হবে একনেক সভায়।

এল আর গ্লোবালের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে ওষুধ শিল্পের আকার ছিল ১৭০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে শুধু বাংলাদেশে ওষুধ শিল্পের বাজার ছিল ১৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার। এপিআই শিল্প পার্ক থেকে ৩৩৫টি কাঁচামাল উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশ এখন ১৩৩টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করে এবং ২০১৬ বছর ওষুধ রপ্তানি করে ১০ কোটি ডলার আয় করে বাংলাদেশ।

বিসিক সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় সিইটিপি ও ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণ করবে ওষুধ শিল্প মালিক সমিতি। সে জন্য ৮০ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। যদিও এখনো ইটিপি নির্মাণের কাজই শুরু হয়নি। এটিকে এই প্রকল্পের অন্যতম দুর্বল জায়গা বলে আইএমইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক আবদুল বাছেত বলেন, প্রকল্পের সরকারি কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ। গ্যাস সংযোগ ও প্রকল্প এলাকা থেকে নদী পর্যন্ত ড্রেনসহ রাস্তার কাজ বাকি আছে। এছাড়া কাজের অগ্রগতি বাড়াতে চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি এই বিষয়ে বরাদ্দপ্রাপ্ত কোম্পানিগুলোর সাথে মতবিনিময় সভা হয়েছে। প্রকল্প ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধি পায়নি। ইটিপির জন্য কোম্পানিগুলোই কাজ করছে বলে জানান তিনি। কারখানা উৎপাদনে আসবে ২০২০ সালে ও তত দিন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ চলবে। ২৭টি শিল্প-প্রতিষ্ঠানকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং তারা ১০ বছরে ১০ কিস্তিতে টাকা জমা দিতে পারবে। প্রতি একরে জমির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে দুই কোটি ৯০ লাখ টাকা। বর্তমানে ওষুধের কাঁচামালের ৯০ শতাংশ ভারত, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে বাংলাদেশ। ১৫০-২০০ ধরনের কাঁচামাল আমদানি করা হয়। যারা প্লট পেয়েছেন তারা তাদের প্ল্যান জমা দিয়েছেন। এক মাসের মধ্যে তাদেরকে অনুমোদন দিতে হবে।

বিসিক চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান মোহাম্মদ ইফতিখার জানান, ইতিমধ্যে ২৭টি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে প্লট বরাদ্দ, আগামী দুই বছরের মধ্যে শুরু হবে উৎপাদন। সিইটিপিট নির্মাণ, গ্যাস সংযোগের মত কাজগুলো অচিরের শেষ করা হবে বলে আশা তার।

বরাদ্দপ্রাপ্ত ওষুধ শিল্প পার্কের একমি ল্যাবরেটরিজের কর্ণধার মিজানুর রহমান সিনহা জানান, মেডক্যাল যন্ত্রাংশসমূহ খুবই ব্যয়বহুল। এসব আমদানি করে স্থাপন করতে সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এছাড়া ইটিপি স্থাপনের জন্য ব্যয়ভার কোম্পানিগুলো নিয়েছেন। ৪১টি প্লট বরাদ্দ দিয়েছে সরকার, এর কার্যক্রম চলছে। এসব শেষ হলে প্রাইভেট পর্যায়ে আমাদের যে সকল কাজ রয়েছে তা শুরু করব।

মুন্সীগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিষ্ট আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ সালে তাদের অবস্থানগত ছাড়পত্র দেওয়া হয়। ইটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক করে তাদের সঙ্গে কথাও হয়েছে। আমরা সরেজমিনে এই প্রজেক্টটি পরিদর্শন করে যাচাই-বাছাই করছি।   

এদিকে, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বিসিক যে ২৭টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ৪১টি প্লট বরাদ্দ দিয়েছে, সেটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কেউ কেউ তিনটি করে প্লট পেয়েছে। কেউ পেয়েছে দুটি করে। বাকিদের একটি করে প্লট পেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। তিনটি প্লট পাওয়া সৌভাগ্যবান হলো দুটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ও অপসোনিন ফার্মা। স্কয়ার ফার্মা পেয়েছে প্রায় ১০ একর জমি। আর অপসোনিন পেয়েছে ৭ একর জমি। দুটি করে প্লট পেয়েছে জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালস, দি একমি ল্যাবরেটরিজ, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস, গ্লোব ড্রাগস, এরিস্টোফার্মা, হেলথকেয়ার কেমিক্যালস ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। ইবনে সিনা, ডেলটা ফার্মা, ফার্মাটেকসহ অন্যরা পেয়েছে একটি করে প্লট।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!