• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শ্বশুরের নোংরামি, সুযোগ পেলেই ফাঁকা বাড়িতে...


নিউজ ডেস্ক আগস্ট ১১, ২০১৮, ০৮:২২ পিএম
শ্বশুরের নোংরামি, সুযোগ পেলেই ফাঁকা বাড়িতে...

ঢাকা : ফাঁকা বাড়িতে সুযোগ পেলেই কুপ্রস্তাব দিত শ্বশুর। এমনকি আড়াই বছরের নাতনির সামনেই জোর করে বউমার সঙ্গে শারীরীক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করত শ্বশুর। সেই ঘটনার কথা বাড়িতে জানালে, স্ত্রীকে রক্ষা করা তো দূরের কথা, উল্টে স্বামী-শাশুড়ি মিলেও গৃহবধূর উপর শুরু হওয়া শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারে শেষপর্যন্ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল সুপ্রিয়া ঘরামি নামে ওই গৃহবধূ।

সম্প্রতি মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী ও শ্বশুরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সোনারপুরের গঙ্গাজোয়ারা এলাকার বাসিন্দা ছিল সুপ্রিয়া। স্কুলে পড়াকালীনই গোবিন্দপুরের লাঙলবেড়িয়ার বাসিন্দা সুজন মণ্ডলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সুপ্রিয়ার। পেশায় রাজমিস্ত্রি সুজনের সঙ্গে বছর চারেক ধরে প্রেমপর্ব চলে সুপ্রিয়ার। বাড়ির মত ছিল না। কিন্তু তারপরেও বাড়ির অমতে একপ্রকার জোর করেই সুজনকে বিয়ে করে সুপ্রিয়া। বিয়ের পরে তাঁদের একটি মেয়েও হয়।

কিন্তু অভিযোগ বিয়ের পরই সুজনের সঙ্গে সুখের ঘর বাঁধার যে স্বপ্নটা সুপ্রিয়া দেখেছিল, সেই ছবিটা বদলে যেতে থাকে। যৌতুকের দাবিতে শুরু হয় অত্যাচার। বাপের বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ দিতে থাকে সুজন। পাশাপাশি আরও অভিযোগ, শ্বশুর তপন মণ্ডলের কুনজর পড়েছিল সুপ্রিয়ার উপর। ফাঁকা বাড়িতে সুযোগ পেলেই সুপ্রিয়াকে কু... প্রস্তাব দিতেন শ্বশুর। এমনকি নাতনির সামনেই জোর করে সুপ্রিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ারও চেষ্টা করতেন তপন।

অভিযোগ, বাড়িতে স্বামী সুজনকে একথা জানিয়েছিল সুপ্রিয়া। কিন্তু স্ত্রীর কথা সেভাবে কানেই তোলেনি সুজন। বাপের বাড়িতেও শ্বশুরের এ কাণ্ডের কথা জানায় সু্প্রিয়া। এরপর দুবাড়ির আলোচনার মাধ্যমে সাময়িকভাবে সমস্যা মেটে। কিন্তু কোনও স্থায়ী সমাধান হয়নি। বউমার উপর অত্যাচার চালিয়ে যেতে থাকেন তপন। সুযোগ পেলেই সুপ্রিয়াকে উত্যক্ত করতে থাকে সে।

বুধবার বাড়িতে কেউ ছিল না। আড়াই বছরের মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে একাই ছিল সুপ্রিয়া। অভিযোগ, সেই সুযোগে ফের সুপ্রিয়ার সঙ্গে অশালীন আচরণ করতে শুরু করেন তপন। নিজেকে বাঁচাতে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয় সুপ্রিয়া। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। জল খাওয়ার অছিলায় জোর করে সুপ্রিয়ার ঘরে ঢুকে পড়েন তপন। তারপরই মত্ত অবস্থায় পুত্রবধূর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। দুজনের মধ্যে চলে ধস্তাধস্তি।

ইতিমধ্যে স্বামী সুজন বাড়ি ফিরলে তাকে ঘটনার কথা জানায় সুপ্রিয়া। ঘটনার কথা এবার বাইরে সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয় সে। অভিযোগ, এরপরই স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়ি তিনজনে মিলে সুপ্রিয়ার উপর অত্যাচার শুরু করে। শুরু হয় মারধর। মারধরের ফলেই মৃত্যুর হয় সুপ্রিয়ার।

সুপ্রিয়ার বাপের বাড়ির লোকেরা জানিয়েছে, বুধবার দুপুরে হঠাত্ই সুজন তাদের ফোন করে সুপ্রিয়ার অসুস্থতার খবর জানান। খবর পেয়ে ছুটে গিয়ে তাঁরা দেখেন, শ্বশুরবাড়ির বারান্দায় কাপড় দিয়ে ঢাকা অবস্থায় শোওয়ানো হয়েছে সুপ্রিয়ার দেহ। সুপ্রিয়ার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁদের কাছে দাবি করেন, গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে সুপ্রিয়া। কিন্তু সুপ্রিয়ার গলায় ফাঁসের কোনও চিহ্ন না দেখে সন্দেহ হয় তাঁদের। তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করতেই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে সুজন-তপনরা।

এরপরই স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়িকে আটকে রেখে পুলিসে খবর দেয় সুপ্রিয়ার পরিবার। এই ঘটনায় রাতেই সোনারপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন সুপ্রিয়ার বাবা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই সুপ্রিয়ার স্বামী সুজন মণ্ডল ও শ্বশুর তপন মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, সুপ্রিয়ার দেহে একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!