• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রমের হাটে মানুষ কেনাবেচা


সৌধ ইসলাম মে ১, ২০১৭, ১০:৫১ এএম
শ্রমের হাটে মানুষ কেনাবেচা

ক্রেতার অপেক্ষায়

দাস কেনাবেচার কথা তো সেই আদিকালের। তখন কি আর সভ্যতা ছিল? জীবনের মানে ছিল শুধুই বেঁচে থাকা। আর আজ চারদিকে ঝলমলে সভ্যতা। উপচে পড়া কত সমৃদ্ধি, কত স্বপ্ন-সুখ। মানুষ হয়ে গেছে কত গুরুত্বপূর্ণ, কত মূল্যবান!

না, মনে হয় ভুল বললাম। চোখে যা দেখছি সেটাই কি সত্য? মনে হয় না। মানুষ তো আজ পণ্য। আজ তো মানুষকে বলা হয় জনশক্তি। যা রপ্তানিযোগ্য। মানুষ নামের ‘মেশিনকে’ আমরা রপ্তানি করি। একেবারে দল ধরে রপ্তানি। কত টাকা আসে রেমিটেন্স হিসেবে, তার শেষ নেই।

বিশ্বের কত যে দেশ আমাদের কিনে নেয়ার জন্য উৎসুক হয়ে থাকে। কত অর্ডার আসে সরকারের কাছে। উমুক দেশে ওতো লাখ, তো তুমুক দেশে ওতো লাখ। সরকার বগল বাজায়। রেমিটেন্সের আশায় বাজেট বাড়ে। মানুষরূপের মেশিনওগুলোও লাইনধরে। নিজেদের বিক্রি করতে ছুটোছুটি করতে থাকে। মানুষ রপ্তানি হয়ে যায়।

মধ্যপ্রাচ্যের দোষই বা এককভাবে দেই কেন, আমদানিপণ্য যেমন খুশি তেমন করেই তো ব্যবহার করে সবাই। আমদানি করা ‘মানুষ’রা কি আর জীবন্ত কিছু! ওরা তো ‘মেশিন’। মেশিনের ওপর কি আর দয়ামায়া থাকে কারো। আর নারী হলে তো কথাই নেই। যেন নিজের ব্যবহারের টিস্যু। ব্যবহার করে দুমড়ে মুচড়ে ফেলে দিলাম।

আমরা যে বিক্রিযোগ্য, আমরা যে পণ্য, ক্রেতারা তো মালিক। যা খুশি তাই করতে পারে। মারতে পারে, নির্যাতন করতে পারে, ভোগ করতে পারে। আমাদের কিছু বলার নেই। কারণ আমরা তো বিক্রি করা পণ্য। আমরা মেশিন। শুধু কি বিদেশেই আমরা পণ্য? দেশের ভেতরেও তো পণ্য। কাকডাকা ভোর থেকেই বসে থাকি নিজেদের বিক্রির আশায়। সামনে কোদাল, খুন্তি, ডালাসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি। চোখে-মুখে শূন্যতা। এই বুঝি ডাক পড়বে। ক্রেতা আসবে। আমাদের দরদাম ঠিক করবে। দরকষাকষি করবে।

এক পর্যায়ে হাঁকডাক থেমে যাবে। ক্রেতার পেছনে পেছনে ‘কেনাগোলাম’ হয়ে যেতে থাকবো। এরপর আমাদের নিয়ে যাওয়া হবে কলে কারখানায় ক্ষেতে কিংবা কোনো নির্মাণযজ্ঞে। পশু কিংবা গৃহপালিত প্রাণীদের মতো কাজে জুড়ে দেয়া হবে।

আলো ঝলমলে সভ্যতার ভেতরে রাশি রাশি অন্ধকার এখনও। সেই অন্ধকারের জীবন এভাবে ঘুরছে। চলে যান না আলোকিত রাজধানীর নিউমার্কেট, মিরপুর, মোহাম্মদপুরের শেকেরটেক, আদাবর, ভাটারা, গাবতলী, আমিনবাজারে। দেখবেন কত জাঁকজমকভাবেই না বসেছে শ্রমের হাট। দেদারছে বিক্রি হচ্ছে মানুষনামের পণ্য।

শ্রমের হাটে তরতাজা আর শক্তিমানদের কদর বেশি। ক্রেতারা দেখে শুনে তরতাজা আর বলিষ্ট দেহের অধিকারীদের বেশি দাম দিয়ে কেনে। আর বয়স্কদের দাম হতাশাজনক।তাদের চোখের সামনে থেকে কিনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অল্পবয়সী তরতাজাদের। আর গালে হাত দিয়ে বসে আছে বুড়োরা। যাদের বাড়িতে অনেকগুলো ক্ষুধার্ত মুখ অপেক্ষা করছে তার বিক্রির শ্রমে ক্ষুধা মেটাতে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কিংবা রাজধানী শুধু নয়, দেশজুড়ে আধুনিক মোড়কে এমন দাসপ্রথার জীবন আমাদের। সভ্যতার আলো যখন একদিকে বেশি আলোকিত করে, ঠিক একইভাবে অন্যদিকে করে অন্ধকার। কারো অন্ধকার নিয়েই কেউ আলোকিত হয়। আর সেই আলোর কৃতিত্ব নিয়ে আমরা বড়াই করি সভ্যতার, অগ্রগতির, সমৃদ্ধির।

সোনালীনিউজ/এন

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!